Advertisement
Advertisement

Breaking News

Binoy Majumdar

রঙ্গমঞ্চে ‘ক্ষ্যাপা কবি’ বিনয় মজুমদারের জীবন, পড়ুন রিভিউ

কবির জীবনের কাহিনি কি মঞ্চে ফুটিয়ে তোলা গেল?

Review of new Bengali Drama 'Binoyer Jibon' | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:May 5, 2021 5:51 pm
  • Updated:May 5, 2021 5:53 pm

নির্মল ধর: অশ্বিনী তারার কবি বিনয় মজুমদারের (Binoy Majumdar) চিন্তা ভাবনা এবং কবিতার ভরকেন্দ্র অবশ্যই জীবনানন্দ। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর দুঃখে, বিষাদে, একাকীত্বে, যন্ত্রণায়, ব্যথায় প্রলেপ দিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Thakur)। তাইতো ‘বিনয়ের জীবন’ নাটকের প্রায় অন্তিমে কবির কণ্ঠে শুনতে পাই “আজি বিজন ঘরে নিশীথ রাতে…”। আবার নাটকের শুরুতে শোনা যায় “জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে…” বা ”এই করেছ ভালো, নিঠুর হে…”।  বিনয় মজুমদারের চেতনা-ভাবনায় যেমন ছিলেন জীবনানন্দ, তেমনই অবচেতনায় জুড়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

ব্যক্তিগত জীবনে বিনয় ছিলেন বিজ্ঞান, অঙ্কের ছাত্র এবং শিক্ষক। তবে তাঁর কথা চলত আকাশের তারার সঙ্গে। মানুষের সঙ্গে খুবই কম কথা বলতেন। প্রায় সারাটা জীবন একাই কাটিয়েছেন। বলতেন “আমার কবিতা অন্ধকারের, আলো নিবিয়ে পড়তে হয়…আমি নিজেই নিজের স্বামী, নিজের স্ত্রী। একা একাই বাস করি।” মানসিকভাবে তিনি ছিলেন স্কিজোফ্রেনিয়ার রোগী। কিন্তু মাঝে মাঝেই তাঁকে ভুল চিকিৎসা করে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হত। যে কারণে তাঁকে অনেকেই অসুস্থ ভাবতেন। মোটেই তিনি অসুস্থ ছিলেন না। মায়ের মৃত্যুতে যিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আশ্রয় খোঁজেন, তিনি উন্মাদ হতেই পারেন না! বিনয় বলতেন…”কবিতা লিখে দুঃখ ভোলা সম্ভব। আবার দুঃখ ভুললে কবিতা লেখা যায় না।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: মানবিক! ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ৩০ হাজার কর্মীকে বিনামূল্যে করোনা টিকা দেবে যশরাজ ফিল্মস]

এমন একজন তারা দেখা, স্বপ্নচারী, অতি চেতনা, অতি বেদনায় আক্রান্ত কবির জীবন ও যন্ত্রণা নিয়ে নাটক লেখা যেমন মানসিক চাপের, আবার সেই নাটক মঞ্চস্থ করা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন নাট্যদল থিয়েটার জোন এবং নাট্যকার ও নির্দেশক সুদীপ সিংহ সেই চাপ ও ঝুঁকি নিয়েই তাঁদের প্রথম প্রযোজনার মাত্র দু’টি শো করলেন মিনার্ভা মঞ্চে। এই অতি মারীর মধ্যেই এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

Advertisement

‘বিনয়ের জীবন’ নাটকের নাম। কিন্তু তাঁর চেতনায় প্রায় সর্বক্ষণ জীবনানন্দের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। আর সেই কারণেই বারবার জীবনানন্দ ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বিনয় মজুমদারের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসেছেন। নাটকটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে তাঁর উপস্থিতি। সূত্রধর হিসেবে রাখা হয়েছে সুবিনয় ও মৃণালিনী নামের দুই চরিত্র – যাঁরা কবি বিনয়কে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র করতে আগ্রহী। এরা মাঝে মাঝে দুই কবির মধ্যেখানে এসে ক্ষণিকের রসভঙ্গ করলেও, দর্শকের কাছে কিছু সূত্র দিয়ে যান বিনয়কে নিয়ে। প্রেসিডেন্সি কলেজের সহপাঠিনী গায়ত্রী চক্রবর্তীর প্রতি বিনয়ের নীরব প্রেম ছিল। তাঁর জীবনের সেরা কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরে এসো চাকা’ গায়ত্রীকেই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের কলেজ প্রাঙ্গনে দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে। কিন্তু বাক্য বিনিময় নাকি কখনও হয়নি। “দূর হতে ভালোবেসে যাবো”, এমনটাই ছিল বিনয়ের ভাবখানা। মজার ঘটনা, বিনয়ের এমন মনোভাবের কথা গায়ত্রীর অজানা ছিল না। তবুও দু’জনার ‘প্রেম’ ঘটেনি। মঞ্চে গায়ত্রীকে হাজির করে তাঁকে জেরা করার প্রয়োজন ছিল কি? ওঁদের নীরব প্রেমের মতই আড়ালে থাকতে পারত ব্যাপারটা। বিনয় মজুমদারের কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট, তাঁর পারিবারিক ইতিহাস এবং সর্বোপরি তাঁর কবি মানসের জটিলতাকে উন্মোচন করাটাই ছিল নাট্যকারের উদ্দেশ্য।

সুবিনয়- মৃণালিনী তথ্যচিত্রটি বানাতে পারেননি। কিন্তু সুদীপ সিংহ কবির অন্তরের যন্ত্রণা, মনের গভীরে নিজেকে প্রকাশের আকুতি সুন্দর দৃশ্যবিন্যাসে তুলে আনতে পেরেছেন। এই কাজে পরিচালককে সর্বত সহযোগিতা করেছে পৃথ্বীশ রাণার আলোর পরিকল্পনা এবং পার্থপ্রতিম রায়ের আবহ। শুরুতেই বিনয়ের মৃত্যু দৃশ্যের অবতারণা করে পরিচালক ফিরে গেছেন সিনেমার মতো ফ্ল্যাশব্যাক প্রথায়। আলোর ব্যবহারও বদলে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।

অভিনয়ে নাম চরিত্রে সুমন্ত রায় কবির ক্ষ্যাপামি স্টাইলটি বেশ সুন্দর এনেছেন। হতাশা, যন্ত্রণা ও অস্থিরতা তাঁর ব্যবহারিক প্যাটার্নের মধ্যেই একাকার। বরং জীবানন্দর চরিত্রে বুদ্ধদেব দাশ কিঞ্চিৎ আড়ষ্ট। অথচ আবৃত্তির সময় সাবলীল। তাঁর আরও মহড়া দরকার। কবির জীবন নিয়ে নাটক, বিশেষ করে আবার ক্ষ্যাপা কবির জীবন – সেখানে দর্শক টানার মশলা খুবই কম। তাই নতুন দলের পক্ষে এমন দুঃসাহস দেখে সাবাশি জানাতেই হয়। তারাদের দেশে চলে গেলে কবিকে নক্ষত্ররা জিজ্ঞেস করে বিনিয়দা কেমন আছেন? কেউ কিন্তু নক্ষত্রের হিসেব রাখে না। ঠিক তেমন ভাবেই বলতে পারি অপচয় পৃথিবীতে চিরকাল আছে। নাটক নিয়েও এমন দুঃসাহসী অপচয় নাহয় একটু হলইবা! নইলে নাটক এগোবে কেমন করে?

[আরও পড়ুন: করোনায় বিধ্বস্ত দেশ, অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেল ‘তুফান’ সিনেমার মুক্তি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ