Advertisement
Advertisement

Breaking News

CPM

কৃতী ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে রাজনৈতিক বিবৃতির লড়াই? কমরেড, ক’টা কথা ছিল

এই অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

Successful students should not fight for political statements। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 28, 2023 9:08 am
  • Updated:May 28, 2023 9:08 am

কুণাল ঘোষ: পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল এক কৃতী ছাত্রী সংবাদমাধ‌্যমে বলছে, ‘এ বাংলা আমার নয়।’ ইঙ্গিত নিয়োগ দুর্নীতির দিকে। তা নিয়ে মিডিয়া এবং সোশ‌্যাল মিডিয়ায় হইচই। আমার খুব স্পষ্ট প্রশ্ন, সফল ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে এসব বলিয়ে রাজনীতির জলঘোলা করার দরকার আছে কি?

সংশ্লিষ্ট মেয়েটির পক্ষে-বিপক্ষে দু’রকম চর্চাই দেখছি। এমন পোস্টও দেখছি, যাতে তার পারিবারিক বাম পরিচয় এবং তার পরিবারের সদস্যের বাম জমানার রহস‌্যময় চাকরি নিয়েও বিস্ফোরক সব বয়ান রয়েছে। এগুলির সত‌্যতা যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বস্তুত, এই বিতর্কে ঢোকার থেকেও আমি বেশি জোর দিয়ে বলতে চাই মেয়েটি যদি বাম পরিবারের হয়েও থাকে, হতেই পারে। এরকম অনেকেই ছিল বা আছে। কিন্তু আসল প্রশ্নটা হল, পরীক্ষার ফলাফলের দিন কৃতী ছাত্রী হিসাবে প্রশংসামূলক প্রচারের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক কথা বলা এবং তার মধ্যে দিয়ে নিজেকে সাময়িক আলোচ্যের কেন্দ্রবিন্দু করে তোলার প্রবণতা ঠিক কি না। সে নিজে বলে থাকুক বা কারও বুদ্ধিতে বলে থাকুক, বলাটা কোনওমতেই ঠিক হয়নি। যদি উলটো রাজনীতির কথা বলত, তাহলেও আমি একই কথা বলতাম।

Advertisement

নিয়োগ দুর্নীতি খারাপ জিনিস। যারা জড়িত, শাস্তি হোক। কিন্তু, তাকে ইঙ্গিত করে একজন ছাত্রী ‘এই বাংলা আমার নয়’ বলতে পারে কি? ও কি জানে না, বাম জমানায় প্রায় সব হোলটাইমারের নিজের বা বাড়ির লোকের চাকরির ব‌্যবস্থা করে দিত পার্টি, বহু দলবাজি ও বঞ্চনার অভিযোগ উঠত, কোর্টে মামলাও হয়েছে। ও কি জানে না, মরিচঝাঁপি থেকে সাঁইবাড়ি, বিজন সেতু থেকে নেতাই, পরের পর গণহত‌্যায় সিপিএমের (CPM) হাত রক্তাক্ত? ও কি জানে না, বানতলা থেকে ধানতলা, গণধর্ষণের ইতিহাস ছিল বাম জমানায়? ও কি জানে না, ধর্মতলা থেকে কোচবিহার, ট্রিগার হ‌্যাপি পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর মিছিল ছিল বাম জমানার পরিচায়ক? ও কি জানে না, মহাকরণ আর লালবাজারে ঢিলছোড়া দূরত্বে সিপিএমের মদতে বেড়ে ওঠা সাট্টা ডন রশিদের বাড়ি বিস্ফোরণে বউবাজারে শতাধিক হতাহত? ও কি জানে না, বাম জমানায় দুষ্কৃতী ধরতে গেলে খুন হতে হত ডিসি পোর্ট থেকে ওসি তিলজলার মতো পুলিশ অফিসারদের? ও কি জানে না, সিপিএম প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ইংরেজি তুলে দিয়ে কয়েকটা প্রজন্মের কোমর ভেঙে দিয়েছিল? ও কি জানে না, আটের দশকে কম্পিউটার ঢুকতে দেব না বলে সিপিএম তথ‌্যপ্রযুক্তিতে বাংলাকে লাস্ট বেঞ্চে পাঠিয়েছে? ও কি জানে না, বাম জমানায় দিনভর, বিশেষত বিকেল থেকে রাত পরিবারের অতিথি থাকত লোডশেডিং? ওর বাড়িতে কি এখন নিয়মিত হ‌্যারিকেন বা লম্ফে কেরোসিন ভরে রাখা হয়? কিংবা মজুত থাকে মোমবাতি আর দেশলাই? তাহলে সেই সময় যে কোনও কৃতী বলতেই পারত ‘এই বাংলা আমার নয়’, কিন্তু, সেই সংস্কৃতি তো কেউ দেখায়নি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: রেকর্ড সময়ে নির্মাণ নয়া সংসদ ভবনের, বয়কট নয়, প্রশংসা করুন, বিরোধীদের বললেন গুলাম নবি]

এমনকী, ২০০৯, ’১০, ’১১, যখন বাংলাজুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া, সিপিএম জমানার অন্ধকার দিক নিয়ে তিতিবিরক্ত গোটা বাংলা, তখনও তো কোনও পরীক্ষার পর ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ‘এই বাংলা আমার নয়’ বলানো হয়নি, জেনে রাখুন, সহজেই বলানো যেত। কিন্তু এ কাজ ছিল রুচিবিরুদ্ধ।

পরের প্রসঙ্গে আসি। যে ছাত্রী বলছে, ‘এই বাংলা আমার নয়’, সে কি এটাও বলবে, ‘এই কন‌্যাশ্রী আমার নয়’, ‘এই সবুজ সাথী আমার নয়’, ‘এই রূপশ্রী আমার নয়’? যতগুলো স্কিম দিয়ে এখন বাংলায় মানুষের পাশে থাকছে সরকার, ওই মেয়েটির পরিবার, পরিজন, আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠরা ওই স্কিমগুলোর একটিরও সাহায‌্য নেন না, এমন কোনও হলফনামা দিতে পারবে? পারবে না, পারা সম্ভব নয়। এখনও সরকারি কাঠামোই ভাল, তার স্বীকৃতি দিচ্ছে কেন্দ্রের একাধিক রিপোর্ট এবং সমীক্ষাও।

[আরও পড়ুন: শালবনি হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট মুখ্যমন্ত্রীর, নাম দিলেন সদ্যোজাত শিশুর]

রাজ্যে বহু ভাল কাজ হচ্ছে। কিছু ব‌্যক্তির জন‌্য কিছু অভিযোগেরও অবকাশ থাকছে, সেটা এই সামাজিক কাঠামোয় দেশ, রাজ‌্য, যে কোনও দলেই থাকতে পারে। তাতে মূল ভাল কাজগুলো আড়াল করা যায় না। এ নিয়ে শাসক দল এবং বিরোধীদের আলাদা মত থাকতে পারে, বিবৃতির লড়াইও হতে পারে। দু’পক্ষের যুক্তি তুলনা করে মানুষ সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু, সদ‌্য উচ্চমাধ‌্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রীকে দিয়ে সরকার বিরোধী বিবৃতি ছড়িয়ে যারা সস্তা স্বার্থ‌সিদ্ধির চেষ্টা করে, সেই বিরোধীরা যে কতটা দেউলিয়া, তা কি নতুন করে প্রমাণ করতে হবে?

বাম পরিবারের সদস‌্যরাও যেমন পাস করছেন, তৃণমূল পরিবার থেকেও তো পাস করছে, কৃতীর তালিকায় থাকছে। এখানে সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীর ফলাফলের কৃতিত্বটাই শেষ কথা, রাজনীতি জড়িয়ে দিয়ে প্রচারে ঠেলে দেওয়াটা অন‌্যায়। মেয়েটি নিশ্চয়ই প্রচার পেল। কিন্তু তাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল অকারণ বিতর্কের মধ্যে। এখন তার বিরুদ্ধে এবং তার পরিবারকে নিয়ে যেসব পোস্ট ঘুরছে, তার সত‌্য-মিথ‌্যা যাচাই কেউ করতে যাবে না, মুখে মুখে চর্চা হবে। এটা ওই মেয়েটির প্রাপ‌্য ছিল না। যে বড়রা ওকে উৎসাহ দিচ্ছেন, তাঁদেরই উচিত ছিল ওকে এসবে না জড়াতে দেওয়া। বিরোধী পরিবারের কৃতী ছাত্রছাত্রী সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেবে, আর সরকার সমর্থক পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা সরকারের পক্ষে বিবৃতি দিতে থাকবে– এই অপসংস্কৃতিটা চাপিয়ে দেওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত, ভাবুন কমরেড, ভাবুক বিরোধীরা এবং ভাবুক মিডিয়াও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ