Advertisement
Advertisement

সুনাগরিক শুধু ট্যাক্স দেয় আর ফেসবুকে স্টেটাস!

আমি কি ঠিকঠাক প্রশ্ন করছি, সে প্রশ্ন করার যোগ্যতা আমার কতটুকু আছে, এ প্রশ্ন আমি আর নিজেকে কিছুতেই করব না৷

Am I a responsible citizen?
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 23, 2016 7:26 pm
  • Updated:September 23, 2016 9:57 pm

সরোজ দরবার:

‘ভেবে দেখো কাকে সহজে দিয়েছ ফাঁকি৷

Advertisement

 

Advertisement

কবরখানার পাশ দিয়ে যেতে যেতে

একবার ফিরে তাকাও নিজের দিকে

মনে করে দেখো কোন কথা ছিল বাকি৷’

(সমাধি, শঙ্খ ঘোষ)

আপনি কী করছেন মোদি? এতজন সৈন্য উরিতে প্রাণ হারালেন৷ ছাউনির পিছনে কাঁটাতার নাকি কাটা ছিল! তারপর বেশ খানিকটা নির্বিঘ্নে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা৷ অন্তর্ঘাত! এমনি বললাম…শবর দাশগুপ্ত স্টাইলে৷ আসলে কী হয়েছিল তা তো তদন্তকারীরা খুঁজে বের করবেন৷ তাহলে আমি কী করব? কেন স্টেটাস দেব সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ এই যে এতবড় একটা ঘটনা ঘটল, নিশ্চয়ই তো গলদ ছিল কোথাও৷ সে তো আর আমার চোখ এড়াতে পারে না৷ গলদের কথা ঘটনা ঘটামাত্রই আমি স্টেটাস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলাম৷ তা যে হেলাফেলার এমন ভাবার কোনও কারণ নেই৷ হুঁ হুঁ বাবা স্বয়ং প্রতিরক্ষামন্ত্রীও তো তা হরেদরে স্বীকার করে নিয়েছেন৷ যতক্ষণে করেছেন, তার আগেই আমি তা ধরে ফেলেছি৷ সত্যিই তো এত প্রতিরক্ষা নিয়ে ঢক্কানিনাদ, শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে এই সযত্নে গড়ে তোলা ইমেজ, কোথায় গেল সেসব! সুতরাং ‘ওয়েক আপ মোদি’ হ্যাশট্যাগ তৈরি করে আমি তো সোশ্যাল সুনামি জাগিয়ে তুলবই৷

তা এই যে গলদ ছিল, এ কথা আমি দু’দিন আগে ভাবিনি কেন? আসলে ভাবনার বিষয় তো আমারও কম নয়৷ এই যেমন ক্যাটরিনা কাইফের স্মিতা পাটিল পুরস্কার পাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সে ভাবনা তো আমাকেই ভাবতে হয়৷ আমি কে, তা অবিশ্যি ম্যাটার করে না৷ কিন্তু এতে যে স্মিতা পাটিলের অপমান হল, সে কথা তো আমাকে সোচ্চারে বলতেই হবে৷ হ্যাঁ, আমার ভাইটি-বোনটি-ছেলেটি-মেয়েটি যদি পাড়ার ক্লাব আয়োজিত নেতাজি পুরস্কার পায়, তাহলে সে কতটা নেতাজির নামাঙ্কিত পুরস্কারে যোগ্য, সে প্রশ্ন অবধারিত আমি ভুলে যাব৷ কিন্তু দেব মহানায়ক সম্মান পেলে আমি যদি প্রশ্ন না তুলি, খিল্লি করে দু’চারটে মেমে না বানাই, তবে যে সাংস্কৃতিক চোঁয়া ঢেঁকুর উঠবে, তা কমবে কোন জেলুসিলে! আমি সংস্কৃতির জন্য কী করেছি, সে প্রশ্ন অবশ্য প্রাসঙ্গিক নয়৷ সে ভাবনা আমি ভাবিও না৷ আরে ভাবনার কী অন্ত আছে? প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ‘আর্মপিট’ কতটা কামানো আর কতটা ফটোশপ, সে ভাবনা তো আমাকেই ভাবতে হয়৷

তাছাড়া আমার কী-ইবা করার আছে? মহেশ সাভানি নামে ভদ্রলোক অবশ্য একটি কাজ করেছেন৷ সুরাতের ব্যবসায়ী তিনি৷ ভদ্রলোক ঘোষণা করেছেন, উরি হামলায় নিহত জওয়ানদের সন্তান-সন্ততিদের পড়াশোনার ব্যয় তিনিই

উরিতে শহিদদের সন্তান-সন্ততিদের পড়াশোনার ব্যয়ভার নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মহেশ সাভানি৷
উরিতে শহিদদের সন্তান-সন্ততিদের পড়াশোনার ব্যয়ভার নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মহেশ সাভানি৷

বহন করবেন৷ এবার আমার কী করা উচিত? প্রথমে ওঁকে কুর্নিশ জানাব৷ তারপর ‘ইতি গজ’র ঢঙে নিশ্চিত বলব, কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি৷ এটুকু বলার অধিকার তো আমার আছেই, নাকি? আমি নিজে কোনও রাস্তার বাচ্চাকে একদিন একপিস পাউরুটিও দিইনি, কিন্তু তাই বলে মাদার টেরেজাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলব না! বলব না যে, দুঃস্থ বাচ্চাকে যে বিছানায় তিনি শুইয়েছিলেন সেটির চাদর তেমন কাচা ছিল না৷ তা কি আমি নিজে চোখে দেখেছি? তা না হোক, শাহজাহান বা আকবরকেও কি আমি দেখেছি? দেখিনি বলে তাদের কথা বিশ্বাস করিনি, এমন তো নয়৷ আর প্রশ্ন তো করতেই হবে৷ যতদূর জানি, সেই প্রশ্ন করার অধিকারেই নাকি আছে গণতান্ত্রিক সুস্থতার লক্ষ্মণ৷

তাহলে কী দাঁড়াল? আমি মোদি থেকে মনোহর পারিক্কর সকলকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাব৷ আমি প্রশ্ন করব, এই যে বলা হচ্ছে এত জঙ্গি নিকেশ হল, তাদের লাশগুলো সব গেল কোথায়? লাশ আনতে গেলেই নাকি গুলি চলছে৷ আমি কি তবে সন্দেহ করব না যে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়! করব৷ আমি চাইব যুদ্ধটা বাধুক৷ কিন্তু তা বলে সামনের পুজোয় আমার গুষ্টির জন্য নতুন জামাকাপড় কিনব না, নাকি রেস্তরাঁয় খেয়েদেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলব না? তুলবই তো৷ যুগে যুগে তুলে এসেছি৷ হ্যাঁ, হতে পারে ছোটখাটো নিয়ম ভেঙে আমার কার্যসিদ্ধি হলে আমি তাতে মাথা ঘামাই না৷ রাস্তায় পিচিক করে থুতু ফেলে দেব, তাতে কী এমন জনস্বাস্থ্যের অবনতি হবে! আর এতবড় দেশে ছোটখাটো এসব ব্যাপারে ইতরবিশেষ কিছু হওয়ারও নয়৷  এর মানে এই প্রমাণিত হয় না যে আমি দেশপ্রেমিক নই৷ আমার ফেসবুক থেকে হোয়্যাটসঅ্যাপ আমি তেরঙ্গায় রাঙিয়ে দিয়েছি৷ আমি স্বাধীনতা দিবসে পতাকা তুলেছি, জাতীয় সংগীত গেয়েছি আর বোঁদে খেয়ে চলেছি সেই ইস্কুলবেলা থেকে৷ দেশ বলতে আমি বুঝে এসেছি সকল দেশের সেরা৷ ধনরতন না থাকলেও যে দেশের ছায়ায় এসে আমার অঙ্গ জুড়াতে পারে, সে তো আমি ভাবিনি৷ তাহলে যে আমারই তোলা প্রশ্ন আমারই দিকে ফিরে আসে৷ তাহলে তো গাড়ি থেকে এক চুটকিতে ছুঁড়ে দেওয়া সিগারেটের শেষ টুকরো আমাকেই ছ্যাঁকা দিয়ে যায়৷ সুতরাং ও প্রসঙ্গ থাক৷ বরং দেশভক্তির নমুনা হিসেবে সবথেকে বড় কথা যা বলতে পারি তা হল, আমি শুধু স্ট্যাটাসই দিই না, ট্যাক্সও দিই৷ সুনাগরিক হওয়ার আর কী পরিচয় লাগে!

 

‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ নাটকে সব্যসাচী সেন বলেছিল, ঠিকঠাক উত্তর পেতে গেলে ঠিকঠাক একটা প্রশ্ন করতে হয়৷ সে  আমি জানি৷ কিন্তু আমি কি ঠিকঠাক প্রশ্ন করছি, সে প্রশ্ন করার যোগ্যতা আমার কতটুকু আছে, এ প্রশ্ন আমি আর নিজেকে কিছুতেই করব না৷ অতএব এসো উৎসব৷ কোটি টাকায় জ্বলে উঠুক কর্পোরেট স্পনসরড ঝাড়বাতি৷ আর আমি?  আমি বরং-

উৎসব -আসরে মনে মনে বলি:

‘আপাতত

যে ভাবে চলছে চলুক৷’ (দর্শন, শঙ্খ ঘোষ)

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ