Advertisement
Advertisement
Mandakini

দাউদের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যই কি হারিয়ে গিয়েছিলেন! এখন কোথায় আছেন মন্দাকিনী?

তাঁর শরীরী আবেদনে একদিন সম্মোহিত হয়েছিল দেশ।

Where is Ram Teri Ganga Maili fame actress Mandakini। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 17, 2021 5:39 pm
  • Updated:September 17, 2021 7:27 pm

বিশ্বদীপ দে: ‘সম্রাট ও সুন্দরী’। সাতের দশকে এই নামেই এক বিখ্যাত নাটক হয়েছিল কলকাতার সারকারিনায়। কিন্তু সুন্দরীর সঙ্গ কি কেবল সম্রাটই চায়? অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশাদের আশপাশে রূপসীদের আনাগোনা তো নতুন কিছু নয়। হিন্দি ছবিতে অজিতরূপী খলনায়কের সঙ্গিনী ‘মোনা ডার্লিং’রা বাস্তবেও আছেন। কিন্তু, তা বলে রুপোলি পর্দায় ঝড় তোলা এক নায়িকাও কি পড়তে পারেন বাস্তব দুনিয়ার এক ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধীর প্রেমে? এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আজও। কেবলই সংশয়ের কুয়াশায় ঢাকা সেই আখ্যান। দাউদ ইব্রাহিম (Dawood Ibrahim) ও মন্দাকিনী (Mandakini)। কোথায় ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের প্রধান চক্রী দাউদ আর কোথায় রাজ কাপুরের হাত ধরে ছায়াজগতের বাসিন্দা হয়ে ওঠা মোহময়ী মন্দাকিনী! কী করে সম্ভব হল এই অসম্ভব প্রেমকাহিনি?

এক পুলিশ কনস্টেবলের ছেলে দাউদের আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হয়ে ওঠার গল্প কমবেশি সকলেরই জানা। বিশেষ করে সিনেমায় একাধিক বার তার জীবন ফুটে ওঠার পরে। কিন্তু মন্দাকিনীর জীবনও কিছু কম বিচিত্র নয়। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারে জন্মানো ইয়াসমিন জোসেফ নামের কিশোরীটি যখন টিনসেল টাউনে পা রেখেছিলেন, তখন তাঁর পক্ষে কল্পনাতেও আনা সম্ভব ছিল না স্বয়ং রাজ কাপুরের হাত ধরে তিনি হয়ে উঠবেন আসমুদ্রহিমাচলের তরুণের স্বপ্ন।

Advertisement
Mandakini-young
এই নীল চোখের আবেদনেই মাত হয়েছিল দেশ

[আরও পড়ুন: Baazi Movie Trailer: বক্স অফিসের ‘বাজি’ জিততে মরিয়া জিৎ, সঙ্গী মিমি]

তবে শুরুটা মোটেই খুব আশাপ্রদ ছিল না। মন্দাকিনীকে নাকচ করে দিয়েছিলেন তিনজন পরিচালক। চতুর্থ জন যদিও বা নির্বাচন করলেন, পালটে দিলেন নাম। ইয়াসমিন থেকে তিনি হলেন ‘মাধুরী’। সই করলেন ‘মজলুম’ ছবিতে। কিন্তু এরপরই ম্যাজিক! রাজ কাপুরের (Raj Kapoor) ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবিতে গঙ্গার চরিত্রে ইয়াসমিন ওরফে মাধুরী থেকে তিনি হয়ে গেলেন মন্দাকিনী।

Advertisement

১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে দুর্নীতি থেকে গঙ্গার দূষণ, নানা বিষয়কে সামনে রেখে ছেলে রাজীব কাপুরকে ‘লঞ্চ’ করেছিলেন রাজ। কিন্তু সব আলো যেন গিয়ে পড়ল মন্দাকিনীরই উপরে। ঝরনার জলে ভেজা ফিনফিনে শাড়িতে স্পষ্টত দৃশ্যমান দেহসৌষ্ঠবই হোক কিংবা সন্তানকে স্তন্যপান করানো- ছবির সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠল এই সব দৃশ্য। যাকে ঘিরে নিন্দার ঝড় তো বইলই। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মুগ্ধতার কেন্দ্রেও চলে এলেন ২২ বছরের এক তরুণী।

Ram-Teri-Ganga-Maili
‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবির একটি দৃশ্য

[আরও পড়ুন: দিতিপ্রিয়ার বাবা হলেন প্রসেনজিৎ! নতুন ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করবেন টলিউডের বুম্বাদা]

‘শরীর শরীর তোমার মন নাই কুসুম?’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র সংলাপই যেন ফিরে ফিরে আসে মন্দাকিনীর কেরিয়ারের সমান্তরালেও। অভিনয় নয়, কেবল মন্দাকিনীর শরীরী আবেদনকে মূলধন করেই বহু চলচ্চিত্র নির্মাতা তাঁকে কাস্ট করতে শুরু করেন। ফলে পরপর ছবি হাতে পেলেও কোথায় যেন মন্দাকিনীর কেরিয়ার এক ঘূর্ণির মধ্যে পড়ে গেল। ফলে যা হওয়ার তাই হল। জিতেন্দ্রর মতো সিনিয়র তারকা হোক, কিংবা মিঠুনের মতো সুপারস্টার অথবা গোবিন্দ, আদিত্য পাঞ্চোলির মতো সেই সময়ের উদীয়মান অভিনেতা- সকলের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করলেও কয়েক বছরের মধ্যেই হারিয়ে গেলেন মন্দাকিনী।

কিন্তু এটাই কি একমাত্র কারণ? নাকি মন্দাকিনীর জীবনে দাউদ ইব্রাহিমের প্রবেশই ছিল আসল কারণ! ১৯৮৯ সাল থেকেই নতুন ছবিতে সই করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন নায়িকা। পরবর্তী সময়ে তাঁর যে ক’টি ছবি রিলিজ করেছিল সবই এর আগে সই করা। এদিকে নয়ের দশকের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে রটে যায় দাউদের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন মন্দাকিনী। কেবল মুখে মুখে ঘোরা গল্পকথাই নয়, প্রকাশ্যে এল কিছু ছবিও। সেই ছবিতে রোদচশমা পরা দাউদের পাশেই দেখা গেল হাস্যরত মন্দাকিনীকে। শোনা যায়, দাউদ নাকি বরাবরই বলিউডের বিরাট ভক্ত। সে নাকি বেনামে কোনও কোনও ছবিতে টাকাও ঢেলেছিল। কেবল মন্দাকিনীই নন, মডেল অনিতা আয়ুবও নাকি বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন ডি কোম্পানির সর্বাধিনায়কের সঙ্গে।

Mandakini and Dawood
দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তাঁর এই ছবি ঘিরেই বিতর্ক চরমে ওঠে

ততদিনে ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছে। গোটা দেশের কাছেই এক ‘মহা-খলনায়ক’ হয়ে গিয়েছে দাউদ। এরপরই ১৯৯৪ সালের এক ছবিতে মন্দাকিনীকে দেখা গেল দাউদের পাশে! ব্যাস! গোটা দেশজুড়েই শুরু হল সমালোচনা। এমনও শোনা গেল, ‘রাম তেরি…’ ছবিতে মন্দাকিনীর সুযোগ পাওয়ার পিছনেও নাকি ছিল দাউদেরই হাত। যে কারণে ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ার ৪৫ দিন পরেও রাজ কাপুর চেয়েছিলেন মন্দাকিনীকে সরিয়ে দিয়ে পদ্মিনী কোলাপুরীকে নিয়ে নতুন করে শ্যুটিং শুরু করতে।

এমনই নানা জল্পনা ঘুরছিল। এরপরই বেঙ্গালুরুর (তৎকালীন ব্যাঙ্গালোর) কাছে দেশছাড়া দাউদের এক প্রকাণ্ড বাগানবাড়ির সন্ধান পায় মুম্বই পুলিশ। জানা যায়, ওই নির্মীয়মাণ বাড়িটির মালিকানা নাকি মন্দাকিনীর! যদিও শেষ পর্যন্ত মুম্বই পুলিশ মন্দাকিনীকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল, এর পিছনেও কি দাউদের প্রভাব!

Dalai Lama
দলাই লামার সঙ্গে মন্দাকিনী

মন্দাকিনী অবশ্য কোনও দিনই মেনে নেননি দাউদের সঙ্গে তাঁর প্রণয়ের গুঞ্জনকে। হ্যাঁ, দুবাইয়ে শ্যুট করতে গিয়ে দাউদের সঙ্গে তাঁর মোলাকাতের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেননি। কিন্তু তাঁর দাবি, ওই প্রাথমিক আলাপচারিতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না তাঁদের মধ্যে। কিন্তু সেকথা শোনার সময় ছিল না কারও। ১৯৯৫ সালে ‘জোরদার’ ছবির পরই শেষ হয়ে যায় মন্দাকিনীর কেরিয়ার। ওই বছরই জানা যায় নায়িকা এখন অন্তঃসত্ত্বা।  লোকমুখে ঘুরতে লাগল, ওই সন্তান দাউদেরই। ধীরে ধীরে সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করলেন মন্দাকিনী। রাস্তায় বেরলেও থাকতেন বোরখার আড়ালে। তিনি অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন। অভিনয় ছেড়ে দিয়ে পপ গানের অ্যালবামও বের করেছিলেন। কিন্তু মানুষের পছন্দ হয়নি সেসব।

Mandakini-now
মন্দাকিনী এখন যেমন

এখন কোথায় মন্দাকিনী? ষাট ছুঁই ছুঁই প্রৌঢ়ার জীবন বইছে কোন খাতে? জনমানসে ‘সেক্স বম্ব’ থেকে ‘গ্যাংস্টারের প্রেমিকা’ হয়ে ওঠা মন্দাকিনী আজ জনারণ্যের এই সব প্রাচীন প্রবাদ থেকে বহু দূরে। জীবনের সমস্ত ওঠাপড়া যাতে গায়ে না লাগে, সেই লক্ষ্যেই নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়েই তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। অনুসরণ করতে শুরু করেন দলাই লামার জীবনদর্শনকে। বিয়ে করেন প্রাক্তন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ড. কাগিয়ুর টি রিনপোচে ঠাকুরকে। স্বামীর সঙ্গে মিলে শেখাতে শুরু করেন তিব্বতি যোগাসনের ক্লাস। দুই সন্তানের জননী মন্দাকিনী চেয়েছিলেন জনপ্রিয়তার সম্মোহনী মায়া থেকে সরে এসে নিজের মতো করে বাঁচতে। তিনি পেরেছেন। কিন্তু খ্যাতির আলোকবৃত্ত থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া সহজ নয়। মন্দাকিনী এখন চাইছেন ফের ছায়ার জগতে ফিরতে।

Mandakini-with-husband
স্বামীর সঙ্গে মন্দাকিনী

ভাই ভানু চেয়েছিলেন দিদি টিভি সিরিজে অভিনয় করুন। কিন্তু মন্দাকিনী জানিয়েছেন, একমাত্র বড় পর্দাই তাঁর প্রথম পছন্দ। আপাতত কথাবার্তা চলছে বহু পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে। শিগগিরি হয়তো আবারও ‘লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন’-এর জগতে ফিরবেন অভিনেত্রী। তবে তিনি চান বা না চান, সেই সঙ্গে ফিরবে তাঁর অতীতও। যে অতীতে কেবল দাউদের অন্ধকার অধ্যায়ই নেই। রয়েছে ঝরনার জলে ভেজা সদ্য তরুণীর শরীরী মায়াও। যে মায়ায় একদিন মজেছিল অসংখ্য তরুণ হৃদয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ