Advertisement
Advertisement
থাপ্পড়

দুর্দান্ত অভিনয় তাপসীর, বিবেকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় ‘থাপ্পড়’

নজর কেড়েছেন দিয়া মির্জা।

Read the review of Taapsee Pannu's movie Thappad
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:February 28, 2020 2:38 pm
  • Updated:February 28, 2020 3:12 pm

বিশাখা পাল: প্রথমে ‘মুলক’, তারপর ‘আর্টিকল ১৫’ আর এখন ‘থাপ্পড়’। পরিচালক অনুভব সিনহা আবারও মাইলস্টোন তৈরি করলেন। তবে এবার যেন তাঁর চিত্রনাট্য আরও সাহসী, আরও সামাজিক। ‘জাস্ট আ স্ল্যাপ… মারতে পারে না ও…. অধিকার নেই’- তাপসী পান্নুর মুখে একটা সংলাপ ভাবতে বাধ্য করবে আপনাকে। বিবেকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে।

নামকরণে মনে হতে পারে এটি কোনও দাম্পত্য হিংসার গল্প। কিন্তু তা নয় একেবারেই। এই গল্প নারীর সম্মানের। বক্স অফিসে নারীকেন্দ্রিক ছবি সাফল্য পেয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত বিরল। তাই এক্ষেত্রেও আশার আলো জ্বলছে ধিকধিক করেই। গোটা ছবিটা দাঁড়িয়ে রয়েছে সাত মহিলার উপর- অমৃতা, তার মা, শাশুড়ি, ভাইয়ের বান্ধবী, মহিলা আইনজীবী, অমৃতার প্রতিবেশি আর অমৃতার পরিচারিকা। প্রত্যেকের গল্প আলাদা। কিন্তু কোথাও যেন সব পথ একজায়গাতেই এসে মেলে।

Advertisement

Advertisement

[ আরও পড়ুন: পিলে চমকানো সাউন্ড এফেক্টই সার, ভয়ের লেশমাত্র নেই ‘ভূত: দ্য হন্টেড শিপ’ ছবিতে ]

অমৃতা গৃহবধূ। তার স্বামী বিক্রম তাকে ভালবাসে। শাশুড়িকে নিয়েও কোনও সমস্যা নেই তার। বরং স্বামী ও শাশুড়ির সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ ভাল। কিন্তু কোনও এক উত্তেজনার মুহূর্তে বিক্রম অমৃতাকে চড় কষিয়ে দেয়। শুরু হয় গল্প। প্রতিটা মোড়ে একটাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। যতই প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকুক। স্ত্রীকে থাপ্পড় মারার অধিকার কি স্বামীর আছে? সবাই অমৃতাকে বোঝাতে শুরু করে, স্বামী-স্ত্রী মধ্যে এমন একটু আধটু হয়। তাই বলে আলাদা হয়ে যেতে হবে? অমৃতার মা তার মায়ের শেখানো বুলি পাখি পড়ানোর মতো করে আউড়ে যায়, শাশুড়ির বক্তব্যও এক। বিক্রমের থাপ্পড়ের থেকেও যেন বড় হয়ে ওঠে ‘লোকে কী বলবে’? আর এখানেই যেন নিজের জায়গা হারাতে থাকে অমৃতা। আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকে। হাজার সমস্যা হোক। কিন্তু থাপ্পড়? সবাই বলছে, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এমন হয়’ বা ‘লোকে কী বলবে’। কিন্তু অমৃতার কথা ভাবছে না। এমন পরিস্থিতিতে অমৃতা পাশে পায় তার ভাইয়ের বান্ধবী ও এক মহিলা আইনজীবীকে। ডিভোর্স ফাইল করে অমৃতা। তার একটাই বক্তব্য- ‘মারতে পারে না ও…. অধিকার নেই’। কিন্তু দাম্পত্য হিংসার কোনও মামলা দায়ের করে না সে। কিন্তু সমাজ যতই উন্নত হোক, আদতে তো পুরুষতান্ত্রিক। তাই অমৃতার বিরুদ্ধে আনা হয় মিথ্যে অভিযোগ। গল্প এগোয়। পর্দায় লড়াই করে অমৃতা। একা অমৃতা? গল্পের প্রতিটা নারীচরিত্রই তো নিজের জায়গায়, নিজের মতো করে লড়ে। কেউ স্বামীর বিরুদ্ধে, কেউ নিজের সঙ্গে, কেউ আবার সমাজের সঙ্গে।

[ আরও পড়ুন: ‘ভালবাসায় বাঁচুক পৃথিবী’, বলছে আয়ুষ্মানের ‘শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান’ ]

ছবিতে তাপসী পান্নু অসাধারণ। একটার পর একটা ছবিতে নতুনভাবে তাঁকে আবিষ্কার করছে দর্শক। রত্না পাঠক, তনভি আজমি যে যার জায়গায় ঠিকঠাক। দিয়া মির্জার চরিত্রটি যেন একটু তাজা বাতাস দিয়ে যায়। দমবন্ধ করা এই সমাজে সে যেন নিজের মতো করে ভাল থাকার পাসওয়ার্ড তৈরি করে নিয়েছে। মহিলা আইনজীবীর চরিত্রে মায়া সারাও বেশ ভাল। পরিচারিকার চরিত্রে গীতিকা বিদ্যা অহল্যানের কথাও না বললে নয়। তবে আলাদা করে নজর কাড়বেন পাভেল গুলাটি। তাপসীর মতো একজন দাপুটে অভিনেত্রীর সঙ্গে তিনিও পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন। ছবির পুরুষ মুখ্য চরিত্র তাঁর। সেই সুযোগ এতটুকু হাতছাড়া করেননি তিনি। পরিচালকরা তাঁর কথা ভেবে দেখতে পারেন। অভিনেতা অভিনেত্রীদের খুব ভেবেচিন্তে বেছেছেন পরিচালকমশাই। তবে অনুভব সিনহার আরও একটি কৃতিত্ব ছবির ক্লাইম্যাক্স। একেবারে ‘আউট অফ দ্য বক্স’ পরিকল্পনা। পরিস্থিতি শেষে এমন তৈরি হয় দর্শকদের মনে হতে পারে অমৃতা হয়তো এবার জেদ ছেড়ে দেবে। কিন্তু এখানেই ছবির টার্নিং পয়েন্ট। পিছিয়ে আসা তো দূর, বাড়ির বউ হওয়ার চেয়েও বড় দায়িত্ব একার কাঁধে নেয় অমৃতা। কী? সেটা দেখার জন্য সিনেমাহলে যেতেই হবে। কারণ এমন দুর্দান্ত চিত্রনাট্য আর মোড় ঘোরানো গল্প শেষ কবে বলিউড দেখাতে পেরেছে, ভাবতে ভাবতেই কেটে যাবে আড়াই ঘণ্টা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ