Advertisement
Advertisement
বরুণবাবুর বন্ধু

বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ এবং নির্মেদ চিত্রনাট্যে সার্থক বরুণবাবুর গল্প

আজকের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কেন 'বরুণবাবুর বন্ধু' দেখা প্রযোজন? জেনে নিন।

Director Anik Dutta's 'Borunbabur Bondhu' film review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:February 29, 2020 12:04 pm
  • Updated:February 29, 2020 6:17 pm

সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়: মুক্তি পেল পরিচালক অনীক দত্তর ছবি ‘বরুণবাবুর বন্ধু’। বিষয় নির্বাচন, গল্প নির্মান এবং সংলাপ সৃজনে অনীক দত্ত বরাবরই স্বতন্ত্র। এই ছবির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরুণবাবু একজন বর্ষীয়ান মানুষ যিনি যৌবনে আদর্শ নিয়ে বামপন্থী রাজনীতি করেছেন, তদুপরি জীবনে কখনও সেই মতাদর্শের সঙ্গে আপোষ করেননি। এই আপোষহীন জীবননীতির কারণে তিনি তাঁর সমসাময়িক সুযোগসন্ধানী কমরেড ও রাজনীতিকদের থেকে বিচ্ছিন্নও হয়ে গিয়েছেন। এহেন বরুণবাবুর ছোটবেলার এবং যৌবনের বন্ধু এখন ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং তিনি বরুণবাবুর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। এরকম একটি কাহিনি নিয়েই ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ ছবি।

রাষ্ট্রপতির বাড়িতে আসা- এই ঘটনার আবর্তে গল্পের চরিত্রগুলো পরতে পরতে উন্মোচিত হতে থাকে। বরুণবাবুর দুই ছেলে, মেয়ে-জামাই থেকে নাতি-নাতনিরা- প্রত্যেককেই আমাদের আশেপাশে দেখতে পাওয়া অসংখ্য চরিত্ররা যারা আসলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো আত্মকেন্দ্রিক এবং সুযোগসন্ধানী। তাঁরা কেউই বরুণবাবুর আড়ম্বরহীন, নীতিনিষ্ঠ জীবন নিয়ে তেমন আগ্রহী নন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বাড়িতে আসাকে কেন্দ্র করে তাঁদের বাবার জন্মদিন পালনের আদিখ্যেতা আমাদের কেমন যেন উলঙ্গ করে দেয়।

Advertisement

সিনেমা মাধ্যমটি সার্থক হয়ে ওঠে সমষ্টিগত প্রয়াসে। পরিচালক অনীক দত্তর সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ছবির অন্যান্য অভিনেতারা। বরুণবাবু এমন একটি মানুষ যিনি জীবনের আনন্দ-মৃত্যু সবেতেই নির্বিকার। কিন্তু জীবনবিমুখ নন। অসুস্থ স্ত্রীর মৃত্যুর পর পুরনো আধখাওয়া ট্যাবলেটের পাতা, স্ত্রীর ব্যবহৃত হুইলচেয়ার সরিয়ে দিয়ে জানলা খুলে সকালের রোদ্দুরকে স্বাগত জানানোর মতো ছোট ছোট ট্রিটমেন্টগুলো মনকে নাড়া দেয়। বরুণবাবুর আরেক বাল্যবন্ধুর ভূমিকায় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ছেলেদের ভূমিকায় ঋত্বিক চক্রবর্তী ও কৌশিক সেন এবং অন্যান্যরা প্রত্যেকেই অনবদ্য।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘ভালবাসায় বাঁচুক পৃথিবী’, বলছে আয়ুষ্মানের ‘শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান’]

ভাল, উল্লত শিল্প সবসময়েই জীবনের কথা বলে। সমাজের কথা বলে। বলে রাজনীতির কথা। এবং সেটা বলে গল্পচ্ছলে প্রচ্ছন্নভাবে। বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপে এবং নির্মেদ চিত্রনাট্যে, সেটাই করে দেখিয়েছেন পরিচালক অনীক। সংগীত পরিচালনায় দেবজ্যোতি মিশ্র যথাযথ। অযথা আবহ সংগীতের জগঝম্প বর্জিত সুন্দর কাজ। ঘরোয়া পরিবেশে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করার দৃশ্যে কোনও বাড়তি যন্ত্রানুসঙ্গ ব্যবহার না করে আবহসংগীতকে একটা স্টেটমেন্টের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন।

প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নাতির সঙ্গে বরুণবাবুর সম্পর্কের রসায়ন ছবিতে একটা অন্য মাত্রা এনে দেয়। এই গল্প আসলে বরুণবাবুর গল্প, জীবনের গল্প। শেষ দৃশ্যে নাতির সঙ্গে বরুণবাবুর বেড়ানোর দৃশ্যটি দেখতে দেখতে James Joyce-এর ‘Dead’ গল্পের একটা বিখ্যাত লাইন মনে পরে যায়- “We are met here as friends, in the spirit of goof fellowship, as colleagues also to a certain extent, in the true spirit of Camaraderie.”   

[আরও পড়ুন: দুর্দান্ত অভিনয় তাপসীর, বিবেকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় ‘থাপ্পড়’ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ