Advertisement
Advertisement
Ashok Stambh

‘মোদির অশোকস্তম্ভ যেন হিংসার ইঙ্গিত দেয়, সত্য ও শান্তির বাণী মাথায় আসে না’

'সংবাদ প্রতিদিন'-এর জন্য কলম ধরলেন নির্বেদ রায়।

Modi's Ashok Stambh resembles violence instead of truth and peace | Sangbad Pratidin
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:July 13, 2022 12:50 pm
  • Updated:July 13, 2022 4:26 pm  

নির্বেদ রায়: ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই ভারতের গণপরিষদে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু একটি প্রস্তাব আনেন। প্রস্তাবটি এইরকম, “যেহেতু সম্রাট অশোকের নাম আমি উল্লেখ করেছি, তাই আপনাদের কাছে ব‌্যাখ‌্যা করতে চাই যে ভারতে অশোকের সময়কে এক আন্তর্জাতিক ইতিহাসের সময় হিসাবে আমরা জানি, যখন ক্ষুদ্র জাতীয়তাবাদ থেকে মুক্ত হয়ে সারা পৃথিবীর কাছে তিনি তাঁর দূত পাঠিয়েছিলেন, সাম্রাজ্যের অহংকার নিয়ে নয়-শান্তি, সংস্কৃতি আর উন্নতির বাণী নিয়ে।”

এই প্রস্তাবকে মেনে নিয়ে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসাবে অশোকস্তম্ভ গৃহীত হয়। সারনাথের অশোকস্তম্ভকে এক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয়। সেই অশোকস্তম্ভ তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ সালের কাছাকাছি সময়ে, নেহরু থেকে বদরুদ্দিন তৈয়বজী যে অশোকস্তম্ভকে তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন সেটি ভারতীয় সংবিধানের প্রথম পাতায় উৎকীর্ণ আছে। এঁকেছিলেন নন্দলাল বসু এবং শান্তিনিকেতনেরই দীননাথ ভার্গব। সেই অসামান‌্য কাজটির সঙ্গে মোদির ‘অশোকস্তম্ভের’ অমিল প্রচুর। যদি তার কারণ শিল্পীর দক্ষতার অভাব হয় তাহলে সেই প্রতীক এই মুহূর্তে বাতিল করা প্রয়োজন, আর যদি এটি শাসকের মনোবাসনার প্রতিফলন হয় তাহলে দেশের মানুষকে সতর্ক হতে হবে। ধর্মাশোকের অশোকস্তম্ভ ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পৌঁছে চণ্ডাশোকের কলিঙ্গযুদ্ধের প্রতীক হয়ে না ওঠে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ওড়িশা উপকূলে গভীর নিম্নচাপ, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিতে ভাসতে পারে রাজ্যের এই জেলাগুলি]

অশোকস্তম্ভের মূল কাঠামো কেমন ছিল এবং কী তার অর্থ? এই প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ! সত্যের জয় সর্বত্র – ‘সত‌্যমেব জয়তে’, মুণ্ডক উপনিষদের এই বাণী উৎকীর্ণ আছে স্তম্ভে, কিন্তু নতুন স্তম্ভটির চেহারা দেখে না সত‌্য, না শান্তির বাণী, কোনওটাই মাথায় আসে না। আসে ভয়ংকর হিংসা আর উদগ্র লালসার ইঙ্গিত। আসুন একটু পর্যালোচনা করা যাক, কেন? প্রথম বলি যে, অশোকস্তম্ভ দেশের প্রথম দিকের পাথরের কাজ এবং মৌর্য‌-পালিশ এই কাজের বড় গুণ। অশোক এই স্তম্ভ তৈরি করেন শান্তির বাণী প্রচার করতে দেশে এবং বিদেশে, কখনও এবং কোনওভাবেই তাঁর দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন প্রচার করতে নয়; ইতিহাস তাঁকে ‘মহান সম্রাট’ (Asoka, The Great) বলেই স্মরণ করেছে, কখনওই বিশ্বত্রাস রাজা হিসাবে নয়। তাই এই নতুন অশোকস্তম্ভের যে সিংহ তার পা, কেশর, জিভ, দাঁত পালটেছে বটে, কিন্তু সবচেয়ে বড় যে জায়গায় নতুন স্তম্ভ পালটে গিয়েছে সেটা অবশ‌্যই তার ভ্রুকুঞ্চিত ললাট বা রাগী কপাল-হিংস্র পশুরাজের মুখ। ওই মুখ কখনওই পৃথিবীতে শান্তির বাণী প্রচারের প্রতীক হতে পারে না, বুদ্ধের অনন্ত শান্তিকে বয়ে নিয়ে যেতে অপারগ, তাঁর অহিংসা ও শান্তির দৌত্যের ব‌্যর্থ এক মূর্তিমাত্র।

মূর্তিতে নকল করা হয়েছে যে সমস্ত প্রাণীদের প্রতিকৃতি তারা বিশেষজ্ঞদের মতে বুদ্ধের জীবন। তার বিভিন্ন সময়ের প্রতিফলন। নকল করার সময় মোদি এই কথাগুলো খেয়াল করলে ভাল করতেন। নাহলে ভারতের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জায়গায় একা-একা ওই মহান সৃষ্টিকে বুঝতে যেতেন না এবং উদ্বোধন করতেও রাজি হতেন না। তবে পণ্ডিত মানুষরা বলেছেন, ‘যেখানে বুদ্ধিমান মানুষ যেতে ভয় পায়, সেখানে মূর্খ সদর্পে এগোয়।’

[আরও পড়ুন: ক্যানিংয়ে পঞ্চায়েত সদস্য-সহ ৩ TMC নেতা খুনে গ্রেপ্তার এবাইদুল্লা, এখনও অধরা ৫]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement