ছবি: ফেসবুক
সোশাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে ‘নজরিয়া কি মারি’-র রিলসে। ‘হীরামাণ্ডি’ এবং ‘পঞ্চায়েত ৩’র গানের সাফল্যের পরে মুম্বই থেকে ফোনে ধরা দিলেন সঙ্গীতশিল্পী মধুবন্তী বাগচী। কথা বললেন শম্পালী মৌলিক।
কলকাতার মেয়ে এখন তো একটু বেশিই মুম্বইয়ের। সেটা কি ওখানে কাজ বেশি বলে?
এটা একটা সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল। ২০১৭ সালের শেষ দিকে ঠিক করেছিলাম ন্যাশনাল লেভেলে কাজ করে দেখি। বিরাট কোনও প্ল্যান ছিল না। মনে হয়েছিল মুম্বইয়ে এলে ভালো হতে পারে। কলকাতায় ২০১৪ থেকে ২০১৭ অবধি গান গেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পরিচিত বৃত্তটা ছাড়িয়ে এমন একটা জায়গায় গেলে আনন্দ হবে, যেটা এভার এক্সপ্যানডিং, এভার চেঞ্জিং, সেই কারণেই মুম্বইয়ে আসা।
সম্প্রতি সঞ্জয়লীলা বনশালির ‘হীরামাণ্ডি’-তে আপনি গেয়েছেন। আপনার ‘নজরিয়া কি মারি’ খুব জনপ্রিয় হয়েছে। তবে গানটা একটু পরে ধরেছে। তখন প্রচুর মানুষ এই গানের সঙ্গে রিলস বানাতে শুরু করে। সব মিলিয়ে কেমন অনুভূতি?
খুব স্পেশাল, একটা বড় কারণে। আপামর জনসাধারণের কাছে ক্লাসিক্যাল মিউজিক একটু ধরাছোঁয়ার বাইরে, এমন ইমেজ রয়েছে। যে ‘কমন মাস’ এগুলো বোঝে না। এগুলো সমঝদারদের জন্য। তার ওপর এই রকম হাইলি অ্যাপ্রিশিয়েটেড এবং পাবলিসাইজড ওয়েব সিরিজ, যেখানে সব এরকম ট্র্যাডিশনাল গান রাখা হয়েছে, তার মধ্যে ‘নজরিয়া কি মারি’ সবচেয়ে বেশি ট্র্যাডিশনাল। কোনও খাদ নেই গানটায়। প্রপার ঠুমরি এবং ইন্সট্রুমেন্টগুলোও তেমন। লিরিকও সে রকম। এমন একটা গানকে মানুষ যে এই পর্যায়ে গ্রহণ করতে পারে, সেটাই বড় ব্যাপার মনে হয়েছে।
অন্য গানগুলোর প্রপার ডান্স সিকোয়েন্স রয়েছে, এটার সঙ্গে সেভাবে নয়। সোশাল মিডিয়া ট্রেন্ডের সঙ্গে ক্লিক করে গিয়েছে, গানটা হিট করার সেটাও একটা কারণ।
এটার সঙ্গে নাচ থাকলেও, খুব গৌণভাবে। ঠিকই বলেছ, এ খুব অদ্ভু তভাবে হয়েছে। বাকি গানগুলো সবকটাই লাইট ক্লাসিক্যাল ধাঁচের। আমি যখন স্যরকে (সঞ্জয়লীলা বনশালি) প্রথম মিট করতে গিয়েছিলাম ঠুমরিই গেয়েছিলাম। স্যর বলেছিলেন, ‘তোমার যা মনে আসে, একটা ঠুমরিই গাও।’ যখন ‘হীরামান্ডি’-র জন্য সিটিং হচ্ছিল, স্যর আমাকে বলেন, ‘এই গানটা তুমিই গাইবে। তোমারই জন্য এটা। তুমি যেভাবে গাও, চোখ বন্ধ করে সেইভাবে গেয়ে দাও।’ ইনফ্যাক্ট, এখন শ্রোতারা যে গানটা শুনছে, ওটা স্ক্র্যাচ ছিল। তখন ট্র্যাক সেভাবে ঠিকই হয়নি, শুধু তবলা আর তানপুরা, আর আমি এমনিই গেয়েছিলাম। সাধারণত, একটা স্ক্র্যাচ হওয়ার পর যখন আরেকবার ট্র্যাক হয়, সিঙ্গারকে স্যর আরেকবার গেয়ে দিতে বলেন। আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। স্ক্র্যাচটাই স্যর ফাইনালি নিয়ে নেন।
‘সুকুন’ বলে একটা নন-ফিল্ম অ্যালবামের জন্য আপনি সঞ্জয়লীলা বনশালির সঙ্গে প্রথম কাজ করেছিলেন। সেই আলাপই কি রিভাইভ করল?
উনি তখন আমাকে একটা গানের জন্য ডেকেছিলেন। ওঁরই কম্পোজিশন, ‘সিবা তেরে’ বলে গানটার জন্য একজনকে নতুন ফিমেল ভয়েস খুঁজ ছিলেন। ক্লাসিক্যাল বা এই ধরনের মিউজিকের প্রতি ওঁর খুব ঝোঁক রয়েছে। সেই থেকে চেনাজানা। তার পর স্যরের ওখানে এমনিও গিয়েছি। মাঝে কলকাতায় এসেছিলাম। মিষ্টি নিয়ে ফিরলাম সবার জন্য, গেলাম স্যরের স্টুডিওতে। ওঁর সঙ্গে প্রচুর গল্প করা যায়। অনেক কিছু জানেন, আর প্রচুর গল্প আছে ওঁর কাছে (হাসি)। এই ভাবেই কথায় কথায় বলেন যে, ‘হীরামান্ডি’ করছেন আর আমাকে গাইতে হবে। এটা আমার কাছে বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। এর বেশি কিছু জানতাম না তখন।
এবারে ‘পঞ্চায়েত সিজন ৩’-তেও আপনার গান ‘এক কাহানি’, সেটার প্রতিক্রিয়াও দারুণ।
হ্যাঁ, ‘পঞ্চায়েত’ ওভারঅল সিরিজ হিসাবেই মানুষের মন জয় করেছে। ছোটবড় সব চরিত্র, লিরিসিস্ট, এমনকী, যার দুই সেকেন্ডের স্পেশাল অ্যাপিয়ারেন্স, সেও খুব ভালোবাসা পেয়েছে। আমরা তো অনলাইনেই দেখতে পাই, স্বানন্দের (কিরকিরে) ছোট্ট একটা ক্লিপই কেমন ভাইরাল হয়েছে! স্বানন্দ নিজেও বুঝতে পারেনি এমন হবে। আমারও কাজ করে ভালো লেগেছে।
আর কোনও হিন্দি কাজের কথা চলছে?
কিছু বড় প্রোজেক্ট ফাইনাল হয়ে রয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না, একেবারে আসার মুখে, বলা যায় না। আসলে বলিউডে শেষ মুহূর্তে যা কিছু বদলে যেতে পারে। ইনফ্যাক্ট, ‘হীরামান্ডি’-তে আমার দুটো গান ছিল। লাস্ট মোমেন্টে কপিরাইট ইস্যুর কারণে একটা রাখা যায়নি।
ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা, সেখান থেকে গানে এলেন কীভাবে?
গান ছোটবেলা থেকে শিখেছি। তখন কী হব, না হব কিছুই ঠিক ছিল না। বাড়ি থেকে কেউ কখনও বলেনি, তোমাকে গায়িকা হতে হবে। সেটাকে কেউ খুব একটা এনকারেজও করেনি। আর এই পেশায় তো প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা। আমি পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো ছিলাম ফলে বাবা-মায়ের ভাবনা ছিল যে, অকারণে কেন ঝুঁকি নেব। আর এই পেশায় অনেক স্ট্রাগল। যদিও আমি স্ট্রাগল মনে করি না। এই জার্নিতে উত্থান-পতন থাকবেই, সে তুমি যতই ভালো হও। এক-একদিন সকালে উঠে মনে হবে, আমি কি ইরেলিভ্যান্ট হয়ে গেলাম? আমার গলা কি কারও পছন্দ হচ্ছে না? সেলফ ডাউট যে কোনও শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সেটা থাকবেই। আর শিল্পীকে প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে। নরমাল লাইফস্টাইলে এটা থাকে না। টাকাপয়সা আসছে কি না ছাড়াও মানসিকভাবে এগুলো সামলানো সহজ নয়। প্রস্তুতি চাই। ওই সময় খুব হিড়িক ছিল, সবাই ইঞ্জিনিয়ার হবে। আর বাড়ির কথা খুবই শুনতাম। থার্ড ইয়ারের সময় থেকেই বুঝতে পারি এটা আমার জায়গা নয়। বিটেক করি, মাস্টার্স-ও করি যাদবপুর থেকে। কারণ ওই দুবছর সময় নিজেকে দিয়েছিলাম, যে মিউজিক ফিল্ডে কিছু করতে পারি কি না। ওই সময় অডিশন দিয়েছি, টুকটাক শো করেছি, বিভিন্ন লোকের সঙ্গে দেখাও করেছি। তখন পরিবারকে দেখাতে হত, ফিনানশিয়ালি নিজেকে সাপোর্ট করতে পারছি কি না। তারপর পুরোপুরি গান বেছে নিই।
বলিউডে কার সুরে গানের স্বপ্ন দেখেন?
অনেকের সঙ্গেই। এ আর রহমান স্যরের সঙ্গে কাজের স্বপ্ন দেখি। অনেক মিউজিশিয়ানের সঙ্গে কোলাবরেট করার খুব ইচ্ছে, সে ন্যাশনাল হোক বা ইন্টারন্যাশনাল। আমি নিজে এখন গান কম্পোজও করি। আলি শেট্টির সঙ্গে কিছু করার ইচ্ছে আছে, খুব প্রিয় আবিদা পারভিন। শিল্পা রাও চমৎকার গান করে। ইচ্ছে আছে কখনও ও যদি আমার সুরে কিছু গায়। ইটস হাই টাইম, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েরা এগিয়ে আসুক, গান গাওয়া ছাড়াও। এত বছর ধরে মেয়েরা শুধু গেয়েছে। টেকনিক্যাল সাইডে তারা আসুক। কম্পোজার হিসেবে তারা আসুক। নয়তো বড় একদিকে হেলে পড়া ইন্ডাস্ট্রি হয়ে যাচ্ছে। এখন ইয়ংগার জেনারেশন আসছেও। আমার এক বন্ধু ঊর্মিলা সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে ও অন্যতম সেরা। মেয়েরা এই ক্ষেত্রে আরও এলে ইন্ডাস্ট্রিতে একটা ভারসাম্য থাকে।
অভিনয়ের অফার পান না?
(জোরে হাসি) হ্যাঁ, অফার পেয়েছি। কিন্তু আমার অভিনয় ক্ষমতার ওপর অগাধ ভরসা, তাই নতমস্তকে প্রত্যাখান করতে বাধ্য হয়েছি।
২১ জুন (আজ) ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে। বিশেষ কোনও প্ল্যান?
আমার খুব পরিচিত, সিনিয়র মিউজিশিয়ান দীপক পণ্ডিত, ওঁর লেবেল লঞ্চ করছেন, ওই অনুষ্ঠানে যাব। উনি খুব স্নেহ করেন আমাকে। আরও অনেক বিশিষ্টজন আসবেন, একটা জমায়েত হবে (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.