২০২০-র শুরুটা অন্যান্য বছরের মতো হলেও হঠাৎই পালটে যায় সমস্ত কিছু। কারণ করোনা ভাইরাস (Corona Virus)। এর জেরে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ব্য়বসা লাটে উঠেছে। কিন্তু বছরের বেশ খানিকটা সময় লকডাউন থাকলেও ব্যবসায় ভাটা পড়েনি কিছু কোম্পানির। বরং এই আবহেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে দেশ-বিদেশের একাধিক সংস্থা। করোনা কালে কাদের লক্ষ্মীলাভ হল, বছরশেষে তুলে ধরল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
• মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani) : ভারতীয় পুঁজিপতি যাঁরা কিনা করোনা আবহেও আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উপরে থাকবে মুকেশ আম্বানির নাম। করোনা আবহেই রিলায়েন্সে (Reliance) বিনিয়োগ করেছে Google, Facebook–সহ একাধিক সংস্থা। বিনিয়োগের পরিমাণও কয়েক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ডিজিটাল ব্যবসাতেও লাভের মুখ দেখেছে রিলায়েন্স। এর ফলে হু হু করে বেড়েছে মুকেশ আম্বানির সম্পত্তি। চলতি বছরে তাঁর সম্পত্তি বেড়েছে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

• গৌতম আদানি (Goutam Adani): রিলায়েন্স কর্ণধারের পরেই করোনা আবহে লাভবান হওয়া শিল্পপতিদের তালিকায় থাকবে আদানি গোষ্ঠীর (Adani Group) গৌতম আদানির নাম। গত এক বছরে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তির পাশাপাশি বেড়েছে ব্যবসাও। গত এক বছরে গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ১৯.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁর সংস্থা ব্যবসা করেছে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।

• সাইরাস পুনাওয়ালা (Cyrus Poonawalla): ভারতে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে পুণের সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট (Serum Institute)। সংস্থার প্রধান সাইরাস পুনাওয়ালার ব্যক্তিগত সম্পত্তিও কিন্তু চলতি বছরে অনেকটাই বেড়েছে। দ্রুত সম্পত্তি বৃদ্ধির নিরিখে তাঁর নাম বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। চলতি বছরেই বিশ্বে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁর নাম ৮৬ থেকে ৫৭ নম্বর স্থানে এসেছে।

• বিসিসিআই (BCCI): বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড হল বিসিসিআই। IPL আয়োজন করেও অনেকটাই লক্ষ্মীলাভ করে থাকে ভারতীয় বোর্ড। তবে করোনা আবহে চলতি বছরের এপ্রিলে তা আয়োজন করা যায়নি। পিছতে পিছতে তা শুরু হয় ১৯ সেপ্টেম্বর। তাও আবার দুবাইয়ে (Dubai) দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে আইপিএল আয়োজনে প্রচুর অর্থও খরচ করে বিসিসিআই। তা সত্ত্বেও টুর্নামেন্ট থেকে লাভই হয়েছে ভারতীয় বোর্ডের। সৌজন্য আইপিএলের ডিজিটাল রাইটস এবং টিভি সত্ত্ব। এখান থেকেই বিপুল অর্থ আয় করে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড।

• অন্যান্যরা: আম্বানি, আদানি, পুনাওয়ালারা ছাড়াও টাটা গোষ্ঠী কিংবা বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্ণধাররাও করোনা আবহে আর্থিকদিক থেকে কিন্তু লাভবান হয়েছেন। বিশেষ করে যেই সংস্থাগুলো করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং ওষুধ প্রস্তুত করছে। যেমন– সান ফার্মার দিলীপ সাঙ্ঘভি, ডঃ রেড্ডিস ল্যাবরেটরিসের রেড্ডি পরিবার, অরবিন্দ ফার্মার পিভি রামপ্রসাদ রেড্ডি, ডিভিস ল্যাবরেটরিসের মুরলি কে ডিভি, সিপলার ওয়াইকে হামিদ প্রমুখরা। এঁদের সংস্থার শেয়ার মার্কেট ভ্যালু যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে ব্যক্তিগত সম্পদ।
বিদেশে কোন কোন পুঁজিপতির লক্ষ্মীলাভ হয়েছে?
• জেফ বাজোস (Jeff Bezos): ভারতে যেমন মুকেশ আম্বানি। মার্কিন মুলুকে তেমনই জেফ বাজোস। মার্কিন সংস্থা আমাজনের কর্ণধার বাজোসের ব্যক্তিগত সম্পত্তি যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে তাঁর সংস্থার শেয়ার ভ্যালু। মার্চ মাস থেকে এখনও পর্যন্ত আমাজনের (Amazon) শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯০ শতাংশ। আর বাজোসের সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৬৬ শতাংশ। চলতি বছরে ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে আমাজন কর্ণধারের সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।

• ইলন মাস্ক (Elon Musk): মার্কিন মুলুকের টেসলা (Tesla) কোম্পানির কর্ণধার ইলন মাস্কের সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে জেফ বাজোসের থেকেও অনেক বেশি। মহাকাশ গবেষণা, গাড়ি প্রস্তুত থেকে শুরু করে একাধিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত টেসলাও আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই লাভবান হয়েছে। ইলন মাস্কের সম্পত্তি মার্চ মাসে ছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখান থেকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এর ফলে ৩৫ তম স্থান থেকে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় দু’নম্বরে উঠে এসেছেন।

• বার্নাড আর্নল্ট (Bernard Arnault): ইউরোপের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন এই বার্নাড আর্নল্ট। বিশ্বে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁর এবং আর্নল্ট পরিবারের স্থান রয়েছে তিন নম্বরে। করোনা আবহে তাঁর সম্পত্তি কিন্তু কমেনি। উলটে দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

• বিল গেটস (Bill Gates): মাইক্রোসফটের (Microsoft) সহ–প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সম্পত্তি বাকিদের থেকে তুলনায় অনেকটাই কম বেড়েছে। মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি বেড়েছে গেটসের সম্পত্তি। বর্তমানে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

• মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg): করোনা আবহে বেশিরভাগ মানুষই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ–সহ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্লার্টফর্মের ব্যবহারও প্রচুর বেড়ে গিয়েছিল। আর এই পরিস্থিতিতে লাভবান হয়েছেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গও। তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ৮০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে যার পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

• অন্যান্য: বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিপতিদের অনেকেরই সম্পত্তি কিন্তু বেড়েছে। যেমন– ওরাকেলের (Oracle) ল্যারি এলিসন, গুগল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ, সের্জেই বিন, ইনডিটেক্সের প্রতিষ্ঠাতা আমানসিও ওরটেগা, জুম (Zoom) সিইও এরিক ইউয়ান, স্কাইপের (Skype) স্টিভ বালমারের সম্পত্তিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এছাড়া বিশ্বের যে সমস্ত সংস্থা করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং ওষুধ প্রস্তুত করছে তাঁদের সম্পত্তিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।