তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বসিরহাট: বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দরবন ঘুরতে গিয়ে মাঝ নদী থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও এক যুবক। শুক্রবার রাতে নদীপথে সুন্দরবনে ঢুকেছিল ৩০ জন পর্যটকের ওই দলটি। ঝিঙেখালি জঙ্গলের কাছে হেমনগর অঞ্চলে ভুটভুটি নৌকায় নোঙর করে চলছিল উদ্দাম খাওয়া-দাওয়া। তার মধ্যে হঠাৎ জানা যায়, অসীম মণ্ডল ওরফে বিকি নামে ওই যুবক নৌকায় নেই। কিন্তু কীভাবে তিনি নিখোঁজ হলেন, তা জানেন না সঙ্গীরা। কেউ বলছেন, জলে পড়ে গিয়েছে, কেউ বলছে বাঘে নিয়ে গিয়েছে। কারও আশঙ্কা কুমির নিয়ে যেতে পারে তাঁকে। রাতভর নদীতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। শনিবার সকাল থেকেও জোরকদমে চলছে অভিযান। তবে খোঁজ মেলেনি বিকির। বিভীষিকাময় সুন্দরবনের সঙ্গে জুড়ে গেল আরও একটি রহস্য।
সুন্দরবনের জঙ্গলে প্রতিবছরই কেউ না কেউ নিখোঁজ হয়। মধূ আনতে গিয়ে, অথবা মাছ ধরতে গিয়ে ঘরে না ফেরার কাহিনি সুন্দরবনে অহরহ শোনা যায়। এবার বছরের শুরুতেই সেই তালিকায় জুড়ে গেল পর্যটকের নাম। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ ওই যুবকের বাড়ি দক্ষিণেশ্বর এলাকায়। শুক্রবার সন্দেশখালির ধামাখালি থেকে একটি ভুটভুটি নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে রওনা দিয়েছিল তাঁদের দলটি। ধামাখালি থেকে ওই ভুটভুটি নৌকয় চেপে ঝিঙেখালি জঙ্গলের দিকে আসেন তাঁরা। রাতে উত্তর ২৪ পরগনার প্রান্তিক এলাকা হেমনগরে একটি গেস্ট হাউসে থাকার থাকার কথা ছিল তাঁদের। স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গেস্ট হাউসে যাওয়ার আগে সরদারপাড়া ঘাটের কাঠে রায়মঙ্গল নদীর মাঝে নোঙর করে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন তাঁরা। চলছিল মদ্যপানও। রাত এগারোটা নাগাদ বিকির বন্ধুরা জানতে পারেন, তিনি নৌকায় নেই। এর পরই হুলস্থুল পড়ে যায়। নদীতে টর্চ মেরে খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। খবর দেওয়া হয় হেমনগর থানাতেও। হেমনগর থানার পুলিশও বিকির তল্লাশি শুরু করে। নৌকয় উপস্থিত বাকিরা কেউ জানেন না কখন উধাও হয়েছে বিকি।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, যে নৌকাটিতে তাঁরা ছিলেন সেখানে একসঙ্গে থাকলে কার্যত ঠাসাঠাসি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বিকি যদি নৌকা থেকে পডে় গিয়েও থাকেন তা হলে সেটি সবার নজর এড়িয়ে গেল কীভাবে? যদি কোনও জন্তু তাকে নিয়ে গিয়ে থাকে সেটাও বা কেউ জানতে পারলেন না কেন? প্রশ্ন উঠছে, মদের নেশায় কারও সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ার জেরে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি তো? তদন্তকারীরা সব দিক খতিয়ে দেখছেন। আপাতাত বিকির দেহর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, রায়মঙ্গল নদীতে প্রবল স্রোত। তাই দেহ পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.