Advertisement
Advertisement
করোনা

সারা দেশে কি সত্যিই কমছে করোনা সংক্রমণ? নিম্নমুখী সংখ্যার নেপথ্যে অন্য কারণ নেই তো?

পরিসংখ্যান খতিয়ে না দেখে বিষয়টা কিন্তু পরিষ্কার হবে না।

Corona pandemic: is decreasing number Covid cases a good news
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:August 18, 2020 2:34 pm
  • Updated:August 18, 2020 2:34 pm

ঋত্বিক আচার্য: কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছেন? করবেন নাই বা কেন। রাতারাতি গত দু-তিন দিনে সারা দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা কমেছে দৈনিক প্রায় ১২,০০০। বাংলাতেও কি তাহলে দ্রুত নামবে সংক্রমণের সংখ্যা। আপেক্ষিকভাবে বিষয়টা ইতিবাচক মনে হলেও, এত সহজও কিন্তু নয়।

বঙ্গে করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মানুষের কপালের ভাঁজ স্পষ্ট হচ্ছে। আবার অন্যান্য রাজ্য তথা সারা দেশে সংক্রমণ একলাফে অনেকটা কমা খানিকটা বিস্মিতই করছে। এক্ষেত্রে তাই মনে রাখতে হবে বেঞ্জামিন ডিসরায়েলির উক্তি “There are three types of lies- lies, damn lies, and statistics”। সুতরাং পরিসংখ্যান খতিয়ে না দেখে দেশের কোথায়, কেন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে বা বাড়ছে কিংবা প্রায় একই থাকছে- এসব শুধুমাত্র কয়েকটা সংখ্যা দেখে বলে ফেলা সম্ভব নয়।

Advertisement

এবার একটু বিস্তারিতভাবে বিষয়টায় আলোকপাত করা যাক। এই আলোচনা করতে গেলে তুলে ধরতে হবে বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান। আমরা যদি শুধু এই মাসের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, তাহলেই দেখতে পাব গোটা দেশের মোট করোনা টেস্টের সংখ্যা বদলাচ্ছে রোজ। গত ২ আগস্ট দেশে নমুনা টেস্ট হয়েছিল ৩,৮১,০২৭। ৩ আগস্ট যা একলাফে বেড়ে হয় ৬,৬১,৮৯২। মাসের ৪, ৫, ৬ এবং ৭ তারিখ সেই সংখ্যা ছিল ৬ লাখের সামান্য উপর বা নিচে। ৮ তারিখ আবার স্যাম্পেল টেস্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭,১৯,৩৬৪-য়। ৯ আগস্ট ফের তা কমে। হয় ৪,৭৭,০২৩। এবার নজর দিন ওই সময়ের করোনা (CoronaVirus) আক্রান্তের সংখ্যার দিকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন:  CARES-এর অর্থ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে পাঠানো যায় না, মত সুপ্রিম কোর্টের]

 

৪ তারিখ সংক্রমিত ছিল ৫৬,৬২৬, যা ৬ এবং ৭ তারিখ হয় ৬০ হাজারের উপরে আর ৮ তারিখ পৌঁছায় সর্বোচ্চ ৬৫,১২৬-য়। এরপর ১০ আগস্ট ১২,১১০ কমে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৫৩,০১৬-য়। চলতি মাসেরই ১১, ১২, ১৩, ১৪ তারিখ টেস্ট সংখ্যা ক্রমান্বয়ে পার করেছে ৮ লক্ষ ৫০ হাজারের গণ্ডি। ফলে সংক্রমিতের সংখ্যা আবারও বেড়েছে লাফিয়ে। পৌঁছে গিয়েছে ৬৭ হাজারের কোটায়। আবার ১৫ ও ১৬ তারিখ টেস্ট সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কমে যাওয়ায় সংক্রমণ সংখ্যা নেমে যায় ৫৫,০০০-এর নিচে। একী ভোজবাজি? একেবারেই নয়, টেস্টের দিন আর মূলত তার ১-২ দিন পরের আক্রান্ত সংখ্যাটা দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে কোভিড পজিটিভ হওয়ার সংখ্যা সরাসরিভাবে টেস্টের উপর নির্ভরশীল।

Corona-sample

রাজ্যভিত্তিক আলোচনাতেও একইরকম ফল মিলবে। বরং এই সরল ধারণাটাই আরেকটু পরিষ্কার হবে। যেমন মহারাষ্ট্রে আগস্টের ৭, ৮, ৯ তারিখ সর্বাধিক টেস্টিং হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন ৮৫ হাজার। ফলে ওই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল রোজ ১২,০০০-এর উপর। গত তিনদিনে নমুনা টেস্ট কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। ফলে নিম্নমুখী হয় আক্রান্তের সংখ্যাও। নেমে যায় সাড়ে ৮ হাজারের নিচে। অন্ধ্রপ্রদেশের ছবিটাও অনেকটা একই। গত ১১ তারিখের পর থেকে রোজ টেস্ট কমেছে কখনও ১০০০ তো কখনও প্রায় ৫০০০। তা মিলিয়ে সংক্রমণও দৈনিক কমেছে কখনও ৭০০ তো কখনও এক হাজারে। যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৬,৭৮০-য়। কর্ণাটকের দিকে তাকান। গত দু-তিন দিনে টেস্ট কমেছে প্রায় ২৬হাজার। ফল একই। সংক্রমিতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে নিম্নগামী। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, গুজরাট এবং রাজস্থান-সহ ভারতের বেশ কিছু করোনা সংক্রমণ প্রবণ রাজ্যে টেস্ট কমেছে উল্ল্যেখযোগ্যভাবে। কোথাও হাজার তো কোথাও ১০-১৫ হাজার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে করোনা আক্রান্তের গ্রাফ নিম্নমুখী।

করোনা সংক্রমণ প্রবণ রাজ্য হিসেবে বারবার উঠে আসছে পশ্চিমবঙ্গের নাম। চায়ের আড্ডা বা ঘরোয়া আলোচনায় সবার প্রশ্ন, কেন এ রাজ্যে সংক্রমণ অন্য রাজ্যগুলির মত কমছে না? বাস্তবে বাংলায় করোনা টেস্টের দৈনিক সংখ্যা প্রায় একই থাকছে কমছে, না বিশেষ। উপরন্তু যখন টেস্ট সংখ্যা বেশ খানিকটা বাড়ছে তখন সেই সংখ্যাটাই ধরা থাকছে বেশ কয়েকদিন যা আবারও বাড়ছে কয়েকদিনের ব্যবধানে। গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে টেস্ট সংখ্যা প্রায় ৫০০০ বাড়লেও সংক্রমণ বাড়েনি সেভাবে।

[আরও পড়ুন: করোনা জয়ের পরেই ফের অসুস্থ অমিত শাহ, ভরতি হলেন হাসপাতালে]

১৩০ কোটির দেশে সীমিত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়েই করোনার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ চলছে। ধীরে হলেও স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। তবে এখনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সারা দেশে একদিনে এক ধাক্কায় ১০-২০ হাজার কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে ভেবে অসাবধান হওয়ার কোনও কারণ নেই। নিয়মিত একই হারে টেস্টিংয়ের পাশাপাশি যদি দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পায় তবেই নিশ্চিন্ত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।

সূত্র : https://www.covid19india.org/

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ