প্রতীকী ছবি।
পথ দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য কেন্দ্রের সদ্য চালু করা ক্যাশলেস সুবিধা সাধুবাদ যোগ্য। পাশাপাশি তা বিদ্ধ অজস্র সমালোচনা ও প্রশ্নবাণেও।
ভারতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৬২ জন পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। অর্থাৎ, বছরে প্রায় ২ লক্ষ। শুধু ২০২২ সালেই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৭২ জনের। সড়ক দুর্ঘটনা ভারতে অনিচ্ছাকৃত আঘাতের কারণে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের মোট পথ দুর্ঘটনার ১১% এ দেশেই ঘটে। সুতরাং এ-কথা মেনে নিতে দ্বিধা থাকার কথা নয়, পথ দুর্ঘটনা কার্যত ভারতে ‘মহামারী’র আকার নিয়েছে। বিশেষত তরুণদের (১৫-২৯ বছর বয়সি) মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনাই মৃত্যুর একক বৃহত্তম কারণ।
প্রতি চারজন তরুণের মধ্যে একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তা। অতিরিক্ত গতি, হেলমেট ব্যবহার না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, সিগনাল না মানা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং ভাঙাচোরা, খানাখন্দ ভরা রাস্তা– দুর্ঘটনার বিবিধ কারণ রয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে বহুদিন ধরেই সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসিত হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালতের চাপে পথ দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য ক্যাশলেস সুবিধা চালু করল কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়লে আহত ব্যক্তি ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদহীন চিকিৎসার সুবিধা নিতে পারবেন। সরকারের আশা, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হার অনেক কমে যাবে দেশে।
দুর্ঘটনার পর প্রথম সাতদিনের মধ্যে আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হলে, তবেই মিলবে এই সুবিধা। যদি আহত ব্যক্তি এমন কোনও হাসপাতালে ভর্তি হন যা কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত নয় সেক্ষেত্রে ক্যাশলেস সুবিধা পাওয়ায় বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, অনলাইনের মাধ্যমে পথ দুর্ঘটনায় আহতরা চিকিৎসার সুবিধা নিতে আবেদন করতে পারবেন। সাধু উদ্যোগ। পথ দুর্ঘটনায় মৃতযুর হার কমাতে এমন উদ্যোগ জরুরি ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের পরেও কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রথমত, সরকারি পরিকাঠামোয় এমন চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত আছে কি না। যদি থাকে, তাহলে নামমাত্র খরচে চিকিৎসা হতে পারে। কিন্তু যদি না থাকে, এই ধরনের দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র দেড় লক্ষ টাকায় কতটুকু চিকিৎসা পরিষেবা সম্ভব?
যেখানে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, অস্ত্রোপচারের মতো পরিষেবা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে বহু বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার অর্থ বকেয়া। তারা টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে বা বিলম্ব ঘটলে নতুন প্রকল্পে কতটা উৎসাহী হবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, বেসরকারি হাসপাতালে ভুয়া পরিষেবা দিয়ে বর্ধিত বিল করার অজস্র অভিযোগ রয়েছে। নয়া প্রকল্প কি দুর্নীতির নতুন পথ খুলে দিল? এই সমস্ত প্রশ্নের সুষ্ঠু জবাব না-থাকলে শুধু প্রকল্প ঘোষণায় কাজের কাজ হবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.