Advertisement
Advertisement

Breaking News

Corona Virus

সম্পাদকীয়: তুরুপের তাস জৈব অস্ত্র

তাহলে কি ভারতের এই ভয়াবহ দ্বিতীয় তরঙ্গ চিনেরই জৈবযুদ্ধের অংশ?

Corona virus is a bio-weapon! | Sangbad Pratidin

ফাইল ছবি

Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:May 18, 2021 4:09 pm
  • Updated:May 18, 2021 4:09 pm

সুতীর্থ চক্রবর্তী: কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ জোরদার হতেই ফের সেই পুরনো প্রশ্নটি সামনে এসেছে- করোনা সংক্রমণ কি জৈবযুদ্ধের অংশ? এই নিয়ে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি শুরু হয়েছে। জৈবযুদ্ধের প্রসঙ্গ যখন উঠেছে, তখন ফের আঙুল চিনের দিকে। চিনের ইউহানের সি-ফুডের বাজার যদি সত্যিই করোনা সংক্রমণের ‘গ্রাউন্ড জিরো’ হয়ে থাকে, তাহলে সেই অঞ্চল কীভাবে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ থেকে মুক্ত? এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সংবাদমাধ্যম তাই প্রশ্ন করছে- তাহলে কি ভারতের এই ভয়াবহ দ্বিতীয় তরঙ্গ চিনেরই জৈবযুদ্ধের অংশ?

[আরও পড়ুন: করোনার ভারতীয় স্ট্রেনকে রুখতে হাতিয়ার হতে পারে দুই বিদেশি ভ্যাকসিন, দাবি গবেষণায়]

করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাঠগড়ায় চিনকে তুলে দিয়েছিলেন, তখন লাদাখে চৈনিক আগ্রাসন দৃষ্টি ঘোরানোর কৌশল হিসাবে বর্ণিত হয়েছিল। ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর প্রত্যাঘাত হিসাবে ভারত লালফৌজের ৪৫ জনকে খতম করেছিল। দ্বিতীয় তরঙ্গ কি তারই বদলা? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় তরঙ্গে ভারতীয় অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’ তথা ‘সিএমআইই’ তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে- এপ্রিলে দেশে সাড়ে তিয়াত্তর লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছে। প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গিয়েছে। ঢেউয়ের অভিঘাত ভারতীয় অর্থনীতির উপর আরও ব্যাপক এবং ভয়াবহ হতে পারে। ভারতীয় অর্থনীতির উপর করোনার আঘাত যত তীব্র ও বিস্তৃত হবে, ততই তো লাভ চিনের। ফলে, জৈবযুদ্ধের তত্ত্ব ভারতের বাজারে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

প্রথমবার যেমন চিনের দিকে আঙুল তুলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এবার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর প্রথম মুখ খুলেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। সরাসরি চিনের নাম তিনি মুখে আনেননি। কিন্তু চিনকে ইঙ্গিত করতে তিনি বলেছেন, এই করোনা-কালে যে দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে লাভবান হয়েছে, তারা-ই কি মারণ ভাইরাসকে জৈবযুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে প্রয়োগ করল? ব্রাজিলে দাঁড়িয়ে যখন বলসোনারো এই অভিযোগ করছেন, তখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে একটি লেখা দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে। সারি মার্কসন নামে তদন্তমূলক নিবন্ধের এই লেখিকা ২০১৫ সালে চিন থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে দেখিয়েছেন, কোভিড ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পাঁচ বছর আগেই চিন চিন্তা করেছিল কীভাবে এই ভাইরাসকে যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত করা যায়। চিনা ওই বইটিতে গবেষণাধর্মী লেখা লিখেছিলেন লালফৌজের চিকিৎসক ও গবেষকরা। তাঁরা তাঁদের নিবন্ধে মন্তব্য করেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই হবে জৈব অস্ত্রের উপর দাঁড়িয়ে। প্রথম দু’টি বিশ্বযুদ্ধে রাসায়নিক ও পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের ভূমিকা শেষ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ রাসায়নিক ও পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র প্রতিরোধ করার কৌশল আয়ত্ত করে ফেলেছে। ফলে জৈব অস্ত্রই হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের তুরুপের তাস। সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসকে একটি কার্যকর যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত করা যাবে।

Advertisement

বিশ্বজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পাঁচ বছর আগেই লালফৌজের গবেষক ও চিকিৎসকরা করোনা ভাইরাসকে যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত করার কথা বলছেন জেনে বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ভারতেও একদল গবেষক খুব সহজেই দ্বিতীয় তরঙ্গের সঙ্গে লালফৌজের বিজ্ঞানীদের ভাবনার যোগসূত্র টানতে শুরু করেন। চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইম্‌স’-এ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কড়া জবাব দেওয়া হয়েছে। ‘গ্লোবাল টাইম্‌স’ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে প্রকাশিত চিনা গ্রন্থটি মোটেও গোপন কোনও নথি নয়। এখন আউট অফ প্রিন্ট হলেও একসময় ‘আমাজন’-এ বইটি যথেষ্ট বিক্রি হত। ২০০২ এবং ২০০৪ সালে চিনে সার্স ছড়িয়ে পড়ার পর সে-দেশের গবেষকদের নিশ্চিত ধারণা ছিল সেটি জৈব সন্ত্রাস ছাড়া কিছু নয়। চিনা বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা নিশ্চিত ছিলেন যে, সার্সের ভাইরাস গবেষণাগারে তৈরি করে দক্ষিণ চিনে পশুদের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই পশুরা মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছিল। চিনের বিশ্বাস, তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে এই জৈব সন্ত্রাস আমেরিকা বা ইউরোপের চাল ছিল। যেমন, চিন অতীতেও অভিযোগ করেছে ১৯৪০ ও ১৯৪৫ সালে জাপান তাদের দেশে প্লেগ ছড়িয়ে দিয়েছিল। সার্স সংক্রমণের পর জৈব সন্ত্রাসের বিষয়টি তাদের ভাবনায় গভীর ছাপ ফেলেছিল বলেই ২০১৫ সালে ওই বইটি লেখা হয়। এখন ওই বইয়ের তথ্য কিছুটা বিকৃত করেই অস্ট্রেলীয় লেখকের মতো অনেকেই বলতে শুরু করেছে যে, করোনা ভাইরাসের কথা চিন আগে থেকেই জানত এবং ইউহানের গবেষণাগার থেকেই ভাইরাসটি ছাড়া হয়েছে। ‘গ্লোবাল টাইম্‌স’ পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, মার্কিন গবেষণাগারেই করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি।

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি কোথা থেকে তার সুনিশ্চিত উত্তর ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ তথা ‘হু’ দিতে পারেনি। ‘হু’ সমস্ত সম্ভাবনার পথই খোলা রেখেছে। ফলে যতদিন না এর উত্তর মিলবে, ততদিন নানা জল্পনা চলবে। করোনা ভাইরাস চিনের জৈব সন্ত্রাস বা ভারতের দ্বিতীয় তরঙ্গ চিনেরই কারসাজি- এমন জল্পনা তাই চাইলেও বন্ধ করা যাবে না।

[আরও পড়ুন: গাজায় তুঙ্গে লড়াই, বিতর্ক উসকে ইজরায়েলকে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ