দুলাল দে-র “অরণ্যর প্রাচীন প্রবাদ” ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে শিলাজিৎকে। একান্ত সাক্ষাৎকারে মনের কথা খোলসা করলেন গায়ক-অভিনেতা। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
ফিল্ম কেরিয়ারের পঁচিশ বছরে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত ৫০তম ছবিতে আপনি হলেন সারপ্রাইজ প্যাকেজ। কেমন ফিডব্যাক?
শিলাজিৎ: ছবির প্রচার সেভাবেই হয়েছে। এবং তাতে সুবিধেই হয়েছে, আমার উপস্থিতির কথা সেভাবে জানতে পারেনি কেউ। লোকে দেখে সারপ্রাইজ্ড হয়েছে এবং প্রশংসা পাচ্ছি। আমার থেকে ‘রক্তিম’-এর চরিত্রটা অনেকটা আলাদা এবং সেটাই আমার অ্যাডভান্টেজ ছিল।
এমন একটা ছবির অফার পেয়ে অবাক হয়েছিলেন?
শিলাজিৎ: ওঁদের ৫০তম ছবি– সে বিষয়ে কিছুই জানতাম না। শুনে ভাবলাম, বুম্বাদা-ঋতুর মাঝখানে আমি কী করব! কৌশিক তিরিশটা ছবি করে ফেলেছে। এতদিন পর ডাকছে যখন, বুঝেছিলাম গুরুত্বপূর্ণ রোল। তবে এই ছবির জন্য যে কৌশিকের মতো প্রথম সারির পরিচালক আমাকে চেয়েছে তাতে অবাক হইনি। আর আমাকে এতদিন কেন নেয়নি তাতেও অবাক হইনি। আমি আসলে কোনও কিছুতেই অবাক হই না। আমি আমার মতো করে কাজ করে গিয়েছি। পরিচালক বা প্রোডিউসারদের কাছে নিজের মার্কেটিং করিনি। অনেক কাজ আমি অর্থের জন্যই করি, বরং বলা যায় বেশিরভাগ কাজ অর্থের জন্যই করি। নিজের টার্মসে কাজ করি।
‘নীহারিকা’, ‘অযোগ্য’-র পর আসছে দুলাল দে পরিচালিত ছবি “অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ”। বেশ পরপর কয়েকটা ছবি এল আপনার অনেকদিন পর। পরিচালকরা কি মাঝে মাঝে ভুলে যান আপনার উপস্থিতি?
শিলাজিৎ: হতেই পারে। এখন যেভাবে কাজ হয় সেখানে পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে বিভিন্ন অভিনেতাদের রেগুলার যোগাযোগ থাকে। কমফোর্ট জোন তৈরি হয়ে যায়। আমাকে কম ডাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে ঋতুদা থেকে শুরু করে হরদা (হরনাথ চক্রবর্তী)– যার কথাই বলি না কেন, তারা মনে করেছে আমাকে দরকার, তাই ডেকেছে। কৌশিকও তাই। নিজেও করতে পারত। ও জানে কোন বলে স্ট্রাইক করতে হয়, কোনটা ছাড়তে হয়।
আপনি জানেন?
শিলাজিৎ: হ্যাঁ, অবশ্যই জানি। এমন অনেক গান আছে, আমাকে গাইতে অফার করা হয়েছে, আমি অন্য কাউকে রেফার করেছি যে বেটার গাইতে পারবে। সেসব নিয়ে আফসোসও করিনি কোনওদিন। অনেক কাজ করেছি, সেসব দেখে লোকে কাজ দেবে। না হলে এই ষাট বছর বয়সে এসে এমন একটা চরিত্র পেলাম!
আপনার ষাট ছুঁয়েছে নাকি?
শিলাজিৎ: এই হয়ে যাবে…
এখনও যুবক আছেন কীভাবে?
শিলাজিৎ:আমার মনটা এখনও ২৪-২৫ পেরিয়েছে বলে মনে করি না (হাসি)। আমি মিশিও অল্পবয়সিদের সঙ্গে। পঁয়তিরিশের ওপর যারা, তাদের সঙ্গে মিশতে পারি না। তাদের এত অভিযোগ, রাগ, সিনিসিজম।
কিন্তু আমরা যে সময়ে বেঁচে আছি, সিনিসিজম হওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি?
শিলাজিৎ: সোজা হিসাব। আমি বা তুমি পশ্চিমবঙ্গের আশিভাগ মানুষের মধ্যে পড়ি না। এই গরমের মধ্যে প্রতিদিন অন্ন জোটাতে যাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। এই যে নিশ্বাস নিচ্ছি, তাতেই আমি গ্রেটফুল। এই জীবনে যা চেয়েছি, তুমুল পেয়েছি।
২৫ বছরের কেরিয়ারে আপনার ফিল্মোগ্রাফি দেখলে, কোনও নির্দিষ্ট ধারার ছবির অভিনেতা হিসাবে লেবেল করা যাবে না।
শিলাজিৎ: তা যাবে না। আমি হরনাথ চক্রবর্তীর সুপারহিট ছবি ‘সঙ্গী’-তে কাজ করেছি। শিলাজিৎ বললে নাও চিনতে পারে। কিন্তু ‘সঙ্গী’ ছবির ‘রানা’ বললে এখনও লোকে চিনবে। আমার জীবনেও আমি তাই। কোনওরকম ট্যাগ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। নিজেও সব ধরনের ছবি দেখি, গান শুনি। বেকার জাজমেন্টাল হই না। মানুষের মেধা নিয়ে জাজমেন্ট দিই না।
দুলাল দে’র ছবির জন্য রাজি হলেন কেন?
শিলাজিৎ: ওকেও একই কথা বলেছিলাম। বাকিদের যা বলি। প্রথমেই জানতে চাই কতদিনের কাজ। যেভাবে অন্য ছবি নেগোশিয়েট করি এখানেও তাই।
“অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ”-এ আপনার চরিত্রটা কেমন?
শিলাজিৎ: এই ছবিতে আমি একজন সিআইডি অফিসার। তার শ্যালক খুব ট্যালেন্টেড। সে কোনওদিন গোয়েন্দাগিরি করেনি। কিন্তু তাকে আমি একটা কেসে জড়িয়ে, কেসটা সলভ করাই। সেই চরিত্রে জীতু, ছবিতে ওর নাম ‘অরণ্য’। ছবিটা করতে গিয়ে মাঝখানে প্রোডিউসারের কারণে সমস্যা হয়েছিল। ফাইনালি “অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ” রেডি। মুক্তি জুলাইয়ের প্রথম ভাগে। ট্রেলারটা দেখতেও বেশ ঝকঝকে লাগছে।
‘অযোগ্য’-তে বুম্বাদার সঙ্গে ভালো কেমিস্ট্রি। “অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ”-এ জীতুর সঙ্গে কেমিস্ট্রি কেমন? নায়িকাদের থেকে নায়কদের সঙ্গেই রসায়ন বেশি ভালো দেখছি এখন?
শিলাজিৎ: হাহাহাহা…। এগজ্যাক্টলি তাই। জীতুর সঙ্গেও আমার দারুণ কেমিস্ট্রি তৈরি হয়েছে। জীতু খুব বুদ্ধিমান অভিনেতা। ওর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। হি ইজ আ ডিরেক্টর মেটেরিয়াল। কোনওদিন পরিচালনায় এলে অবাক হব না।
তোমার দুঃখে আমি, আমার দুঃখে তুমি, এই আমাদের বেঁচে থাকা– শিলাজিতের বেঁচে থাকা কেমন?
শিলাজিৎ: মাঝে মাঝে নিজেকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়। কোনও কিছুই যেন আমাকে স্পর্শ করে না। বিয়োগ-বিচ্ছেদ, পাওয়া-না পাওয়া– সবেতেই আমি যেন নির্বিকার। আমার বাবা মারা গেল। আমার কান্না পেল না। ভাই এদিকে কাঁদছে। মৃতু্যটাকে মেনে নিলাম। আমার কাজ নিয়েও টেনশন করি না। আমার মাথায় খালি আমার গ্রাম গরগরিয়ার কথাই ঘোরে। ‘নৌকা’ বলে আমাদের যে সংস্থা, সেখানে যে আদিবাসী বাচ্চাদের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি, তাদের কথাই ভাবি।
নিজেকে কোন প্রসঙ্গে অযোগ্য মনে হয়?
শিলাজিৎ: বাঙালি সমাজে, আমি স্বামী হিসাবে ভীষণ অযোগ্য, ছেলে হিসাবে ভীষণ অযোগ্য, আর বাবা হিসাবে আমার একটাই দায়িত্ব ছিল সেটা হল ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা। ধী আজ পর্যন্ত যতটুকু যা-যা করেছে, তাতে আমার কোনও কনট্রিবিউশন নেই। আমার ছেলের গুণ আছে জানা সত্ত্বেও, কাউকে কোনওদিনও ওকে নিয়ে পুশ করিনি। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখাটাই একমাত্র দায়িত্ব ছিল, সেটাই পালন করেছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.