নির্মল ধর: আমেরিকায় নিউ ইয়র্কের প্রতিবেশী শহরতলি নিউ জার্সিতে ভারতীয় নাটকের উৎসব হয় গত ১৪ বছর ধরে। এবার পা পড়ছে ১৫-এ। এখানকার একদল নাটকপাগল মানুষ সারা সপ্তাহ হাড়ভাঙা খাটুনির পরও ভালবাসার টানে করে চলেছেন নাট্যচর্চা। গড়ে তুলেছেন এপিক অভিনয় কেন্দ্র। নেতৃত্বে আছেন ডক্টর দীপন রায়। কলকাতার বিশিষ্ট নাট্যদল ও ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রতি বছরই তিনদিনের এপিক নাট্যোৎসব আয়োজন করেন তাঁরা।
বিভিন্ন সময়ে তাঁরা কলকাতা থেকে নিয়ে গিয়েছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, অশোক মুখোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণদের। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চন্দন সেন, পার্থপ্রতিম দেব-সহ আরও অনেকে। বাংলার পরিচিত ও সফল প্রযোজনার মধ্যে ‘গোত্রহীন’, ‘চাকভাঙা মধু’, চিরকুমার সভা’, ‘বিসর্জন’, ‘দ্রৌপদী’, ‘মেঘ’, ‘সাগিনা মাহাতো’ এপিক মঞ্চস্থ করেছে নিউ জার্সির বাঙালিদের নিয়ে। শুধু বাংলা নয়, হিন্দি, ইংরেজি ও মারাঠি ভাষার নাটকও তাঁরা প্রযোজনা করেন অমল পালেকর, মোহন আগাসে, মহেশ দত্তানিদের দিয়ে।
[ আরও পড়ুন: ‘জনতার টাকায় CAA করা আর সরকারি সম্পত্তি নষ্ট একই ব্যাপার’, কটাক্ষ পরমব্রতর ]
এবারও করার পরিকল্পনা চলছে। দু’দিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন দীপন রায়। জানালেন, এবার আগামী জুলাই ৩১ এবং ১ ও ২ আগস্ট নিউবার্নসউইক পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে বসবে উৎসবের আসর। উদ্বোধন হবে বস্টনের ডান্স গ্রুপের (পরিচালক : অর্পণা সিঙ্গুর) নতুন প্রযোজনা ‘নবরস’ দিয়ে। পরের দিন তিনটি নাটক। থাকবে মহেশ দত্তানির হিন্দি-ইংরেজি নাটক ‘ব্রেভলি ফট দ্য ক্যুইন’, সুদীপ্ত ভৌমিকের পরিচালনায় ইংরেজি নাটক ‘অ্যাগনেস’ এবং থিয়েট্রিক্সের প্রযোজনায় হিন্দি নাটক ‘রাধা ওয়াজ রানাডে’। আর রবিবারের সমাপ্তি সন্ধ্যায় অভিনীত হবে বাংলা নাটক ‘শের আফগান’ অভিনয় ও পরিচালনায় থাকবেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভীক চট্টোপাধ্যায়।
তিনদিনের এই নাট্য উৎসবকে ঘিরে নিউ জার্সির বাঙালি মহলে যথেষ্ট উদ্দীপনার পরিবেশ তৈরি হয়। মেঘনাদ-পার্থপ্রতিম-অভীক তিনজনই জানালেন, ‘‘সত্যি বলতে, ওখানে প্রবাসী বাঙালি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারি, যেন থিয়েটারের মাতৃভূমি ওটাই।’’ দীপন রায় বললেন, ‘‘বাংলা ও বাঙালির নাট্য ঐতিহ্যকে চলমান রাখার এই ছোট্ট প্রয়াস আমাদের। প্রবাসে থেকেও মাতৃভাষাকে ভুলতে পারি না যে!’’ তাঁর পরিকল্পনায় আছে নিকট ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশের নাটক নিয়েও উৎসব আয়োজনের।