Advertisement
Advertisement

Breaking News

করণের সঙ্গে বন্ধুত্বের ফল হতে পারে মারাত্মক! কেন জানেন?

তিনি কি বন্ধু রূপে শত্রু? কী বলছে বলিউড৷

 Karan Johar a 'foe' disguising as friend
Published by: Tanujit Das
  • Posted:January 26, 2019 8:40 pm
  • Updated:January 26, 2019 8:40 pm

সৌম্যদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়: তিনি ইন্ডাস্ট্রির গডফাদার। আবার তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বই নাকি কেরিয়ারকে ঠেলে দিতে পারে খাদের দিকে। তিনি করণ ‘কন্ট্রোভার্শিয়াল’ জোহর৷ বলিউডে তাঁর প্রতিপত্তি বুঝতে গেলে, তাঁকে নিয়ে একটা নেগেটিভ স্টোরি করার চেষ্টা করে দেখুন। সাংবাদিকতার ভাষায় ‘নেগেটিভ স্টোরি’ মানে একটা লেখা, যা তার বিষয়বস্তুকে খুব একটা ভাল আলোয় দেখায় না।

[জীবনের ব্যস্ততায় বদলে গিয়েছে বাঙালির পিকনিক ]

Advertisement

এই বিষয়ে একটা ব্যক্তিগত ঘটনার কথা আপনাদের বলি। আমার এক প্রযোজক বন্ধুর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হচ্ছিল। বিষয়টা হল, টক শো হোস্ট করণ জোহর কি বন্ধু? না কি বন্ধু রূপে শত্রু? সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পালটা প্রশ্ন,“এক্সকিউজ মি, আপনি কী নিয়ে লিখছেন?” লিখছি করণ জোহরের অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে, যে হাজারো বিতর্ক সৃষ্টি করেও তা থেকে অক্ষত ভাবে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন। “শুনে মনে হচ্ছে নেগেটিভ স্টোরি। তাই না?” সেটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করছে। “ঠিক আছে। আমরা কথা বলতে পারি। কিন্তু প্লিজ আমাকে কোট করবেন না, ওকে?” কেন? “বোকামি করবেন না। আজকের বলিউডে করণ সবচেয়ে শক্তিশালী প্রোডিউসার। সব ক্যাম্পের সদস্য, কিন্তু কোনও ক্যাম্পেরই নয়। ওর অধীনে প্রচুর ডিরেক্টর কাজ করছে। সেখানে আমি প্রকাশ্যে কী করে ওর বিরুদ্ধে কথা বলব? আপনি কী জানতে চান বলুন। কিন্তু আমার নামটা নেবেন না প্লিজ। ‘সোর্স’ বলে চালিয়ে দেবেন।”শুধু একজন নয়। প্রথম সারির যে ক’জন প্রযোজক, অভিনেতা আর ‘কফি উইথ করণ’-এর নিমন্ত্রিতদের সঙ্গে কথা বললাম, তাঁরাও হরেদরে একই কথা বললেন। আমার সঙ্গে বন্ধুত্বের খাতিরে কথা বলতে চাইছিলেন সবাই। কিন্তু করণ জোহরের সামনে কেউ নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চান না। ভেবে দেখুন, করণ জোহর সম্ভবত বলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রযোজক যিনি অনায়াসে তিন খানের বাড়িতে যাতায়াত করতে পারেন। এই তিন খান কিন্তু বলিউডের তিন ক্যাম্পের মাথা।

Advertisement

[ছেচল্লিশেও আবেদনময়ী লিজা, ফাঁস করলেন গোপন কথা]

বলিউডে করণের নিজস্ব একটা ক্যাম্পও আছে। তার সদস্য সেই সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, যাদের তিনি লঞ্চ করেছেন বা মেন্টর করেছেন। রয়েছেন সেই সব ব্যক্তি যাঁদের সঙ্গে করণের সম্পর্ক ছিল। আদিত্য চোপড়ার মতো কয়েকজন পরিচালক বা টুইঙ্কল খান্নার মতো অভিনেতা, যাঁরা করণকে ছোটবেলা থেকে চেনেন। সব মিলিয়ে করণের প্রভাব যা দাঁড়িয়েছে, বলিউডের কেউ বোধহয় তার ধারেকাছে আসতে পারবে না। করণ জোহরের ফোনবুকে কেউ নেই যে তাঁর ফোন তুলবে না। ‘কফি উইথ করণ’-এ সলমন খানের এপিসোডটা মনে আছে? সেখানে সলমন পর্যন্ত বলেছিলেন, করণ কবে তাঁর সঙ্গে ফিল্ম করবেন? এটাই করণ জোহর। যাঁকে সবাই ভালবাসে। কোনও সন্দেহ নেই যে করণ প্রতিভাবান ফিল্মমেকার। কিন্তু যে জায়গাটায় তিনি সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে গিয়েছেন, তা হল দুর্দান্ত পিআর। করণের এই স্কিল বলিউডে একমেবাদ্বিতীয়ম। করণ জোহর ছাড়া আর কেউ নেই যিনি বলিউডে প্রায় সবার সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখতে পেরেছেন। এঁদের কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে হয়তো কথা বলেন না, কিন্তু সবাই করণ জোহরের সঙ্গে কথা বলেন। মিডিয়ার উপরেও সমান প্রভাব করণের। প্রচুর সিনিয়র বলিউড সাংবাদিকের সঙ্গে রীতিমতো বন্ধুত্বের সম্পর্ক তাঁর। এঁরা সবাই যথেষ্ট প্রভাবশালী। করণ নিজেই কয়েকবার স্বীকার করেছেন যে, মিডিয়ায় তিনি বেশ কয়েকটা গসিপ শুরু করেছেন। তাই মিডিয়াও করণ জোহরকে ভালবাসে। ফলে খুব কম স্টোরি আছে যা করণের সমালোচনা করে। সত্যি বলতে, বলিউডের বেশির ভাগ সাংবাদিক করণের স্তুতি লিখে পাতার পর পাতা ভরিয়ে দেয়। বহুবার এমন হয়েছে যে, করণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু মজার হল, করণকে কোনও বিতর্ক স্পর্শ করতে পারেনি।

[‘সবচেয়ে কঠিন ছিল ওঁর মতো বক্তৃতা দেওয়া’, ঠাকরে সম্পর্কে মুখ খুললেন নওয়াজ]

‘এআইবি রোস্ট’ ইভেন্টটা আপনাদের অনেকের মনে থাকবে। যেখানে রণবীর সিং আর অর্জুন কাপুরের সঙ্গে স্টেজে করণও ছিলেন। ইউটিউবে প্রোগ্রামের ভিডিও আপলোড হতে না হতে সে কী বিতর্ক! তারকাদের কিছু মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলা হচ্ছিল যে, সেগুলো নারীবিদ্বেষী এবং চূড়ান্ত অভদ্র। এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। ব্যাপারটা এখনও আদালতের বিচারাধীন। তার পর ‘কফি উইথ করণ’-এ এসে করণের মুখের উপর তাঁকে ‘বলিউড মাফিয়া’ আর ‘স্বজনপোষণের ধ্বজাধারী’ বলে দিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত। সেই বিতর্কের কয়েক মাস পর একটা অ্যাওয়ার্ড শো-র মঞ্চে কঙ্গনাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করলেন করণ। যে মহিলা সপক্ষে কিছু বলার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেই, তাঁকে নিয়ে এ রকম মন্তব্য করার জন্য করণের তীব্র সমালোচনা হয়। আমি নিজেও ঘটনাটার প্রতিবাদ করেছিলাম। বরুণ ধাওয়ান (যিনি করণের সঙ্গে সে সময় মঞ্চে ছিলেন) প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নেন। করণ জোহর তাঁর অ্যাপোলজি ব্যক্ত করেন এক টিভি চ্যানেলের এন্টারটেনমেন্ট এডিটরের মাধ্যমে। নিজে সামনে না এসে। হার্দিক পান্ডিয়া-লোকেশ রাহুল বিতর্কের পরেও দেখছি এক জিনিস হচ্ছে। তাঁর শো-এ বিতর্কিত মন্তব্য করে টিম থেকে সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছিলেন দুই ভারতীয় ক্রিকেটার। দুই তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটার, যাঁদের সামনে গোটা কেরিয়ার পড়ে আছে। কিন্তু করণ জোহর নিজে অদৃশ্য হয়ে গেলেন! ঘটনার বেশ কয়েকদিন পরে বিদেশে বসে একটা টিভি চ্যানেলকে ‘সরি’ বললেন করণ। বললেন, তিনি বা তাঁর টিম মেম্বাররা কেউ বুঝতে পারেননি ক্রিকেটারদের মন্তব্যগুলো অপমানজনক। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না বলেই এত দেরিতে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন করণ। তিনি বলেন, টিআরপি বা শো-র জনপ্রিয়তা নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই। কারণ তিনি মূলত ফিল্মমেকার।

[নেতাজির জন্মদিনে আজও বিনা পয়সায় তেলেভাজা বিলি করে শহরের এই দোকান]

এটা জাস্ট অন্য পর্যায়ের মিথ্যাভাষণ। টিভি টক শো হোস্ট আর ট্যালেন্ট শো-র বিচারক হিসেবে করণের কেরিয়ার যথেষ্ট সফল। অ্যাওয়ার্ড শো-তেও তিনি নিয়মিত মুখ। এমন কোনও সময় মনে করতে পারছেন, যখন কোনও না কোনও টিভি চ্যানেলে করণ জোহরকে দেখা যায়নি? বুঝতে পারছেন আমি কী বলছি? নিজের সিনেমা নিয়ে করণ যতই বলুন না কেন, তিনি নিজে একজন টেলিভিশন পার্সোনালিটি। তো বলিউড ছাড়া টেলিভিশন সেক্টরেও করণ জোহরের প্রভাব মারাত্মক। বলিউডের প্যারাডক্সটা বোঝাতে পারলাম? যা-ই হোক না কেন, যতজনই বিতর্কের আগুনে পুড়ে যাক না কেন, সবাইকে করণ জোহরের বন্ধু হয়ে থাকতে হবে। থাকতেই হবে। ধরুন আপনি একজন তরুণ বলিউড তারকা। আপনি কয়েকটা ফিল্ম করেছেন। আস্তে আস্তে প্রথম সারির দিকে এগোচ্ছেন। হঠাৎ একদিন আপনার ফোনে করণ জোহরের কল বা মেসেজ ভেসে উঠল। সেই কল বা মেসেজটাকে কি আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন? না। আপনাকে করণের সঙ্গে কথা বলতে হবেই। এবার আপনি যখন তাঁকে কল ব্যাক করলেন, তিনি আপনাকে ‘কফি উইথ করণ’-এ ডাকবেন। যেখানে তিনি অবধারিত ভাবে আপনাকে উদ্ভট সব প্রশ্ন করে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেবেন। আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন, কিন্তু করণকে না বলতে পারবেন না।

কয়েক দিনের জন্য ব্যাপারটা পিছিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু করণকে না বলতে পারবেন না। আপনি অসুস্থ বলে কয়েক দিনের অব্যাহতি চেয়ে নিতে পারেন, কিন্তু করণকে না বলতে পারবেন না। বলিউডের পাওয়ার ইকুয়েশন এভাবেই কাজ করে। যেখানে সিঁড়ির একেবারে টঙে বসে আছেন করণ জোহর। একমাত্র একজন, এক মহিলা, খোলাখুলি করণ জোহরের বিরোধিতা করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন। কঙ্গনা রানাউত।বলিউডের নামী তারকারা কঙ্গনার সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করে, আপনারা জানেন? সে আর এক গল্প!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ