Advertisement
Advertisement

Breaking News

Pakistan

ভারতের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের গরজ বেশি

এখন ভারতের বিদেশনীতির মূল কথা হল, ‘ইন্দো ফার্স্ট ফরেন পলিসি’।

Pakistan needs peace initiative with India | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:August 20, 2022 1:54 pm
  • Updated:August 20, 2022 4:05 pm

এখন ভারতের বিদেশনীতির মূল কথা হল, ‘ইন্দো ফার্স্ট ফরেন পলিসি’। পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক বিগড়ে গিয়েছে। কেননা, পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে, অতীতে যেরকম পাকিস্তানের বাজেটে তালিবান সরকারের জন্যে অর্থ বরাদ্দ থাকত, সেই ক্ষমতা তাদের আর নেই। পাকিস্তানের ক্ষমতার উৎস কার্যত এখন চিন। ফলে পাকিস্তান তালিবানকে সমর্থন করতে চাইলেও তালিবান কিন্তু পাকিস্তানকে সেভাবে সমর্থন করছে না। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

 

Advertisement

৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে ঘটনার ঘনঘটা সেই যে শুরু হয়েছে, তার আজও সমাপ্তি হল না। দুই দেশ-ই স্বাধীন হল বটে, কিন্তু পাকিস্তানের অস্থির অবস্থা, সামরিক শাসন চলছে। ইমরান খানের গদি গেল। সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ নতুন সরকার গঠন করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন। সম্প্রতি পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে ইমরান খানের বিপুল সাফল্য দেশজুড়ে একটা হইচই সৃষ্টি করেছে। তাহলে কি আবার ইমরান খানের প্রত্যাবর্তন হচ্ছে? পাঞ্জাবে ইমরান খানের পক্ষে মানুষের সমর্থন রয়েছে। তা’ বলে কি সরকার বদলে যাবে? কয়েক সপ্তাহ আগে সে আশায় ছাই ঢেলে দেশের নির্বাচন কমিশন ইমরান খানের বিরুদ্ধে একটা ফরমান জারি করে জানিয়েছে- তিনি যে-অর্থ ভোটে ব্যয় করেছেন তার অনেকটাই অবৈধ। এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কী করতে চাইছেন, কী ভাবছেন এবং কীভাবে এগতে চাইছেন, তা-ই আলোচ্য।

Advertisement

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তির পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন। লাহোর বাসযাত্রার কূটনীতি এখনও এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। পারভেজ মুশারফের নেতৃত্বে কার্গিল অভিযান এবং পাকিস্তানের সেই বিশ্বাসঘাতকতা দীর্ঘদিন ভারতীয় জনমানসে রক্তপাতের কারণ হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দৌত্য চেয়েছিলেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ‘সার্ক’-এর রাষ্ট্রনায়কদের অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার প্রধান কারণ, নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। একাধিকবার দুই রাষ্ট্রনায়ক ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করেছিলেন। এমনকী, নওয়াজ শরিফের নাতনির বিয়েতে নরেন্দ্র মোদি প্রথা ভেঙে চলেও গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মোদি বুঝতে পারেন, পাকিস্তানের আসল চালিকাশক্তি নওয়াজ শরিফ নন, পাক-সেনাবাহিনী এবং তার দোসর ‘আইএসআই’। সেই কারণে পাক অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে, সীমান্ত সংঘর্ষ বাধে, ছায়াযুদ্ধেও বিরাম হয় না। ফলে, পাক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদিকে পুলওয়ামা আক্রমণের পথে হাঁটতে হয়েছিল। নওয়াজ শরিফ ‘নরমপন্থী’ হলেও তিনি যে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, এটা বুঝতে পেরে বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকও মোদি বাতিল করে দেন। সেই বাতিল হয়ে যাওয়া বৈঠক আজও হয়নি। দু’-দেশের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্ক কার্যত বিচ্ছিন্ন। কেননা, দু’-দেশেরই হাইকমিশনার এখন কর্মরত নেই। উপ-হাইকমিশনার একটা ক্ষীণ সুতো দু’-দেশের কূটনীতিতে বজায় রেখেছেন। ভারত এখন কী চাইছে?

[আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও বড়লোকের ঢাক তৈরি হয় গরিবের চামড়ায়!]

আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের উত্থানের ফলে ভারত প্রমাদ গুনেছিল। তালিবান সরকার ফিরে আসা মানে পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। সবচেয়ে শক্তিশালী সেই হাক্কানি গোষ্ঠীকে পাকিস্তান চিরকাল নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই অবস্থায় মুনশিয়ানার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিস্থিতি সামলেছেন। রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে তালিবানি সরকারের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করেছেন। মস্কোতে গিয়ে অজিত ডোভালের দূত তালিবানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে নিজেও গিয়েছেন। কেননা, তালিবান সরকার ও তালিবানি জঙ্গি এক নয়। প্রশাসনিক ক্ষমতায় এসে তালিবান সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করার বার্তা দেয়। এদিকে, ভারতও শুধু গম নয়, কোভিড প্রতিষেধক, চিকিৎসা বিষয়ক যন্ত্রপাতি- সমস্ত আফগানিস্তানকে জুগিয়ে চলেছে। পারস্পরিক সম্পর্কেও সেরকম বৈরিতা আর নেই।

অপর দিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক বিগড়ে গিয়েছে। কেননা, পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে, অতীতে যেরকম পাকিস্তানের বাজেটে তালিবান সরকারের জন্যে অর্থ বরাদ্দ থাকত, সেই ক্ষমতা আজ আর তাদের নেই। পাকিস্তানের ক্ষমতার উৎস কার্যত এখন চিন। তার ফলে পাকিস্তান তালিবানকে সমর্থন করতে চাইলেও তালিবান কিন্তু পাকিস্তানকে সেভাবে সমর্থন করছে না। এখন ভারতের বিদেশনীতির মূল কথা হল, ‘ইন্দো ফার্স্ট ফরেন পলিসি’। অর্থাৎ, প্রথমে ভারত এবং পরে বাকি সব রাষ্ট্র। মুনশিয়ানা শুধু নয়, অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে ভারত কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধতেও নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করার প্রয়োজনীয়তা ভারতের থেকে পাকিস্তানের বেশি।

পাকিস্তানের আর্থিক সংকট চরমে। কেননা, ‘আইএমএফ’ পাকিস্তানকে ঋণ দিতে চাইছে না। আমেরিকার সঙ্গেও পাকিস্তান সম্পর্কটা বিগড়ে দিয়েছে। চিনের সঙ্গে অতি-বন্ধুত্ব বাইডেনের কাছে পাকিস্তানকে চক্ষুশূল করে তুলেছে। পাশাপাশি চিনের সঙ্গেও কিন্তু পাকিস্তানের সম্পর্কে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক স্তর আছে। এককথায় বলে দেওয়া যায় না যে, পাকিস্তান চিনের অক্ষ থেকে সরে গিয়েছে। আবার পাকিস্তানের যে মৌলবাদী কার্যকলাপ, তাতে চিনও বিরক্তি প্রকাশ করছে। সে-দেশের একটা বড় অংশে ইসলামিক জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু হয়েছে। স্বভাবতই চিন অস্বস্তিতে। এমতাবস্থায়, পাক সেনাবাহিনী আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে চাইছে।

ভারতের উচিত, পাকিস্তানের সঙ্গে একটা আলাপ-আলোচনায় বসা। সেই কারণেই, কাজাকস্তানের তাসখন্দে ‘এসসিও’-র বৈঠকে ছিল রাশিয়া, চিন ও পাকিস্তান। এমনকী, তালিবানের বিদেশমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন জয়শংকর। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাওয়াল ভুট্টোর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়নি। কেননা, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বন্ধ করেছেন মোদি। তিনি আলোচনাটা শুরু করতে চান শীর্ষস্তরে। তবে, জয়শংকরের সঙ্গে অন্তত করমর্দনের একটা সুযোগ কিন্তু বিলাওয়াল ভুট্টো পেলেন। এরপর বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়ে যাওয়ার পর আগামী সেপ্টেম্বরের শেষে তাসখন্দেই ‘এসসিও’-র শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা- যেখানে চিনের প্রিমিয়ারের সঙ্গেও নরেন্দ্র মোদির সাইডলাইন-টক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানের শরিফও কিন্তু আশা করছেন যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সেই আলোচনাটা হবে কি হবে না, সেটাই হচ্ছে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

ইমরানের ‘তেহরিকি ইনসাফ’ দল আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট শাহবাজকে চাপের মধ্যে ফেলতে চাইছে। সেই কারণে, ১৩ আগস্ট ৭৫ বছরের স্বাধীনতার দিন পাকিস্তানের হকি স্টেডিয়ামে ইমরান খান এক বিরাট জনসভা ডাকেন, পাকিস্তানিদের ভাষায় ‘জলসা’। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর হুঙ্কার ছিল, এই সরকারের বদল অবশ্যম্ভাবী। পাশাপাশি ভারতের বিদেশনীতিরও প্রশংসা করছেন ইমরান। বলেছেন, আমেরিকার রক্তচক্ষুকে ভয় না পেয়ে রাশিয়ার কাছে থেকেও ভারত তেল নিচ্ছে। এই ধরনের বিদেশনীতির প্রশংসা ইমরান খান আগেও বহুবার করছেন। এটা যতটা না ভারতকে খুশি করার জন্য, তার চেয়ে বেশি এই বার্তা দিতে যে, আমেরিকার চাপের কাছে কিন্তু ভারতের বিদেশনীতি নতি স্বীকার করে না। তাহলে আমরা কেন করব?

আমেরিকা কিছুতেই ইমরানকে আর সুযোগ দিতে চায় না। ইমরানকে রাজনৈতিক উত্থান চায় না। ভারত দেখতে চাইছে ইমরানের জনসমর্থন কতখানি। যদিও এখনও পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্য বলছে, পাক সেনাবাহিনী ইমরান খানকে যেমন রেয়াত করে না, আমেরিকাও রেয়াত করে না। পাঞ্জাব প্রভিন্সে কিঞ্চিৎ প্রভাব থাকলেও ইমরান খানের পক্ষে এখুনি শরিফকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এখনই করা ভাল, না কি আর একটু পিছিয়ে দিয়ে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত দেখে নেওয়া ভাল, সেটাও এখন মস্ত বড় প্রশ্ন।

পাকিস্তান শুধু নয়, পৃথিবীর মুসলিম দুনিয়ার কাছেও ভারত নতুন বার্তা দিতে চাইছে। কাশ্মীরের বেশ কিছু নেতা, প্রায় ৩০-৪০ জনের সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে বৈঠক করেছেন। কাশ্মীরের নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন। এখন এই নির্বাচন কীভাবে হবে, কাদের নিয়ে হবে, পুরনো ডিলিমিটেশনের ভিত্তিতে হবে, স্থানীয় নেতারা যাদের ‘বহিরাগত’ বলে মনে করে, তাদের ভোটাধিকার থাকবে কি থাকবে না- এরকম হাজার বিতর্ক আছে। শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন হলেও স্বায়ত্তশাসন কাশ্মীরে আসবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকেই মনে করছেন, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি কাশ্মীরের নির্বাচন করিয়ে পৃথিবীর কাছে বার্তা দিতে চান, কাশ্মীরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার।

এই পরিস্থিতিতে যদি পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হয়, তাহলে কাশ্মীরে ভোটের সময়ও তার একটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের উপর পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে মেহবুবা মুফতিরাও খুব বেশি মোদি সরকারের বিরোধিতা করার সুযোগ পাবেন না- এমন একটা পরিস্থিতি মোদিও তৈরি করতে চান। ‘আরএসএস’ তথা ‘সংঘ পরিবার’ এবং বিজেপির মধ্যে যাঁরা কট্টরবাদী তাঁরা এখনও পাকিস্তানকে কতটা বিশ্বাস করবেন, বা এখনই আলাপ-আলোচনায় বসা উচিত কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা।

[আরও পড়ুন: চুরি যাচ্ছে না তো ব্যক্তিগত তথ্য, কতটা সুরক্ষিত ‘পার্সোনাল ডেটা’?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ