Advertisement
Advertisement

গোলাপি বলই কি টেস্টের ভবিষ্যৎ?

আচ্ছা ডন ব্র্যাডম্যান, চার্লস ডেম্পস্টাররা আজ বেঁচে থাকলে কি অবাক হতেন?

Is pink ball the future of Test cricket?
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 18, 2016 4:40 pm
  • Updated:October 18, 2016 4:46 pm

টেস্টেও কি জনপ্রিয়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ক্রিকেটারদের সুবিধা-অসুবিধা নয়? অথচ ক্রিকেটারদের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের প্রয়োজনীয়তা অক্সিজেনের মতোই৷ তবে কি শুধু মুনাফার জন্য সমঝোতা করতে হবে ক্রিকেটারদের? লিখলেন সুলয়া সিংহ

ইডেনে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পড়লে গ্যালারিতে এক ইংরিজি কপচানো বাঙালি কন্যের প্রায়ই দেখা মেলে৷ সিএবি সুপার লিগ ফাইনালে তাঁকে দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম৷ গোলাপি বলে দিন-রাতের খেলা দেখতে এসেছিলেন৷ ভাবলাম, যাক শুধু ক্রোড়পতি লিগের হুজুগে মেতে নয়, ক্রিকেটটাকে ভালবেসেই মাঠে আসেন তিনি৷ চেনা মুখের তরুণীকে জিজ্ঞেস করলাম, কি, টেস্টও পছন্দ করেন তাহলে? আলতোভাবে ঘষে যাওয়া কাজল কালো চোখে মুচকি হেসে তিনি বললেন, “ডে-নাইট টেস্ট, পিঙ্ক বল৷ সাউন্ডস কুল না! তাই এলাম৷” উত্তরটা শুনে প্রথমে থ হয়ে গেলাম৷ পরে মনে পড়ল, এক বন্ধু এমবিএ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এমবিএ-টা ‘সাউন্ডস কুল’ বলে৷ ফের সেই একই অভিজ্ঞতা হল৷ টেস্ট নিয়ে আলোচনায় সেখানেই ইতি টানি৷

Advertisement

প্রায়ই খবরের কাগজ আর ইন্টারনেটে পড়ছি, একঘেয়েমি কাটিয়ে টেস্টকে জনপ্রিয় করে তুলতেই গোলাপি বলে দিন-রাতের ম্যাচের ভাবনা৷ গোলাপি বলই টেস্টের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি ইত্যাদি৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ‘সাউন্ডস কুল’ বিষয়টা যখন আর পুরনো হয়ে যাবে, তখন কী হবে? ‘বুড়ো’ হয়ে যাওয়া টেস্টকে মেক-আপ করিয়ে বাঁচানো যাবে তো?

Advertisement

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বলে যখন কোনও বস্তু জন্ম নেয়নি, তখন ক্রিকেট দুনিয়ায় রাজত্ব করত পাঁচদিনের এই খেলা৷ সেই আভিজাত্যে আজ নতুন ছোঁয়া লাগছে৷ গতির যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিযোজন ঘটছে টেস্টেরও৷ আগমন ঘটেছে গোলাপি বলের৷ কেন গোলাপি বল? কারণ লাল বল রাতে খেলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে৷ ফ্লাডলাইটে পিচের রঙের সঙ্গে লাল বলের রং অনেকটাই এক হয়ে যাবে৷ সাদা বলও নোংরা হবে দ্রুত৷ তাই ভোটে জয়ী গোলাপিই৷ আর টেস্ট দিন-রাতের কেন? সে তো সবার জানা৷ ক্রিকেটপ্রেমীরা যাতে কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফিরেও সাদা জার্সির ক্রিকেট উপভোগ করতে পারেন, সেটাই উদ্দেশ্য৷ প্রাক্তন অজি ক্রিকেটার কেইথ ব্র্যাডশোয়ের মস্তিষ্ক প্রসূত গোলাপি কুকাবুরাকেই এখন টেস্টের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ ২০০৬ থেকে ২০১১ এমসিসি-র প্রধান থাকাকালীন টেস্টের ট্রেডিশনকে ভাঙার প্রয়াস করেছিলেন তিনিই৷ যা আস্তে আস্তে দিনের আলো দেখছে৷

আচ্ছা ডন ব্র্যাডম্যান, চার্লস ডেম্পস্টাররা আজ বেঁচে থাকলে কি অবাক হতেন? ভাবতেন এও হয়! হয়তো ভাবতেন৷ হয়তো মেনেও নিতেন৷ পরিবর্তনই জীবন৷ এই ধ্রুবসত্যকে অস্বীকার করার তো প্রশ্ন ওঠে না৷ আজ যেখানে স্মার্টফোন ছাড়া আম আদমি এক পা চলার কথা ভাবতে পারেন না, সেখানে ‘লাগান’ জমানার টেস্ট ফরম্যাটকেই বা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়! কিন্তু টেস্টেও কি জনপ্রিয়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ক্রিকেটারদের সুবিধা-অসুবিধা নয়? অথচ ক্রিকেটারদের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের প্রয়োজনীয়তা অক্সিজেনের মতোই৷ অ, আ না শিখলে যেমন সাক্ষর হওয়া যায় না৷ তেমন টেস্টকে বাদ দিলে ‘ক্রিকেটার’ তকমা গায়ে চাপে না৷ তাই ক্রিকেটারদের মতটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু তাঁরা যে সন্তুষ্ট নন৷

গত নভেম্বরে অ্যাডিলেডে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম গোলাপি বলের দিন রাতের টেস্টের পর অনেক ক্রিকেটারই বিরক্ত ছিলেন৷ জানিয়ে ছিলেন, রাতে বল দেখতে অসুবিধা হচ্ছে৷ সিএবি সুপার লিগেও ছবিটা পাল্টায়নি৷ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান দলের অনুষ্টুপ মজুমদার ম্যাচের পর বলছিলেন, মনে হয় না গোলাপি বল টেস্টের ভবিষ্যৎ৷ রাতে এ বলে ব্যাট করা বেশ কঠিন৷ পাক পেসার ওয়াহার রিয়াজের অভিযোগ করছেন, এই বলে কনভেনশনাল বা রিভার্স সুইং করা যাচ্ছে না৷ অর্থাৎ ব্যাটসম্যানদের মতো বোলারদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷

এই আলোচনা চলতেই থাকবে৷ কিন্তু মুনাফা লাভের বাজারে ক্রিকেটারদের সুবিধা, আভিজাত্যও হয়তো গৌন্য হয়ে যাবে৷ তাই চোখের সামনে একদিন সাদা জার্সি রঙিনও হয়ে গেলেও টেস্টপ্রেমীদের মুখ বুজে সবটুকু মেনে নিতে হবে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ