সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল তিনি পা দিয়েছেন একশো বছরে। আজ, সোমবার ১ মে ১০৪তম জন্মদিন কিংবদন্তি মান্না দে’র (Manna Dey)। তাঁর মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে এক দশক। কিন্তু ব্যক্তির প্রয়াণ হলেও শিল্পীর মৃত্যু নেই। আর তাঁর মতো শিল্পীর ক্ষেত্রে তো অমরত্বই একমাত্র ‘ডেস্টিনেশন’। সেই সুরেলা কণ্ঠের অনুরণন আজও একই ভাবে রয়ে গিয়েছে মানুষের মনে। যুগ বদলেছে। গ্রামোফোন থেকে টেপ রেকর্ডার, তারও পরে সিডি-ডিভিডি হয়ে এই ডিজিটাল যুগেও ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ভেসে বেড়ায় মান্নার অনুপম স্বরের জাদু!
অথচ গায়ক হওয়াই জীবনের লক্ষ্য ছিল না তাঁর। সুরকার হিসেবে কাজ করা শুরু করেছিলেন। গানও গাইতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন কাজটা করবেন তা নিয়ে দ্বিধা ছিল। যদি শেষ পর্যন্ত সুরকার হওয়ার দিকেই ফোকাসটা ধরে রাখতেন তাহলে হয়তো আমরা এক অসাধারণ সুরকারকে পেতাম। কিন্তু হারাতাম এক কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পীকে।
গান শেখা শুরু কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে’র কাছে। গত শতকেক দুই ও তিনের দশকে মাতিয়ে রেখেছিলেন এই বিখ্যাত গায়ক। পরে ওস্তাদ দবির খান, ওস্তাদ আমন আলি খান ও ওস্তাদ রহমান খানের কাছে চলে তালিম নেওয়া। মূলত কৃষ্ণচন্দ্র দে বা শচীন দেববর্মণের মতো প্রবাদপ্রতিমদের সহকারী সুরকার হিসেবেই তাঁর কেরিয়ারের সূচনা। স্বাভাবিক ভাবেই নিজের মনের মধ্যেও গুনগুন করে উঠত নতুন নতুন সুর। আর সেই কারণেই তাঁর মনের মধ্যে দ্বিধা ছিল কোন পথে যাবেন।
সুপ্রীতি ঘোষ মান্না দে’র সুরে গান গাইলেন ১৯৪২ সালে। পাশাপাশি ‘বীরাঙ্গনা’, ‘তমসা’র মতো বহু হিন্দি ছবিতেও সুর দিলেন তিনি। তবে সুরকার হিসেবে আবির্ভাব ঘটলেও গান গাওয়াও চলছিল সমানতালে। প্লেব্যাক করেও শুরুতেই প্রশংসা কুড়োতে শুরু করেছিলেন। সুরাইয়ার সঙ্গে ডুয়েট গাইলেন। এরপর ১৯৪৩ সালে ‘উপর গগন বিশাল’ গানটি গেয়ে পেলেন জনপ্রিয়তাও। শেষ পর্যন্ত সুরকার শংকর-জয়কিষেণের পরামর্শেই সুর করা থেকে ক্রমে সরে এসে প্লেব্যাকেই ফোকাস করেছিলেন তিনি। জনপ্রিয় সুরকার জুটি তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, দুই নৌকোয় একসঙ্গে পা না দেওয়াই ঠিক কাজ হবে। তাঁদের সেই পরামর্শ শিরোধার্য করে মান্না দে চলে এলেন প্লেব্যাকের দিকে।
সারা জীবনে গেয়েছেন অসংখ্য গান। কেবল হিন্দি বা বাংলা তো নয়। মারাঠি, কন্নড়, মালয়ালম প্রভৃতি ভাষাতেই গান গেয়ে গিয়েছেন তিনি। আর সব ভাষাতেই মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাকে। সেই মুগ্ধতার রেশ আজও কাটেনি। নতুন প্রজন্মের প্লে লিস্টেও অনায়াসেই জায়গা করে নেয় তাঁর গান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম- মান্না ম্যাজিক অব্যাহত। শতবর্ষ পেরিয়েও তিনি চিরযুবা, চিরনবীন। তাঁর কণ্ঠস্বরের মায়া অব্যাহত, একই রকম। যেমন ছিল কয়েক দশক আগে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.