Advertisement
Advertisement

Breaking News

Oscar

অস্কারে বাংলার মেয়ে সঞ্চারী, ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারার্স’ নিয়ে কী বললেন ছবির সম্পাদক?

লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সংবাদ প্রতিদিনকে সাক্ষাৎকার দিলেন সঞ্চারী।

Exculisve interview of Sanchari Das Mollick on the elephant whisperers| Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:March 17, 2023 2:56 pm
  • Updated:March 17, 2023 2:57 pm

এবারের অস্কারে তিনি-ই কলকাতা-কানেকশন। ‘দ‌্য এলিফ‌্যান্ট হুইসপারার্স’-এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন সঞ্চারী দাস মল্লিক। সুদূর লস অ‌্যাঞ্জেলেস থেকে ফোনে ধরা দিলেন তিনি। কথা বললেন শম্পালী মৌলিক

অস্কারে এবারে ভারতের জোড়া জয়। ফল ঘোষণার পরেই গত সোমবার বাঙালি-যোগ খুঁজতে প্রায় মরিয়া ছিল কলকাতা মিডিয়া। শৌনক সেনের ‘অল দ‌্যাট ব্রিদস’ নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তামাম সিনেপ্রেমী। সে আশা পূর্ণ না হলেও, ৯৫তম অ‌্যাকাডেমি অ‌্যাওয়ার্ডস-এর কলকাতা-কানেকশন বেশ জোরালো, বোঝা গেল সঞ্চারী দাস মল্লিকের নাম প্রকাশ্যে আসতেই। ‘দ‌্য এলিফ‌্যান্ট হুইসপারার্স’ ডকুমেন্টারি শর্ট বিভাগে সেরার শিরোপা পেয়েছে। তারই সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন বঙ্গকন‌্যা সঞ্চারী। সত‌্যজিৎ রায়ের পর তিনি দ্বিতীয় বাঙালি যিনি অস্কার ছুঁলেন। সঞ্চারী বেভারলি হিলসে সশরীর উপস্থিত ছিলেন পরিচালক কার্তিকি গনজালভেস ও প্রযোজক গুনীত মোঙ্গার সঙ্গে। অস্কার ঘোষণার দু’দিন পরে তঁাকে ফোনে ধরা গেল। লস অ‌্যাঞ্জেলেসে তখন সকাল সাতটা। ঝরঝরে বাংলায় তিনি কথা বললেন। প্রশ্ন ছিল, সার্চ ইঞ্জিনে তাঁর নাম এখন জনপ্রিয়তার তালিকায় প্রথম সারিতে। জানেন কি? ‘না, আমার কোনও আইডিয়াই নেই। আমি তো এখন লস অ‌্যাঞ্জেলেসে। তবে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া যদি বলেন, আই ওয়াজ শকড। আমরা তো হল-এ ছিলাম, এত চেঁচালাম সবাই আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল। যে এত আওয়াজ কেউ করতে পারে (হাসি)!’ দেশ থেকে কেমন ফোন পেলেন? তিনি বললেন, ‘সব পুরনো বন্ধুরা ফোন করেছে। স্কুলের বন্ধুরা মেসেজ করেছে, অভিনন্দন জানিয়েছে। প্রচণ্ড ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে সবাই।’ যাঁরা ‘দ‌্য এলিফ‌্যান্ট হুইসপারার্স’ দেখেছেন তাঁরা জানেন, পুরো তথ‌্যচিত্রটাই ভালবাসায় মোড়া। মুদুমালাই ন‌্যাশনাল পার্কের প্রেক্ষাপটে এই ছবি। এক আদিবাসী দম্পতি বোম্মান আর বেলি, অরণ‌্য-প্রান্তরে দু’টি অনাথ হস্তীশাবক রঘু আর আম্মুকে কীভাবে শুশ্রূষায়, যত্নে আগলে রাখে সেই ছবি দেখায় এই তথ‌্যচিত্র। প্রকৃতি আর প্রাণকে একসূত্রে গেঁথেছে ছবির প্রত্যেকটা ফ্রেম। প্রায় ৫০০ ঘণ্টার ফুটেজ থেকে কেটে একটু একটু করে এই দৃশ‌্যকাব‌্য বানিয়েছেন সঞ্চারী পরিচালকের তত্ত্বাবধানে। আর তাঁদের গাইড করেছেন ডগলাস ব্লাশ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: স্বরা ভাস্করের রিসেপশনে নেতাদের ভিড়, হাজির ছিলেন রাহুল, কেজরিওয়াল, অখিলেশ ]

সঞ্চারীর কথায়, রুটিন স্নান করা, খাওয়া ছাড়া হাতিরা তো যখন যা খুশি করতে পারে, ওরা খেলেও। তাই ক‌্যামেরা চালু রাখতে হত। ফলে বেশি করে ফুটেজ তোলা হয়েছিল। সঞ্চারীর মা শুভা দাস মল্লিক নিজেও প্রখ‌্যাত ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার। সঞ্চারীর এটাই প্রথম তথ‌্যচিত্র, তুলনায় ফিকশন এবং বিজ্ঞাপনের কাজ বেশি করেছেন। “শুরু হয়েছিল ‘কুইকগান মুরুগান’ দিয়ে। অ‌্যাসোসিয়েট ছিলাম। তারপর ‘শানদার’-এর কাজ করেছি। এছাড়া মারাঠি ছবি ‘নাল’-এর কাজ করেছি, যেটা ন‌্যাশনাল অ‌্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। ওটা আমার হাজব‌্যান্ড (সুধাকর ইয়াক্কান্তি) পরিচালনা করেছেন।” প্রসঙ্গত, ‘সাইরাত’-এর সিনেমাটোগ্রাফি সুধাকরের করা। সঞ্চারী ক্লাস নাইন থেকে কলকাতায়। লোরেটো হাউস, ক‌্যালকাটা ইন্টারন‌্যাশনাল স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স এবং এফটিআইআই-এ তাঁর পড়াশোনা। নিজেই জানালেন সে কথা। সঞ্চারীর দাদু (মনোজেন্দু মজুমদার) সত‌্যজিৎ রায়ের সমসাময়িক ছিলেন। স‌ত‌্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, হরিসাধন দাশগুপ্ত প্রমুখর সঙ্গে তিনি ‘ক‌্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির’ অন‌্যতম ফাউন্ডিং মেম্বার ছিলেন। বোঝাই যায়, সিনেমা সঞ্চারীর অস্থি-মজ্জায়। হেসে বললেন, ‘হ্য়াঁ, ছোটবেলা থেকেই। মনে আছে, ছোটবেলায় মা-বাবা ফিল্ম ফেস্টিভ‌্যালে যখন গিয়েছেন, আমাকেও নিয়ে যেতেন। তখন থেকেই অনেক ছবি দেখেছি। ছোট থেকেই সিনেমা নিয়ে ভাবা, কথা বলার বিষয়টা ছিল।’ অস্কারে ‘দ‌্য এলিফ‌্যান্ট হুইসপারার্স’-এর জয় এক অর্থে নারীশক্তির জয়। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই সঞ্চারী বললেন, ‘হ্যাঁ, একদম। গুনীত অনেকদিন ধরে কাজ করছে। একটু একটু করে বলিউডে জায়গা করেছে। এই যে অস্কারে পৌঁছনোটাই তো বড় কথা। শুধু ভাল ছবি করাটাই তো যথেষ্ট নয়। গুনীত সেই রাস্তাটা তৈরি করেছে বলা যায়। আর কার্তিকি প্রচণ্ড ডেডিকেটেড। বিশ্বাস করেছিল যে ছবির গল্পটা আমরা এমন করেই বলব। দু’বছর ধরে লেগে ছিল। লড়াই করেছে নিজের ভয়েস-এর জন‌্য। সেটা অত‌্যন্ত প্রশংসাযোগ‌্য।’

Advertisement

মুদুমালাই কি যাওয়ার সুযোগ হয়েছে? সঞ্চারীর আক্ষেপ, “আমাকে কার্তিকি অনেকবার বলেছিল, চলো, চলো হাতিদের সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু এডিটিংয়ের ডেডলাইনের চাপে তখন যাওয়া হয়নি। এবারে আমরা বাড়ি ফিরে যাবই।’ দক্ষিণ কলকাতায় রয়েছে তঁাদের বাড়ি। তবে কলকাতায় কবে আসবেন, এখনও ঠিক নেই। একমাস লস অ‌্যাঞ্জেলেস থেকে দেশে ফিরবেন। মুম্বই তাঁর এখনকার বাসস্থান। ফিরে ‘নাল টু’-এর এডিটিং শেষ করবেন। বাংলা ছবি দ‌্যাখেন? উত্তরে সঞ্চারী জানালেন, “ছোটবেলায় অনেক দেখেছি। সত‌্যজিৎ রায়ের সব ছবি, ঋত্বিক ঘটকের ছবি দেখেছি। ফেলুদা, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’ দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। কিন্তু এখন অতটা দেখা হয় না। মা মাঝে মাঝে বলে, এটা ভাল হয়েছে, ওটা ভাল হয়েছে, দেখো। প্রাইম ভিডিও-তে এলে তবে দেখা হয়।” ভারতীয় প্রোডাকশনের ছবির এই জয় এবং সঞ্চারীর সাফল‌্য অনেক তথ‌্যচিত্র করিয়েদের স্বপ্ন ছোঁয়ার সাহস জোগাবে নিঃসন্দেহে।

[আরও পড়ুন: ‘ভারত থেকে সব ভুলভাল ছবি পাঠানো হচ্ছে!’, অস্কার নিয়ে বিস্ফোরক এ আর রহমান]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ