জয়দীপ রায়, দুবাই: ‘হাওয়া হাওয়াই গার্ল’-এর শেষবিদায়ের সাক্ষী থাকতে জনসুনামি আছড়ে পড়ল অনিল কাপুরের বাড়ির সামনে। সোমবার সকাল থেকে শ্রী-ভক্তদের সামাল দিতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে গিয়েছে মুম্বই পুলিশ। শ্রীদেবীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অনিলের বাড়িতে একে একে পৌঁছচ্ছেন বলিউড সেলিব্রেটিরা। সবাই আশা করছিলেন, পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী এদিন দুপুর দু’টোর মধ্যেই দুবাই থেকে মুম্বইয়ের বাড়িতে এসে পৌঁছবে শ্রীদেবীর মরদেহ। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে এদিন সকালে দুবাই পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শ্রীর ময়নাতদন্ত ও ডেথ সার্টিফিকেটের রিপোর্ট হাতে পেয়ে, তাতে মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে না দেখে দেহ ছাড়বেন না তাঁরা।
রবিবার ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ ময়নাতদন্ত হয়েছে দুবাইতে। তাতে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু এরপরও ফরেন্সিক বিভাগে অভিনেত্রীর রক্ত ও বিভিন্ন অঙ্গের টক্সিকোলোজি টেস্ট চলছে। বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু কি না, তা জানতেই এই টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুবাই পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এমনকী তাঁর রক্তে অ্যালকোহলের উপস্থিতিও টেস্ট করে দেখা হবে। এই টেস্টের রিপোর্ট পেলেই স্পষ্ট হবে শ্রীদেবীর মৃত্যুর কারণ। এরপর কিছু আইনি কার্যকলাপের পর দুবাইয়ের ভারতীয় দূতাবাস শ্রীদেবীর পাসপোর্ট বাতিল করার পরই তাঁর দেহ ছাড়বে।
[স্পিলবার্গের লোভনীয় অফারেও হলিউডে পা রাখেননি শ্রীদেবী]
দুবাইয়ে একটি পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে শনিবার রাতে আচমকা মৃত্যু হয় বলিউডের চাঁদনির। জুমেইরা এমিরেটস টাওয়ার হোটেলের শৌচাগারের বাথটবে ৫৪ বছরের শ্রীর হার্ট অ্যাটাক হয় বলে জানান তাঁর দেওর অভিনেতা সঞ্জয় কাপুর। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীর দেহ দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য রবিবার বিকালেই দুবাই পৌঁছে যায় অনিল আম্বানির চাটার্ড বিমান। প্রথমে কথা ছিল, রবিবার রাতে মুম্বই পৌঁছবে দেহ। শেষকৃত্য হবে সোমবার সকালে। কিন্তু দুবাইয়ে ময়নাতদন্তের অফিস বন্ধ থাকায় সব রিপোর্ট এদিন হাতে পাওয়া যায়নি। এদিকে শ্রীদেবীর মৃত্যু ঘিরে একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠে আসার পরই তদন্ত আরও জোড়ালভাবে শুরু করার নির্দেশ দেয় পুলিশ। একইসঙ্গে শ্রীদেবীর হোটেলের ঘর সিল করে দেওয়া হয়েছে।
কোথায় রহস্য? জানা গিয়েছে, বিয়েবাড়ি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ২১ ফেব্রুয়ারি মুম্বই ফিরে আসেন শ্রীদেবীর স্বামী বনি কাপুর ও তাঁর ছোট মেয়ে খুশি। এরপর টানা দু’দিন হোটেলের ঘরেই নিজেকে বন্দি করে রেখেছিলেন শ্রী। ২৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শ্রীর মৃত্যুর ঠিক আধ ঘণ্টা আগে তাঁকে সারপ্রাইজ ডিনারে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুম্বই থেকে ফের দুবাইয়ের হোটেলে ফিরে যান বনি। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বনি যেতেই ঘরের দরজা খুলে দেন শ্রী। এরপর ১৫ মিনিট স্বামী—স্ত্রী মিলে গল্প করেন। তারপর ডিনারে যাওয়ার জন্য বাথরুমে স্নান করতে যান শ্রীদেবী। প্রায় আধ ঘণ্টা পরেও শ্রী শৌচাগার থেকে না বেরনোয় দরজায় ধাক্কা দেন বনি। এরপর দরজা ভেঙে শৌচাগারে ঢুকে অচৈতন্য অবস্থায় শ্রীদেবীকে দেখতে পান। এক আত্মীয়র সাহায্য শ্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যান তিনি।
হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় শ্রীদেবীর। কিন্তু পুলিশে খবর দেওয়া হয় রাত ন’টায়। কেন এত পরে মৃত্যুর খবর পুলিশের কাছে জানাল কাপুর পরিবার? কেনই বা একা দু’দিন দুবাইয়ের হোটেলে ছিলেন শ্রীদেবী? মৃত্যুর আগে বনি কাপুরের সঙ্গে কি কোনও বাক-বিতণ্ডা হয়েছিল শ্রীর? নাকি নিজের শরীরে নানা সার্জারির ধকল সহ্য করতে না পেরে এরকম অবস্থা? আবার বড় মেয়ে জাহ্নবীর ডেবিউ ছবি নিয়ে টেনশনের কথাও অগ্রাহ্য করতে পারছেন না অনেকে। এমনই অজস্র প্রশ্ন মনে নিয়েই আরব সাগরের তীরে রুপোলি পর্দার নায়িকাকে শেষবারের মতো চাক্ষুস করতে অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ভক্তরা। একইসঙ্গে দুবাইয়ে ফরেন্সিক বিভাগের বাইরেও প্রবাসী ভারতীয়রা শ্রীদেবীকে শেষবিদায় জানাতে ভিড় করেছেন।
[আম্বানির প্রাইভেট জেটে আজই মুম্বইতে আনা হবে শ্রীদেবীর মরদেহ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.