BREAKING NEWS

১৬ আশ্বিন  ১৪৩০  বুধবার ৪ অক্টোবর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

রহস্যে মোড়া ‘বসু পরিবার’-এর অন্দরমহল, জানতে একবার ঢুঁ মারতেই পারেন

Published by: Bishakha Pal |    Posted: April 6, 2019 11:42 am|    Updated: April 6, 2019 12:00 pm

Basu Paribar movie review: Soumitra-Aparna impressess audience

বিশাখা পাল: ইতিহাস বড় বিষম বস্তু। অনেক কথাই কালের গভীরে তলিয়া যায়। কেঁচো খুঁড়তে গেলেই তখন বেরিয়ে যায় কেউটে। বিশেষত বনেদি বাড়ির ইতিহাস মানেই সেখানে কলঙ্কিত অধ্যায় সাধারণত থাকেই। গরু খোঁজা খুঁজলে হয়তো এমন গুটি কয়েক বাড়ি বা বনেদি পরিবার পাওয়া যাবে যাদের অতীতে একটাও দাগ নেই। কিন্তু বেশিরভাগের অতীতে কিছু না কিছু অঘটনের ইতিহাস রয়ছে। শহরতলীর বসুবাড়িও তার ব্যতিক্রম নয়।

ইংরেজ আমল থেকেই রমরমা বসুবাড়ির। আদতে জমিদারবাড়ি বলতে যা বোঝায়, বসুবাড়ি তাই। রাজবাড়ি। নাম কমলিনী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে গিয়েছে এককালের জৌলুস। তা সত্ত্বেও ঐতিহ্য ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়া যাচ্ছে একালের ঐতিহ্যশালী বসু পরিবার। সেই বসু পরিবারের বর্তমান কর্তা প্রণব ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জরীর ৫০ বছরের বিবাহবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে রাজবাড়িতে হয়েছে ভুরিভোজের আয়োজন। দেশ বিদেশ থেকে ছেলেমেয়েরা এসেছে বাবা মায়ের খুশিতে শামিল হতে। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। গল্প শুরু এর পর।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কমলিনীকে পরিচালক সুমন ঘোষ সাজিয়েছেন ভালভাবেই। একটা জমিদার বাড়িতে যা যা থাকার দরকার, তার ত্রুটিমাত্র নেই। শ্বেতপাথরের টেবিল, খানদানি খাট, বাঘ-ভল্লুক শিকারের পর তাদের দেহ স্টাফ করে রাখার ঘর সবই অনবদ্য। সেট সাজানোর ব্যাপারে সামান্যতম ত্রুটি রাখতে চাননি আর্ট ডিরেক্টর। তাই বসু পরিবরের গল্পে এই সেট একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।

[ আরও পড়ুন: এক আত্মবিশ্বাসহীন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ‘সোয়েটার’ ]

কর্মসূত্রে বিদেশে থাকা ছেলে রাজা (যিশু) আর তাঁর স্ত্রী রোশনি (শ্রীনন্দা), বসু বাড়ির মেয়ে মামনি (ঋতুপর্ণা), তারা মামাতো দাদা (কৌশিক সেন) ও তাঁর স্ত্রী (সুদীপ্তা), বাড়ির খাস চাকর (শুভাশিস), সবার মিলেমিশে আনন্দ করা, হই হুল্লোড় করা সব মিলিয়ে ভালই এগোচ্ছিল ছবি। কিন্তু রহস্যের খাসমহল দ্বিতীয়ার্ধে। এখানেই হয় প্রত্যেকটি চরিত্রের ময়নাতদন্ত। কৌশিক সেনের চরিত্রটির উভকামী সত্ত্বা থেকে শুরু করে সব রহস্য রয়েছে এই দ্বিতীয়ার্ধে। মানুষমাত্রই তার কিছু গোপন কথা থাকবে। দ্বিতীয়ার্ধে সেদিকেই নজর দিয়েছেন পরিচালক।

শ্বশুরবাড়িতে এসে রোশনিকে অবশ্যম্ভাবীভাবে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। ছেলেমেয়ে কবে হবে। এই প্রশ্ন শুনতে শুনতে রোশনি ক্লান্ত। সে জানে সমস্যা তার নয়, স্বামীর। কিন্তু কাউকে সে সেকথা বলতে পারে না। কিন্তু আড়াল থেকে মা শুনে ফেলে সেই কথা। এই ‘আড়াল থেকে’-র ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারণ ছেলের কথা যেমন মা শুনে ফেলে, তেমন মায়ের কথাও শুনে ফেলে মেয়ে। মায়ের পরকীয়া ছিল। শ্বশুরবাড়িতে নতুন বউ হয়ে আসার পর কেয়ারটেকারের ছেলেকে তার ভাল লাগত। সেই ভাললাগা মানতে পারেনি একসময়ের আত্মঅহংকারে টইটম্বুর বসু পরিবার।

basu-paribar

এই সজল উপস্থিত কিন্তু ছবিতে নেই। কিন্তু আড়াল থেকে ছড়ি ঘুরিয়ে গিয়েছে ছবির প্রতিটা চরিত্রে উপর। এই সজলের জন্যই প্রাচীন রাজবাড়ি থেকে নতুন বাড়িতে উঠে আসে গোটা বসু পরিবার। সেকথা জানতো বাড়ির বড়ছেলের ছেলে টুবলু। সজলের সঙ্গে ছিল তাঁর নাড়ির টান। রক্তের সম্পর্ক না হলেও তাদের মধ্যে ছিল পাতানো দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। তাই মঞ্জরী বিহনে সজলের আত্মহত্যা মেনে নিতে পারেনি সে। ওই ঘটনার জন্য বসু পরিবারের কোনও আনন্দোৎসবে শামিল হতে চাইতো না সে। এবারও আসতে চায়নি। মায়ের জোরজবরদস্তিতে আসে। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে পুরনো রাজবাড়ির কোণে। সেখানে থাকে বাড়ির একসময়ের কেয়ারটেকার। মঞ্জরীর সঙ্গে সজলের নামহীন সম্পর্কের কথাও কি সে জানতো? হয়তো। তাই তো একসময়ের নিত্যসঙ্গী ‘কাকিমা’-কে সে সরাসরি সজলের কথা নিয়ে নাড়া দিতে পারে।

গোটা বসু পরিবার মূলত এই দুটি চরিত্রের গল্প। টুবলু আর মঞ্জরী। ছবির গল্প ভালই। কিন্তু চিত্রনাট্য যেন একটু দুর্বল। প্রথমার্ধ অতীব ধীর। রহস্যের খাসমহল পরিচালক তৈরি করেছেন দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু এর কথা ও আড়ার থেকে শুনে নিচ্ছে, ওর কথা এ শুনে নিচ্ছে, এসব যেন বড় তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। হয়তো একটু সময় নিয়ে এগুলি সাজাতে পারতেন পরিচালক। অবশ্য পরিচালক একের পর এক চমক দেবেন বলে চিত্রনাট্য লিখে থাকেন, তবে এনিয়ে কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাই ভালমন্দের বিচার এখানে অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু চিত্রনাট্য নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সত্যিই যেন এখানে আরও একটু যত্নবান হতে পারতেন পরিচালক। কারণ সুমন ঘোষের থেকে দর্শক আরও অনেক বেশি কিছু আশা করে। তাই যে প্রত্যাশা নিয়ে বসু পরিবার দেখতে গিয়েছিলাম, তা অনেকটাই অপূরণীয় থেকে গেল। তবে একবার দেখে আসাই যায় বসু পরিবার। বিশেষত অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় ছবিতে অনবদ্য। তবে আলাদা করে শাশ্বতকে উল্লেখ করতেই হয়। তিনি যেন সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছেন।

আর একটা বিষয় যা উল্লেখ না করলেই নয়, তা হল আবহসংগীত। বিক্রম ঘোষের পরিচালনায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছবির প্রতিটি দৃশ্যের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জায়গায় মতো ‘ভ্রমর’ গানটির প্রয়োগও বেশ ভাল। প্রথমে মনে হতেই পারে এই গানটাই কেন? কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই গানের প্রয়োগ নিয়ে আর দ্বিধা থাকে না।

[ আরও পড়ুন: প্রেমের গল্প কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারল ‘নোটবুক’? ]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে