২০৩০-এ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক মরক্কো গণ-হারে পথকুকুর নিধন শুরু করেছে। লক্ষ্য, ৩০ লক্ষ কুকুর মেরে ফেলা!
রাস্তায় বেরিয়ে পথকুকুরের খপ্পরে পড়েনি, এমন মানুষ বোধহয় ভূ-ভারতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সম্ভবত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পথকুকুর রয়েছে এই ভারতেই। এবং তাদের জন্য নানা বিপত্তিও সময়ে সময়ে ঘটে থাকে। সাম্প্রতিক অতীতে জলন্ধরে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে পথকুকুরদের হামলার শিকার হন এক মহিলা। তঁাকে টেনে নিয়ে যায় কুকুরের দল। আবার হোশিয়ারপুরে পথকুকুরের আক্রমণে দু’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছে দুই বাছুরও। তবে উল্টো ছবিও অমিল নয়। দোল-হোলির সময় নিরীহ পথকুকুরের গায়ে বিষাক্ত রং দেওয়া, দীপাবলিতে তাদের লেজে আতশবাজি বেঁধে জ্বালানো, গাড়ি চাপা দিয়ে, বিষ খাইয়ে বা খাবারে পেরেক মিশিয়ে খুন– এমন নৃশংসতার নজিরও নেহাত কম নেই। অসহায় পথকুকুরদের খাওয়ানোর অপরাধে সম্প্রতি সাংভিতে এক মহিলাকে মারধরও করা হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।
তবে সব নৃশংসতা বোধহয় ছাপিয়ে যেতে চলেছে মরক্কো। উত্তর আফ্রিকার দেশটি ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের সহ-আয়োজক। স্পেন ও পর্তুগালের সঙ্গে যৌথ দায়িত্বে। তার পঁাচ বছর আগে থেকেই গণ-হারে পথকুকুর নিধন শুরু করেছে তারা। উদ্দেশ্য, জনস্বার্থ। লক্ষ্য, ৩০ লক্ষ কুকুরকে মেরে ফেলা! এমন গণহারে কুকুরহত্যার নজির সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব দেখেছে বলে মনে পড়ে না।
রক্তের স্রোতে ভেসে যাওয়া, বিষের জেরে রাস্তায় ছটফট করা অজস্র কুকুরের ছবি, ভিডিও সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যম মারফত প্রকাশ্যে আসছে। কোথাও আবার শয়ে-শয়ে কুকুরকে টেনে তোলা হচ্ছে ট্রাকে। কোনও ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে চোখের আড়ালে তাদের হত্যা করা হবে। এমন সব দৃশ্য দেখে আ-বিশ্ব পশুপ্রেমীরা তো বটেই, আতঙ্কিত খোদ সে-দেশের শিশুরাও। স্তম্ভিত, ক্রুদ্ধ গোটা বিশ্ব। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি পেশ করে ফিফার কাছে চিঠি গিয়েছে। এছাড়াও ‘আইএডব্লিউপিসি’ (দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন কোয়ালিশন) মরক্কোকে এজাতীয় ন্যক্কারজনক কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, “মরক্কো’জ আগলি সিক্রেট” নামের একটি ক্যাম্পেনও তারা প্রকাশে্য এনেছে। মরক্কো কুকুরনিধন যজ্ঞে ছেদ টানবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ঠিকই, তবে বলা বাহুল্য সেই নৃশংস হত্যালীলা এখনও অব্যাহত।
আর এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। টুর্নামেন্ট শুরু হতে এখনও পাঁচ বছর বাকি। পথকুকুরের উপদ্রব যদি থাকেও, তাহলে তা মোকাবিলার অনেক উপায় আছে। টিকা দেওয়া, দত্তক নেওয়া, প্রজনন ক্ষমতা বন্ধ করা– অনেকভাবেই কুকুরের বংশবৃদ্ধি রোধ করা যায়। রাস্তায় মানুষের চলাফেরা নিরাপদ করা যায়। তা না করে এমন হৃদয়হীন গণহত্যা কেন! এর পর যদি পশুপ্রেমী ফুটবল ভক্তরা টুর্নামেন্ট বয়কটের ডাক দেয়, চাপের মুখে সরে যায় মূল স্পনসর ‘কাতার এয়ারওয়েজ’, ফিফা বা মরক্কো সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে তো? মাথাব্যথা হলে ওষুধ খেতে হয়, মাথা কেটে ফেলা কখনও সমাধান হতে পারে না। এই সহজ সত্যটা উদ্যোক্তারা নিশ্চয়ই জানেন। না কি মনুষ্যতর প্রাণী বলেই যা ইচ্ছা করার লাইসেন্স পাওয়া যায়? ‘জীবে প্রেম’ তামাদি ধারণা?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.