Advertisement
Advertisement

Breaking News

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

রজত জয়ন্তী বর্ষে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, উদ্বোধনী ছবিতে সত্যজিৎ-স্মরণ

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায় ও তুলসী চক্রবর্তীকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে অনুষ্ঠানে।

KIFF will be started with 'Goopy Gyne Bagha Byne' of Satyajit Ray
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:November 1, 2019 7:34 pm
  • Updated:November 1, 2019 7:34 pm

কলকাতা ফিল্মোৎসবের পঁচিশ বছর শীতের হাওয়া বইছে এখন শহরে। গায়ে গরম পোশাক না উঠলেও মগজ ও হৃদয় উষ্ণ করার রসদ তৈরি। প্রস্তুতি তুঙ্গে।

এবার কলকাতা ফিল্মোৎসবের পঁচিশ বছর অর্থাৎ রজতজয়ন্তী। গত বছর উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন এই জয়ন্তী বছরকে তিনি আরও উজ্জ্বল আরও বর্ণময় করে তোলার পরিকল্পনা নেবেন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে যুবভারতীতে নিয়ে যাবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে। কিন্তু ইতিমধ্যে রাজ্যের রাজনীতির পরিস্থিতিতে কিছু বদল ঘটে যাওয়ায় জয়ন্তী বর্ষের উদ্‌যাপনে সেই উদ্যম ও উদ্যোগের কিছু অভাব দেখা গিয়েছে। উদ্বোধন হবে নেতাজি ইন্ডোরেই। অমিতাভ বচ্চন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় হয়তো বা তিনি কিছুটা অনিশ্চিত। কিন্তু আসছেন শাহরুখ খান, রাখি ও মেঘনা গুলজার। কলকাতার অনেকে মঞ্চে থাকলেও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও অনিশ্চিত। তবে তিনি একদিন ‘মাস্টার ক্লাস’ নেবেন এটা নিশ্চিত। সমাপ্তি সন্ধ্যায় এবার পুরস্কার অনুষ্ঠান হবে নন্দনে, নজরুল মঞ্চে নয়। ওই সন্ধ্যায় বিশেষ অতিথি শাবানা আজমি। ওঁর উপস্থিতির কারণেই তথ্যচিত্র বিভাগে বাবা কাইফি আজমিকে নিয়ে তোলা ‘কাইফিনামা’‑র এক বিশেষ প্রদর্শনী হবে উৎসবে। সত্যজিৎ রায় স্মৃতি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন কুমার সাহানি।

Advertisement

উৎসবের একটি বড় আকর্ষণ হবে এই ডিজিটাল সময়ে প্রায় হারিয়ে যাওয়া ৩৫ মিমি প্রোজেক্টরের সাহায্যে শতবর্ষকে স্মরণ করতে বেশ কয়েকটি পুরনো ছবির প্রদর্শনী। হবে শিশির মঞ্চ আর টালিগঞ্জের শতবার্ষিকী ভবনে। যার মধ্যে থাকবে ভানু-জহর-তুলসী চক্রবর্তীর কয়েকটি ছবির সঙ্গে বাসু চট্টোপাধ্যায়, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়, মৃণাল সেন ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর নতুন ছবিও। এই বিভাগের তদারকি করতে শিবেন্দ্র দুঙ্গারপুরও আসছেন।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: ‘বিকৃতকাম’ অনু মালিক, সুরকারকে তোপ গায়িকার ]

যে কোনও উৎসবের প্রাণ ফিল্ম ও ফিল্ম জগতের অতিথি। এ বছর সে ব্যাপারে তেমন ঘাটতি নেই। যদিও গোয়া-ইফির সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুম্বইয়ের ‘মামি’ যোগাযোগের সূত্রে বেশ কিছু ছবি ও মানুষকে নিজেদের দিকে ইতিমধ্যেই টানতে পেরেছে। কলকাতা উৎসব সীমিত সামর্থ্যেও কিন্তু খুব একটা পিছিয়ে নেই। এবার আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডে থাকছেন চেক রিপাবলিকের প্রবীণ পরিচালক দুসান হানাক। ইরানের প্রযোজক এহসান খোসবখত, জর্জিয়ার তরুণী পরিচালক অ্যানা উরুসজাদে, আবু ধাবির ইন্তিশাল তামিনি ও ওড়িয়া অভিনেত্রী বিজয়া জেনা। ভারতীয় ছবির প্রতিযোগিতায় ছবি বিচারের দায়িত্বে আছেন আফগানিস্তানের পরিচালক রয়া সাদাত, ফিলিপিন্সের তরুণ পরিচালক জেফরি জেতুরিয়ান, মিশরের আজ্‌জা আল হোসেইনি। এবং ‘নেটপ্যাক’ বিভাগের জুরি হবেন হানা ফিশার, স্পেনবাসী বাংলাদেশি কাজি আবদুর রহিম এবং কলকাতার পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতরাং জুরি লাইন আপ বেশ ভালই।

প্রতিযোগিতা বিভাগে থাকা পনেরোটি ছবির পরিচালক-অভিনেতারা আসছেন। বাস্তব সত্যিটা হল প্রতিযোগিতা বিভাগে এবার মিক্সড ব্যাগ বলতে পারা যায়। কারণ প্রথম শ্রেণির সব উৎসবই শেষ, সুতরাং এই বিভাগে উন্নতমানের ছবি পাওয়ার সুযোগটাই কম থাকে। বরং সেই তুলনায় আন্তর্জাতিক বিভাগে নামী পরিচালক ও পুরস্কৃত ছবির সংখ্যা অনেক বেশি। জার্মান আভা গার্দ পরিচালক আলেকজান্ডার ক্লুগে এবং ইতালিয়ান মাস্টার বার্নাডো বার্তোল্লুচিচর হাফডজন করে ছবির দিকে নজর রাখা যাবে। তারপর লভ ডিয়াজের ফিউচারিস্টিক ছবি ‘দ্য হল্ট’, ব্রিটেনের লো-পেড শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে তোলা কেন লোচে‑র ‘সরি উই মিস্‌ড উই’, অভিনেত্রী মা-মেয়ের ভালবাসা-ঘৃণায় মেশানো সম্পর্ক নিয়ে জাপানি পরিচালক হিরোকাজু কোরে-ইদার প্রথম ফরাসি ভাষার ছবি ‘দ্য ট্রুথ’, পেদ্রো আল মোদোভারের আত্মকথনমূলক ছবি ‘পেন অ্যান্ড গ্লোরি’, লেডি লি’‑র ভয়ংকর কিশোর ভায়োলেন্স ছবি ‘লা মিজারেবল’, বিদেশের একাধিক উৎসবে প্রশংসিত আফগানি ছবি ‘কাবুল, দ্য সিটি অফ উইন্ড’, জায়রো বুস্তামান্তের ‘দ্য উইপিং ওম্যান’, তিউনিশিয়ার ছবি মরিয়ম তৌজানির ‘আদম’, আতম ইগুয়ানের ‘গেস্ট অফ অনার’, জ্যাক বেনোয়ার ‘ক্যাসানোভা-লাস্ট লভ’, দার্দেনেভাইদের ‘ইয়ং আহমেদ’, সুন্দরী অভিনেত্রী গোল্ড সিফতেহ ফারহানি অভিনীত ‘আরব ব্লুজ’, কোস্টা গাভ্রাসের সাম্প্রতিক গ্রিক রাজনীতির সংকট নিয়ে তৈরি ‘অ্যাডাল্টস ইন দ্য রুম’, কানজয়ী এলিয়া সুলেইমানের ‘ইট মাস্ট বি হেভেন’ বা ব্রুনো দ্যুমের ‘জঁ : জোয়ান অফ আর্ক’ দেখার পর দর্শকের আফশোস থাকার নয়। যেমন থাকছে ইন্ডিয়ান প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ভাষার ১২ টি ছবি।

[ আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘কণ্ঠ’, উচ্ছ্বসিত জয়া ]

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একবারেই বিপরীত ভাবনার দু’টি বাংলা ছবি গৌতম হালদারের ‘নির্বাণ’ ও রনি সেনের ‘ক্যাট স্টিক’ বড় চমক এবং আঘাতও হতে পারে। কারণ বিষয়ের দিক থেকেও এই ছবিটি যেমন এই শহরের কিছু প্রান্তিক তরুণ সম্প্রদায়ের আসা ও হতাশার গল্প শোনায় ও দেখায়, তেমনি সেই দেখানো এবং শোনানোটাও বেশ তীব্র ও তীক্ষ্ণ। এবার উদ্বোধনী সন্ধ্যায় বিশেষ অতিথি হচ্ছেন ‘টিনড্রাম’ খ্যাত জার্মান পরিচালক হ্বোলকর শোলনডর্ফ এবং কানে গোল্ডেন নাম জয়ী ‘সেক্স-লাইফ অ্যান্ড ভিডিও টেপস’ ছবির অভিনেত্রী অ্যান্ডি ম্যাকডোয়েল। ওদের দু’টি ছবি দেখানোরও চেষ্টা চলছে। এবারের ভারতীয় ছবির প্রতিযোগিতায় জায়গা পেয়েছে পনেরোটি ছবি। যার মধ্যে মালায়লম, হিন্দি, মারাঠি ও বাংলায় ভাষায় তিনটি করে। বাংলার দু’টি-গৌতম হালদারের ‘নির্বাণ’ ইন্দ্রাশিস আচার্যর ‘পার্সেল’ ও কৃষ্ণেন্দু দত্তর ‘ডুবুরি’। বাকি তিনটি হল ওড়িশার ‘পাটনাগড়’, কন্নড়ে ‘গঙ্গোদক’ এবং মধ্যপ্রদেশের বাঘেলি ভাষায় ‘অ্যাটলাস’।

টালিগঞ্জের অভিনেত্রী শ্রাবন্তী হবেন উদ্বোধনী সন্ধ্যায় থালি গার্ল। উদ্বোধনী ছবি সত্যজিৎ রায়ের ক্লাসিক ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। যারও সুবর্ণ জয়ন্তী এ বছরটা। আট তারিখ উৎসব উদ্বোধনের পরের সাতটা দিন নতুন সাজে সজ্জিত নন্দন- এই কলকাতা শহর ব্যস্তই থাকবে ফিল্মোৎসব নিয়ে। উষ্ণতার চাদর গায়ে উঠবে, হয়তো তর্ক বা সিনেমা নিয়ে নতুন কোনও ভাবনাও শুরু হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ