Advertisement
Advertisement
Adipurush Hanuman

বাপ রে বাপ! বাপ তুলতে ছাড়ে না স্বয়ং হনুমানও, ছোটরা কী শিখবে?

ওম রাউতের 'আদিপুরুষ'-এর দৌলতে যে হনুমান নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেন, তিনি যেন নেহাতই সস্তা হিন্দি সিনেমার নায়ক।

Whether young generation will be able to respect lord Hanuman? Adipurush dialogue raises controversial question | Sangbad Pratidin
Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:June 18, 2023 9:37 pm
  • Updated:June 18, 2023 9:37 pm

অরিঞ্জয় বোস:
“জয় হনুমান জ্ঞান-গুণ-সাগর।
জয় কপীশ তিহু লোক উজাগর ||”

পরমভক্ত হনুমানকে (Hanuman) আমরা জ্ঞানী ও গুনের সাগর হিসেবেই এতদিন বন্দনা করে এসেছি। প্রতিদিন যাঁরা হনুমান চালিশা পাঠ করেন, তাঁরা জানেন ভক্ত হনুমানের চারিত্রিক গুনাবলি। তিনি যেমন পরম ধার্মিক তেমনই পরম বীর। সেই হনুমানকে (Lord Hanuman) উপাসনা করার রেওয়াজ ভারতবর্ষে দীর্ঘদিনের। বঙ্গে না হলেও বহির্বঙ্গে বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারতের মানুষরা মন্ত্রের মতোই এই হনুমান বন্দনা ভক্তিভাবে আবৃত্তি করেন। হঠাৎই যেন হনুমানের সেই ছবিখানা বদলে গেলো। ওম রাউতের ‘আদিপুরুষ’-এর দৌলতে যে হনুমান নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেন, তিনি যেন নেহাতই সস্তা হিন্দি সিনেমার নায়ক। ভিলেনের মুখের ওপর সপাটে জবাব দিচ্ছেন। বলছেন, ‘কাপড়া তেরা বাপকা, তেল তেরে বাপকা, আগ ভি তেরি বাপকি, জ্বলেগি ভি তেরি বাপকি’- অর্থাৎ কাপড়, তেল, আগুন সবই যখন তোর বাপের তখন তোর বাপের জিনিসই জ্বলবে-পুড়বে।

Advertisement

সংলাপ রচয়িতা মনোজ মুনতাসিরের দাবি মৌখিক কথাবার্তায় এরকম সুরে আমরা তো এভাবে কথা বলেই থাকি। এছাড়া বড়রা যখন রামায়ণের গল্প শোনান, তখন বাচনভঙ্গি অনেকটা এরকমই হয়। তারই ছায়া পড়েছে তাঁর সংলাপে। তাই এই সংলাপে তিনি দোষের কিছু দেখছেন না। সংলাপ রচয়িতা যে নিজের সংলাপে (Hanuman Dialogue) দোষ খুঁজে পাবেন না তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংলাপ মুহূর্তের যে ক্লিপটি ভাইরাল হয়েছে তার নেপথ্যের হাততালিই জানিয়ে দিচ্ছে এই সংলাপ সিনেমার পরিভাষায় হিট। অর্থাৎ মনোজ তাঁর কাজটি যথার্থই করেছেন। কিন্তু, এই কাজ একটি গূঢ় প্রশ্নের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের। তবে কি হাততালি পাওয়ার জন্য যা ইচ্ছে তাই করা যায়? তাতে যদি কারওর চরিত্রহনন হয় তাহলেও কি পরোয়া করা হবে না? মনোজ যেভাবে তাঁর সংলাপকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তাতে যেন এই মনোভাবই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু, বিনোদনের বাজারে তা ফায়দা তুললেও সিনেমার আত্মাটিকেই কলুষিত করছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘ক্ষমা চাইতে হবে যোগী-হিমন্তদের’, আদিপুরুষ নিয়ে BJP’র মুখ্যমন্ত্রীদের তোপ শিব সেনার]

সিনেমা মাধ্যম হিসেবে যেমন জনপ্রিয় তেমনই তা কিন্তু জনমানসের সঙ্গে সম্পর্কিত। তা কখনই এমন ভাবনাকে বৈধতা দেয়না যা মানুষের অন্তর্নিহিত শুভবোধকে ব্যাহত করে। তার মানে কি সিনেমায় সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উঠে আসে না? নিশ্চই আসে। তবে সেই অন্ধকার দিকটাই সমাজের সবটুকু নয় তাও স্পষ্ট করে দেয় সিনেমা। ঠিক সেখানেই, এই সংলাপটি যেন কাঁটা হয়ে বিঁধছে অনেকের অন্তরে। কেননা ওই হাততালির নেশায় তা পাল্টে দিয়েছে সিনেমার মূল নৈতিক গতিবিধি। সত্যি বলতে, বাল্মীকি যে রামায়ণ রচনা করেছেন, সেখানে হনুমান সুবক্তা, সংষ্কৃতজ্ঞ ও বেদজ্ঞ পণ্ডিত। সুগ্রীবের সচিব হয়ে তিনি প্রথম ধরা দেন র্যাম ও লক্ষণের সামনে। পেশ করেন তাঁর বক্তব্য। যা শুনে শ্রীরাম এক লহমায় বুঝতে পারেন সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি অরণ্যমধ্যে এক বিশেষ মহাজন। লক্ষ্মণকে তাই তিনি বললেন, ‘তুমি এঁর সঙ্গে মিষ্ট কথায় আলাপ কর। ইনি যেরূপ কথা বললেন, ঋক্ যজুঃ ও সামবেদ জানা না থাকলে সেরূপে কেউ বলতে পারে না। ইনি নিশ্চয় বহুবার সমগ্র ব্যাকরণ শুনেছেন সেজন্য একটিও অপশব্দ বলেননি, এঁর মুখ চক্ষু, ললাট ভ্রূ প্রভৃতিরও কোনও বিকৃতি দেখা গেল না। ইনি সংক্ষেপে অসন্দিগ্ধভাবে যথাক্রমে শব্দসকল উচ্চারণ করেন, সমস্ত ধ্বনি যথাস্থান থেকে যথাযথ নির্গত হয়। এঁর বাক্য দ্রুত নয়, বিলম্বিতও নয়, শুনলে মনে আনন্দ হয়।”

অর্থাৎ একজন সংস্কৃত পন্ডিতের যা বৈশিষ্ট, হনুমান চরিত্রের মধ্যে তাই-ই প্রতিভাত। এই পন্ডিতের প্রতিই তো শ্রদ্ধায় ও সম্ভ্রমে নতজানু হয় মানুষ। কিন্তু, মনোজের তৈরি করা হনুমান সে সবের ধার তো ধারেইনি, উল্টে যেন রাজনৈতিক দলের আইটি সেলের ভাষায় পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। এতে কি হনুমানের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আসবে? মনে রাখতে হবে সিনেমা কিন্তু দেখছেন আট থেকে আশি সকলেই। বড়রা নয় হাসাহাসি করে বিষয়টি উড়িয়ে দেবেন, পন্ডিতরা নয় বাল্মীকি টেনে চুলচেরা তর্ক করবেন, কিন্তু ছোটরা! তারা কী শিখবে? তারা তো জানবে হনুমানের মতো জ্ঞান-গুণ-সাগরও ‘বাপ’ তুলে কথা বলে। পরদিন যখন তারা আবার হনুমান চালিশা (Hanuman Chalisa) পাঠ করবে, তখন কি একই রকম শ্রদ্ধার চোখে দেখতে পারবে হনুমানকে? এইখানেই বড় একটা ক্ষতি করে ফেলল ‘আদিপুরুষ’ (Adipurush)। এই ছোটরা যখন হনুমানের অনুকরণে নিজেদের বৃত্তেও বাপ তুলে কথা বলবে তা কি সমাজের জন্য খুব শোভনীয় কিছু দৃশ্য হবে? নাকি সেরকম কুৎসিত দৃশ্যই দেখতে চায় ভারতীয় সিনেমা? দুটোরই উত্তর, না। অর্থাৎ, ওম রাউত ও মনোজ মুনতাসির ব্যবসা করলেন বটে, তবে কালি ছিটিয়ে দিলেন বাল্মীকি রামায়ণে, একই সঙ্গে সিনেমার আত্মাতেও। হনুমান অবশ্য তার জন্য ‘বাপ তুলে’ তাঁদের কটূক্তি করবেন না। এই যা রক্ষে!

[আরও পড়ুন: ‘আদিপুরুষ’ বিতর্কের জের, নেপালে নিষিদ্ধ হল ভারতীয় সিনেমা!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ