Advertisement
Advertisement

টানটান চিত্রনাট্য আর চমৎকার প্রযোজনায় জমজমাট ‘প্লে হাউজ’

প্রতিটি চরিত্রের অভিনয়ই অসাধারণ।

‘Play house’ play review
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:November 4, 2018 8:26 pm
  • Updated:November 4, 2018 8:26 pm

শুধু খেলা নয় ‘প্লে হাউস’। পদ্মনাভর লেখা, কমলেশ্বরের নির্দেশনা আর সুঅভিনয়, নাটক জমিয়ে দিল। লিখেছেন, নির্মল ধর

ফ্রেডরিশ ডু্যরেনমার্টের লেখা ‘অ্যানিম্যাল ফার্ম’ নিয়ে বাংলায় ‘পশুখামার’ প্রযোজনা হয়েছে ক’বছর আগেই। যদিও কোথাও বলা হয়নি, তবুও আমরা জানি, ছয়ের দশকে বিজয় তেন্ডুলকরের লেখা মারাঠি নাটক ‘শান্ততা কোর্ট চালু আহে’ এবং সিনেমা (পরিচালক : সত্যদেব দুবে) দুটোরই বীজ ছিল ডু্যয়েনমার্টের নাটক ‘ডেডলি গেম।’ সেই মারাঠি ছবি ও নাটকের সঙ্গে বেশ কিছু পরিচিত নাম জড়িয়ে। যেমন অমল পালেকর, সুলভা দেশপাণ্ডে, অমরেশ পুরী, অরবিন্দ দেশপাণ্ডে। বিজয় মূল নাটক অনুসরণ করেননি, বলতে পারি অ্যাডাপ্ট করেছিলেন। এবার সেই রচনাকেই বাংলায় এক নতুন চেহারা এবং আকার দিলেন বাংলা সিনেমার পরিচিত এবং সফল চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। তিনি অনেকটাই মূলানুগ। নাটকের প্রোটাগনিস্টকে নারী (বেনারে) থেকে পুরুষ (ইন্দ্রজিৎ) করেছেন তিনি। এবং ঘটনার প্রেক্ষাপটটিও নাটকের মহড়াঘর ছেড়ে এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের ড্রইংরুম করা হয়েছে।

Advertisement

পুরনো দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল ‘অ-পবিত্র’, নজর কাড়ল অভিনয় ]

Advertisement

নাটকটির মূল কথা- আজকের সময়ে ‘নৈতিকতা’, ‘মানবিকতা’ ধরনের শব্দগুলো প্রায় সেকেলে। পদ্মনাভ সংলাপের মধ্যে সেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সাম্প্রতিক ব্যবহারিক জীবনের ভোগসর্বস্বতা, জীবনের বাণিজ্যকরণ, নীতিহীনতার চরম অবস্থার চিত্রগুলোও। যুদ্ধোত্তর পঞ্চাশের দশকে লেখা নাটকটিকে এভাবে ‘কন্টেম্পোরারি’ করে তোলার কাজটি অবশ্যই প্রশংসার। পদ্মনাভও অনুকরণ নয়, অনুসরণই করেছেন ডু্যরেনমার্টকে। বিচারপতির ঘরে দুর্যোগের ফলে সেল্‌সম্যান ইন্দ্রজিতের আশ্রয় নেওয়াটা কাকতালীয়। কিন্তু তাঁকে নিয়ে পিনাকী-বিষ্ণুপদ-গৌতম-আশুতোষদের যে ‘আদালত আদালত’ খেলা চালু হয়, সেটি প্রথমটায় পানাহারের মধ্যে হালকা চালে হলেও একটু পরেই বেশ সিরিয়াস হয়ে ওঠে। বস‌ বিজনের মৃত্যু, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ইন্দ্রজিতের ঘনিষ্ঠতা নিজের উন্নতির পথ নিষ্কন্টক করতে, নাকি নেহাতই দুর্ঘটনা সেটা নিয়েই জমে বাদি বিবাদী পক্ষের উকিলের সওয়াল জবাব এবং ইন্দ্রজিতের ক্রম-স্বীকারোক্তি। পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো ধীরে ধীরে কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছয় নাটক। উন্মোচিত হয় ভোগবাদী সময়ে একজন মানুষের লোভ কীভাবে তাঁর অনৈতিক কাজগুলোর জন্য যুক্তির আশ্রয় খোঁজে এবং হয়তো বা পায়ও। এই অন্তিমে পৌঁছনোর পথে দুই উকিলের সংলাপ প্রতিসংলাপে নাটকটি বেশ জমাট, মুক্ত অর্থনীতির কুফল, মানবিকতা সরিয়ে আত্মস্বার্থের যূপকাষ্ঠে নিজেদের বলি দেওয়া এবং আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধের বেশ স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলেছে নাটকটি।

পদ্মনাভর রচনাকে মঞ্চে সপ্রাণ উপস্থিতির কাজটি সুচারু ভাবেই সম্পন্ন করেছেন বাংলা সিনেমার পরিচিত নাম কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। পরিচালক তিনিই। নাটক তাঁর ‘ফার্স্ট লাভ’ জানা ছিল। তাঁরই নাট্যদল ‘শৈলুষিক’ যে কত পরিপাটিভাবে নাটক উপস্থিত করে সেটা অজানা ছিল। সত্যিই বিশাল ড্রইংরুমের সুন্দর সেট নির্মাণ, আলোর ‘নাটকীয়’ ব্যবহার, আবহর সুপ্রয়োগ ‘প্লে হাউস’ নাটকটিকে খেলাঘরের বাইরে নিয়ে এক বিচার ঘরের আদল দিয়েছে। আবার গ্রিসের দেবদেবীর রেফারেন্স, কার্ডিওগ্রাফির শব্দের ব্যবহার, সংগীতের অনুষঙ্গ টানা বুঝিয়ে দেয়, এর পেছনে কমলেশ্বরের মস্তিষ্ক ও মন কীভাবে কাজ করেছে। ফিল্মের মতো নাটকেও তিনি যথেষ্ট সিরিয়াস এবং নিবেদিত মানুষ।

পঞ্চমের পাশেই স্থান দুই কিংবদন্তীর, শচীন ও কিশোরের মূর্তি বসছে শহরে ]

অভিনয়ের বেলায় বলব দারুণ এক অনসম্বল কাস্ট কমলেশ্বর প্রায় ‘কু্য’ করে ফেলেছেন। ইন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাট্যকার নিজে। পদ্মনাভ প্রকাশ করতে পেরেছেন ইন্দ্রজিতের অসহায়তা এবং যন্ত্রণা। স্বপক্ষে কথা বলার সময় তিনি যেমন সাবলীল, তেমনই উকিলের সামনে কিছুটা ভীত, সন্ত্রস্ত ভাবটিও এনেছেন। অন্য প্রধান চার চরিত্রে প্রতে্যকেই সমান দক্ষ। বিশেষ করে অর্জুন দাশগুপ্ত (বিচারক), কৌশিক চৌধুরি (ডিফেন্স কাউন্সিল) এবং শ্রীদীপ চট্টোপাধ্যায় (পাবলিক প্রসিকিউটর) তিনজনই তাঁদের নিখুঁত টাইমিং এবং ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে দর্শককে আটকে রাখেন। ‘শৈলুষিক’-এর এমন সুগ্রথিত প্রযোজনাটির কি আরও বেশি প্রদর্শনী করা যায় না?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ