শুভময় মণ্ডল: যে ভয়টা ধরেছিল ২০১৩ সালে, ঠিক তিন বছর পর সেখান থেকেই নতুন করে ভয় দেখানোর শুরু। মার্কিন মুলুকের অ্যামিটিভিলের একটি বাড়িতে অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা বড়পর্দায় দেখিয়ে সারা বিশ্বের দর্শককে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক জেমস ওয়্যান। তারপরেই শোনা যাচ্ছিল, আরও বেশি ভয়ের মাল-মশলা নিয়ে কনজিউরিং সিরিজের দ্বিতীয় ছবি নিয়ে আসছেন তিনি। মুক্তি পাওয়ার এক বছর আগে থেকেই ছবির গল্প নিয়ে টানটান উত্তেজনা তৈরি করেছিলেন ওয়্যান নিজে। কিন্তু ভূতের ছবি দেখতে যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের কাছে ‘দ্য কনজিউরিং-২’ ছিল ঐশ্বর্যের মতো। কিন্তু ভয় দেখানোর সব মাত্রাকেই অতিক্রম করে গেলেন পরিচালক। আমেরিকার ঘোস্টহান্টার দম্পতি এড ও লোরেইন ওয়ারেনের কেস ডায়েরি থেকে সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘দ্য কনজিউরিং-২’ এক কথায় হাড় হিম করে দেওয়া ছবি, বলতেই হয়। প্রত্যাশার দাম রেখেছেন জেমস ওয়্যান। বাতানুকূল প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত দর্শকদের শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত নামিয়ে দিয়েছেন তিনি।
কনজিউরিংয়ের গল্প যেখানে শেষ হচ্ছে সেখান থেকেই ‘দ্য কনজিউরিং-২’-এর গল্পের শুরুয়াত। সালটা ১৯৭৭। এড (প্যাট্রিক উইলসন) ও লোরেইন (ভেরা ফারমিগা) ওয়ারেনের কীর্তি তখন বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। টেলিভিশন রিয়ালিটি শোয়ে তাঁদের ভূত ধরার কীর্তি নিয়ে রীতিমতো প্যানেল ডিসকাশন হচ্ছে। সেই সময়ে ভূতের উপদ্রব শুরু হয় ইংল্যান্ডের এনফিল্ড শহরের একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে। চার সন্তানের স্বামী পরিত্যক্তা মা পেগি হজসন (ফ্রান্সেস ও’কোনর) কোনওরকম দিন গুজরান করেন। বাদ সাধে এক বৃদ্ধ ভূতের আবির্ভাব। পেগির মেজ মেয়ে জ্যানেট (ম্যাডিসন ওলফ) হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়াতে শুরু করে। তারপর বোঝা যায়, বৃদ্ধ ভূত বিল উইলকিনসের (বব আদ্রিয়ান) খপ্পড়ে পড়ে ভৌতিক কাণ্ড-কারখানা শুরু করে সে। ঘটনার কথা পুলিশ ও মিডিয়া মারফত চাউর হয়ে যায় সর্বত্র। তারপরেই রক্ষাকর্তার ভূমিকায় সেখানে পাড়ি দেন ওয়ারেন দম্পতি। কিন্তু ভূত যেখানে নিজেই অন্য এক মন্দ শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় তখন কীভাবে কিশোরী জ্যানেটকে রক্ষা করবেন ওয়ারেন দম্পতি? বোড়ের পিছনে মূল ষড়যন্ত্রকারী মন্ত্রীকে আদৌ চিনতে পারবেন কি তাঁরা? জীবন বাজি রেখে ওয়ারেন দম্পতির সেই ভূত ভাগানোর কিসসা জানতে হলে আপনাকে প্রেক্ষাগৃহে যেতেই হবে।
ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, প্রত্যেক দৃশ্যের পরতে পরতে ভয় লুকিয়ে রেখেছেন পরিচালক ওয়্যান। ওয়্যান নিজে, কেরি ও চ্যাড হায়েস এবং ডেভিড লেসলি জনসন লিখেছেন ছবির চিত্রনাট্য। অবশ্য গোটাটাই বাস্তবের ওয়ারেন দম্পতির কেস ডায়েরি ঘেঁটে। ছবির বেশ কিছু দৃশ্য আপনার হৃদকম্পন বাড়িয়ে দিতে পারে। উপদ্রবকারী ভূত যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাইছে কিন্তু তার চেয়েও শক্তিশালী আত্মা তাকে অন্যদের ভয দেখাতে বাধ্য করছে, সেটা ভাবলেই তো ভয়ে কাঁটা হওয়ার জোগাড়। সব কিছুর পরেও এত ঘনঘন ভূতের আনাগোনা না দেখালেই পারতেন পরিচালক। একইসঙ্গে খ্রিস্টের ক্রস দেখে ভয় পেয়ে যাওয়া ভূত আবার ঘরভর্তি ক্রস দেখেও কীভাবে সেখানে উপদ্রব করতে পারে সে বিষয়ে একটু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। তবে পরিচালক, চিত্রনাট্যকাররা কীই বা করবেন যখন বাস্তবের কেস ডায়েরিতে এমন ভুল রয়ে যায়।
সব মিলিয়ে ভয়ের যাবতীয় রসদ মজুত রয়েছে ‘দ্য কনজিউরিং-২’-এ। সাহসে কুলোলে একবার দেখা যেতেই পারে। সে ভিতুরা যাই বলুক, তাতে কান না দিয়ে চটজলদি দেখে আসুন।
পরিচালনা: জেমস ওয়্যান
চিত্রনাট্য: জেমস ওয়্যান, কেরি ও চ্যাড হায়েস এবং ডেভিড লেসলি জনসন
অভিনয়: প্যাট্রিক উইলসন, ভেরা ফারমিগা, ফ্র্যান্সেস ও’কোনর, ম্যাডিসন ওলফ, বব আদ্রিয়ান, বনি আরন
৩.৫/৫