Advertisement
Advertisement

Breaking News

RBI

ভরসা সূর্যের সপ্তম ঘোড়া?

লোকসভা ভোটের আগে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে কেন্দ্র।

Recent report of RBI is a shock to the Modi government। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 21, 2023 1:54 pm
  • Updated:February 21, 2023 1:54 pm

রিজার্ভ ব‌্যাংকের সাম্প্রতিক বুলেটিন নির্মলা সীতারমণের এবারের বাজেটকে ‘সুরজ কা সাতওয়া ঘোড়া’ তথা সূর্যের রথের সপ্তম ঘোড়া হিসাবে দেখছে। সূর্যের রথের সপ্তম ঘোড়া স্বপ্ন, ভবিষ‌্যৎ ও আশাবাদের প্রতীক। কিন্তু অতিমারীর পর অর্থনীতি সম্পূর্ণ ঘুরে দঁাড়িয়েছে বলে এতদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক যে-দাবি করে অাসছে, তা স্বীকার করা হয়নি রিজার্ভ ব‌্যাংকের রিপোর্টে। লিখলেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে দেশের কেন্দ্রীয় ব‌্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট একটি বড় ধাক্কা। ‘রিজার্ভ ব‌্যাংক অফ ইন্ডিয়া’-র সদ‌্য প্রকাশিত আর্থিক বুলেটিনে বর্তমান বছরে দেশে মন্দার আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ওই বুলেটিনের ছত্রে ছত্রে ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, তবুও পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ওই বুলেটিনে ২০২৩-২৪-এর কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও রয়েছে। বাজেটে মূলধনী খাতে ব‌্যয় বাড়িয়ে যেভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা রয়েছে, তাকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসাবে দেখানোর চেষ্টাও রয়েছে। কিন্তু আর্থিক মন্দা সমস্ত ইতিবাচক সম্ভাবনাকেই ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। লোকসভা ভোট অার মাত্র একটি বছর দূরে। ফলে এই বছরে দেশ অার্থিক মন্দার কবলে থাকলে, তা মোটেও মোদি সরকারের কাছে স্বস্তিদায়ক হবে না। ‘আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার’ বা ‘আইএমএফ’ তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, ২০২৩-এ বিশ্ব অর্থনীতি যতটা খারাপ হবে বলে আশঙ্কা ছিল, ততটা হওয়ার সম্ভাবনা অাপাতত নেই। দুনিয়া জুড়ে মুদ্রাস্ফীতির হারও কমছে। ২০২২-এ বিশ্বজুড়ে গড় মুদ্রাস্ফীতি যেখানে ছিল ৮.৮ শতাংশ, সেখানে ২০২৩-এ তা কমে ৬.৬ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে আর্থিক মন্দার গতিও মন্থর হবে বলে ‘আইএমএফ’-এর মূল‌্যায়ন। রিজার্ভ ব‌্যাংকের ফেব্রুয়ারি মাসের বুলেটিন মোটেও অাইএমএফের রিপোর্টের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয়। এতেও বলা রয়েছে যে, ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় বর্তমান বছরে অনেকটাই ভাল হবে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: আদানির বন্দর থেকে উদ্ধার মাদক বেচে নাশকতার ছক! লস্কর সম্পর্কে বিস্ফোরক দাবি NIA রিপোর্টে]

কিন্তু অতিমারীর পর অর্থনীতি সম্পূর্ণ ঘুরে দঁাড়িয়েছে বলে এতদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক যে দাবি করে অাসছে, তা স্বীকার করা হয়নি রিজার্ভ ব‌্যাংকের রিপোর্টে। রিজার্ভ ব‌্যাংকের আর্থিক নীতি কমিটি কয়েক দিন আগে ‘রেপো রেট’ ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। এরকমটা প্রত‌্যাশা ছিল অর্থনীতি মহলের। ‘রেপো রেট’ বৃদ্ধি মানে সাধারণ মধ‌্যবিত্তর ঘাড়ে ‘ইএমআই’-এর চাপ বৃদ্ধি। প্রতি দু’-মাস অন্তর অার্থিক নীতি কমিটি বৈঠকে বসে। পরপর কয়েকটি বৈঠকের পর এই রেপো রেট বেড়েছে। রিজার্ভ ব‌্যাংকের সাম্প্রতিক এই রিপোর্টের ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদদের ব‌্যাখ‌্যা, আপাতত রেপো রেট কমার সম্ভাবনা নেই। কয়েক দিন অাগে খুচরো পণ‌্যর মূল‌্যবৃদ্ধির হার তিনমাসের মধে‌্য সর্বোচ্চ বিন্দুতে গিয়েছে। অর্থাৎ, ইএমআই কমবে এমন সম্ভাবনা নিকট ভবিষ‌্যতে দেখা যাচ্ছে না। ফিক্সড ডিপোজিটে সুদ বাড়ার সুবিধা মিলছে। গৃহঋণ বা গাড়ির ঋণে অাবার সুদের বোঝা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

রিজার্ভ ব‌্যাংকের বুলেটিন অবশ‌্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সাম্প্রতিক বাজেটকে ‘সুরজ কা সাতওয়া ঘোড়া’ তথা সূর্যের রথের সপ্তম ঘোড়া হিসাবে দেখছে। সূর্যের রথের সপ্তম ঘোড়া স্বপ্ন, ভবিষ‌্যৎ ও আশাবাদের প্রতীক। বুলেটিনে বাজেট নিয়ে একাধিক বিশ্লেষণাত্মক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এবারের বাজেটকে মূলধনী খাতে ব‌্যয়বৃদ্ধির একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে দেখতে হবে। ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরের নিরিখে ২০২৩-’২৪ বাজেটে মূলধনী খাতে সরকারি ব‌্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি করার কথা রয়েছে। মূলধনী খাতে তিনগুণ ব‌্যয়বৃদ্ধির পরিণাম অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী। মূলধনী খাতে সরকারি খরচ বাড়লে, তা টেনে নিয়ে অাসে বেসরকারি লগ্নি। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মূলধনী খাতে বিপুল ব‌্যয় আগামী চারবছরে আরও লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আয় সৃষ্টি করবে। অর্থনীতিতে আয় সৃষ্টির অর্থই হল কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়া। দ্বিতীয়ত, এবারের বাজেটে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে রাজকোষ নিয়ন্ত্রণে। একদিকে ঘাটতি কমিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে, অন‌্যদিকে, সরকারের ঋণ মোট অভ‌্যন্তরীণ আয়ের অনুপাতে কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এতেও বেসরকারি লগ্নির সুযোগ বাড়বে। তৃতীয়ত, বাজেটে আয়কর কাঠামোর পরিবর্তন অানা হয়েছে। নতুন কর-কাঠামোয় ছাড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজেটেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছেন, নয়া কর-কাঠামোয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের কম আয় হবে। অর্থাৎ, এই পরিমাণ টাকা মানুষের হাতে চলে আসবে।

[আরও পড়ুন: ‘গোমাংস খাওয়া নিয়ে যস্মিন দেশে যদাচার বিজেপির’, মাওরি-হোসাবলের মন্তব্যে কটাক্ষ উদ্ধবের]

৩৫ হাজার কোটি টাকা একবছরে মানুষের হাতে চলে আসার প্রভাবও অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী। এই টাকায় জিনিসের চাহিদা বাড়বে। সেই চাহিদা উৎপাদন বাড়াবে। উৎপাদন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। নতুন কর্মসংস্থান আবার নতুন করে চাহিদা তৈরি করবে। সূর্যের রথের ছ’টি ঘোড়া ব‌্যর্থ হলেও সপ্তম ঘোড়াটি রথকে ঠিক গন্তবে‌্য পৌঁছে দেয়। নির্মলা সীতারমনের বাজেট রিজার্ভ ব‌্যাংকের প্রত‌্যাশা মতো সূর্যের রথের সপ্তম ঘোড়া হিসাবে কাজ করবে কি না, তা অবশ‌্য ভবিষ‌্যৎ-ই বলবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব‌্যাংক তার সাম্প্রতিক রিপোর্টে এ-কথা বলতে পারছে না যে, অর্থনীতি ঘুরে দঁাড়িয়েছে বা অর্থনীতি কোভিড-পূর্ববর্তী জায়গায় পৌঁছেছে। বৈদেশিক বাণিজে‌্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে অানা যাচ্ছে না। রফতানি বাড়ানো যাচ্ছে না। বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমশ বিশ্বায়নের পথ ছেড়ে টুকরো টুকরো বেড়া তোলা দ্বীপে পর্যবসিত হচ্ছে, যেখানে বাণিজ‌্য বাড়ানো সহজ কাজ নয়। এই জায়গায় দঁাড়িয়ে ফঁাকা প্রতিশ্রুতির কোনও মূল‌্য নেই। কেন্দ্রীয় ব‌্যাংকের বুলেটিন সে-কথা স্মরণ করিয়ে দিল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ