শুভময় মণ্ডল: পরীক্ষার্থীরাই এবার পরীক্ষক। সারাবছর মন দিয়ে পড়াশোনা করে দুর্গাপুজোর চারদিন কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হন তাঁরা। পরীক্ষার পালা শেষ। ফলাফলও বেরিয়েছে। এবার কালীপুজোতে তাঁরাই পরীক্ষকের আসনে। ব্যাপারটা কী? খোলসা করে বলা যাক। শহরের দুর্গাপুজোর কর্তারা এবার কালীপুজোয় বিচারক। দুর্গাপুজোয় যেমন কলকাতার রমরমা, তেমনই কালীপুজো মানেই উত্তর শহরতলির বারাসত-মধ্যমগ্রামে নজর থাকে। তাই উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং বারাসত-মধ্যমগ্রাম ও রাজারহাটের প্রায় ২০০টি বারোয়ারি কালীপুজোর শ্রেষ্ঠত্বের বিচার বেরোবেন শহরের দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তারা। উত্তরের টালা বারোয়ারি থেকে শুরু করে দক্ষিণের বেহালা ফ্রেন্ডস ক্লাবের উদ্যোক্তারাই বিচারক। জহুরির চোখ দিয়ে চিনে নেবেন শ্যামাপুজোর জহরদের। ‘দেবীপ্রণাম’ ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে সেই বিচারকমণ্ডলী বেছে নেবে সেরা ১২টি কালীপুজো। গতবছর ‘মহামুকুট মহাসম্মান’ নামে এই প্রতিযোগিতা শুরু হলেও এবছর তার ব্যাপ্তি হয়েছে। ধারে ও ভারে বৃদ্ধি হয়েছে প্রতিযোগিতার।
সারাবছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে পুজোকে সাজিয়ে তোলেন শিল্পী ও উদ্যোক্তারা। তারপর বিচারকদের সামনে সেরার হওয়ার লড়াইয়ে পরীক্ষা দেয় পুজোগুলি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় কর্তাদের মধ্যেও। তবে সে শুধুই পুজোর ক’দিন। বছরের বাকি দিনগুলোতে তাঁরা একজোট। কিন্তু কালীপুজোয় সেভাবে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। তাই দুর্গাপুজোর কর্তারাই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোয় পরিবেশ থেকে নিরাপত্তা, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ভাবনা ও পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান তাঁরা। বিচারকদের তালিকায় রয়েছেন শহরের হেভিওয়েট ১৫টি বারোয়ারি পুজোর অন্যতম কর্তাব্যক্তিরা। টালা বারোয়ারির সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে হাতিবাগান সর্বজনীনের শাশ্বত বসু, সন্তোষপুর লেকপল্লির সোমনাথ দাস, সমাজসেবী সংঘের অরিজিৎ মৈত্র, বেহালা ফ্রেন্ডসের ভাস্কর সাহা, কাশী বোস লেন সর্বজনীনের সোমেন দত্ত, ভবানীপুর অবসরের শ্যামল নাগ দাস-সহ আরও অনেকে এবার বিচারক হিসাবে মূল্যায়ণ করবেন কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ, বারাসত-মধ্যমগ্রাম ও রাজারহাটের মোট ২০০টি কালীপুজোর।
সন্তোষপুর লেকপল্লির সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ দাসের কথায়, ‘দুর্গাপুজোয় আমরা উদ্যোক্তারা যেভাবে কাজ করি। থিম ভাবনা ছাড়াও পরিবেশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, নিরাপত্তার বিষয়গুলি মাথায় রেখে পুজো করি সেই অভিজ্ঞতা কালীপুজোর আয়োজকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। কালীপুজো বারোয়ারিগুলিও সুষ্ঠ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করুক। পুজোগুলির শ্রীবৃদ্ধি হোক সেই আশাই রাখি।’ হাতিবাগান সর্বজনীনের যুগ্ম সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেছেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে একটি সাধু উদ্যোগ। আমরা যেভাবে আনন্দ করে পুজো করি সেই অভিজ্ঞতা কালীপুজোর কর্তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার এটা একটা দারুণ প্রয়াস। সেরা প্রতিমা, সেরা মণ্ডপ, সেরা থিম ছাড়াও সুরক্ষা ও নিয়মবিধি দেখেই আমরা সেরা বেছে নেব।’ গতবছর বিচারকরা দেখতে পান, বারাসত-মধ্যমগ্রামকে টক্কর দেওয়ার মতো ভাল ভাল কালীপুজো হয়েছে বেহালা ও কালীঘাট অঞ্চলে। তবে প্রচারের পাদপ্রদীপে তাদের নিয়ে আসতে গেলে এই ধরনের প্রতিযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। এখন দেখার পুজোকর্তাদের চোখে কোন কালীপুজোর শ্রেষ্ঠত্বে উত্তরণ হয়।