সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আবার একটি সিনেমাওয়ালার অকালমৃত্যু। মাল্টিপ্লেক্সের জঙ্গলে এতদিন ধুঁকছিল সমস্ত সিঙ্গলস্ক্রিন। এবার এক এক করে দেহ রাখছে তারা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে- মেট্রো, এলিট, মিত্রার পর এবার কি তাহলে রক্সির পালা? কারণ ইতিমধ্যেই একবার রক্সির ঘাড়ে খাঁড়া নেমে এসেছিল। বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল ঐতিহ্যশালী এই সিনেমাহলটি। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি। আজও সগৌরবে বিরাজমান রক্সি।
কলকাতার সিঙ্গলস্ক্রিনগুলির দরজা বরাবরের মতো বন্ধ হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে অনেকদিন আগে থেকেই। কোনও কোনও সিনেমাহলে এখন তৈরি হয়েছে মাল্টিপ্লেক্স, কোনওটাতে আবার হয়েছে মাল্টি স্টোরেড বিল্ডিং। এই দ্বিতীয় বিভাগেই সম্ভবত পড়তে চলেছে রক্সি। বছর তিন-চার আগেই এই সিঙ্গলস্ক্রিনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ এসেছিল। কিন্তু সেবার ভাগ্য সহায় হয়েছিল রক্সির। কিন্তু এলিট সিনেমা বন্ধের পর থেকেই আশঙ্কা চেপে বসে রক্সির কর্মীদের মনে।
গত বছর ৩১ মে শেষবারের মতো সিনেমা দেখানো হয়েছিল এলিট প্রেক্ষাগৃহে। তখন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, যতদিন যাচ্ছে, দর্শকের পরিমাণ ততই কমছে। ফলে ছবির খরচ তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাছাড়া এমন অবস্থায় কর্মীরাও চাকরি ছেড়ে দিচ্ছিলেন। তাই শেষমেশ সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেন হল মালিক। এলিট বন্ধের মাস তিনেক পরই বন্ধ হয়ে যায় আরও এক সিঙ্গলস্ক্রিন মালঞ্চ। সেখানে ১৪ আগস্ট চলেছিল শেষ শো। তার এক সপ্তাহ পরই জানানো হয় চার-পাঁচ বছর ধরে লোকসানে চলছে হল। মাল্টিপ্লেক্সের ভিড়ে এই হলে তেমন কেউ আসেন না। কয়েকজন মাত্র দর্শক হয়। অথচ এত বড় প্রেক্ষাগৃহের এসি-র বিলই মাসে আসে কয়েক লক্ষ টাকা। তার উপরে কর্মচারীদের বেতন রয়েইছে। এভাবে আর কতদিন চালানো যায়? কিন্তু মালঞ্চর কপাল এলিটের মতো পোড়া নয়। দিন দুই পরেই তালা খোলে মালঞ্চর দরজার।
[ আরও পড়ুন: মাল্টিপ্লেক্সের দাপট, দর্শকের অভাবে বন্ধ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মিত্রা ]
ক্ষণিক স্বস্তি এসেছিল তারপর। ভাবা হয়েছিল, একবার বন্ধ হওয়ার পর যখন খুলেছে মালঞ্চর দরজা, তখন নিশ্চয়ই আর কোনও সিঙ্গলস্ক্রিন বন্ধ হবে না। কিন্তু সে গুড়ে বালি। সম্প্রতি থেমে গেল আরও এক সিনেমাওয়ালার জার্নি। বন্ধ হয়ে গেল শ্যামবাজার-হাতিবাগান এলাকার বহু প্রাচীন প্রেক্ষাগৃহ মিত্রা৷ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, মাল্টিপ্লেক্সের সঙ্গে আজকের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে সিনেমাহলটি৷ এই প্রেক্ষাগৃহের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বিপুল৷ এসব দেখেই মিত্রার বর্তমান মালিক দীপেন্দ্রকৃষ্ণ মিত্র হলটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
এর আগে ধর্মতলার সুপ্রাচীন সিনেমা হল মেট্রোও একই কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ তা ভেঙে ফেলার পর দীর্ঘদিন কঙ্কালসার অবস্থাতেই পড়ে ছিল৷ সম্প্রতি মেট্রো সিনেমা হলের জায়গাটিতে তৈরি হয়েছে শপিং মল৷ শুধুমাত্র নামমাহাত্ম্যেই এখনও জায়গাটি চিহ্নিত হয়ে রয়েছে৷ রক্সিও হয়তো এবার সেই পথেই হাঁটবে। ক্রমশ বাড়ছে সেই আশঙ্কাই।
[ আরও পড়ুন: থেমে গেল গান, বন্দুকবাজের গুলিতে নিহত মার্কিন ব়্যাপার নিপসি হাসল ]