চারুবাক: স্বদেশী সত্যান্বেষী ব্যোমকেশকে দর্শক আগেও দেখেছে। কিন্তু বাংলা ফিল্মে রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় থাকা সত্যান্বেষীকে এই প্রথম দেখা গেল। শরদিন্দুর মূল রচনায় (মগ্নমৈনাক) একাত্তরের বাংলাদেশের যুদ্ধ, নকশাল আন্দোলন, রাজ্যে সরকারের নির্বাচন পর্বগুলি ছিল না। এগুলোর চিত্রনাট্যকার কাম ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর অঞ্জন দত্তের সৌজন্য।
অবশ্য এইসব ঘটনা এসেছে বিচ্ছিন্নভাবে সংলাপের মাধ্যমে। মূল কাহিনীতে সেভাবে সংযুক্ত হয়নি। সেখানে পাকিস্তানি গুপ্তচর নীনা, আশ্রিতা তরুণীর খুন হওয়া এবং সেজন্য ব্যোমকেশের সত্যান্বেষণের কাজটি বিস্তারিতভাবেই জায়গা পেয়েছে। কিন্তু মাঝখানে অতীত কাহিনি ভিস্যুয়ালি দেখাতে গিয়ে দু-তিনবার ছন্দ হারিয়েছে। তবে রহস্যের বুনোট ছিল জমাট। সায়ন্তন ঘোষালের পরিচালন কৌশলে কোনওরকম দেখানোপনা নেই। বড্ড সরল উপস্থাপনা। কিন্তু রহস্যধর্মী ছবি যে ঘটনার বাঁক দাবি করে। আসল অপরাধীকে চিহ্নিত করার আগে ‘হুডানইটে’র ধর্ম অনুযায়ী সন্দেহের আলো একাধিক চরিত্রের ওপর পড়া উচিত।
[ আরও পড়ুন: ছবিজুড়ে অ্যাকশন, হৃতিক-টাইগার জুটির জমাটি রসায়ন ‘ওয়ার’-এ ]
সেটা কিন্তু হয়নি। ফলে দর্শক তেমন কোনও চমক অনুভব করেন না। চমক না থাকলে রহস্যের উন্মোচন নিয়ে উপভোগ্য নাট্যবিন্যাসও ঘটে না। সব ঘটনাই খুবই সাবলীলভাবে ঘটে চলে। নীল দত্তর আবহ অবশ্য অনেক জায়গাতেই সেই রহস্যের জায়গাটি পূর্ণ করেছে। শ্রীজাতর লেখা গানটিও সুন্দর।
এই প্রথম ব্যোমকেশের পোশাক (সেই চেনা ধুতি-পঞ্জাবি-চশমায়) পরলেন পরমব্রত। মেক-আপে আরও একটু ভারিক্কি ভাব আনলে ভাল হত। নিতান্তই ছোকরা মনে হয়েছে তাঁকে। তবে অভিনয়ে আবির-যিশু-অনির্বাণের তুলনায় একটু বেশি ভাল বলতেই হবে। অযথা ‘উইটি’ ব্যবহার না করলেও বন্ধু লেখক অজিতের সঙ্গে রসায়ন তৈরিতে কোনও ঘাটতি রাখেননি পরম। বরং রুদ্রনীল অজিত পরবর্তীতে একটু বেশি উইটি হতেই পারেন। স্ত্রীর চরিত্রে গার্গী রায় চৌধুরী তেমন সুযোগ পেলেন কই! বরং অন্য পরিচালকের ছবিতে সোহিনীর সুযোগ ছিল বেশি। ম্যানেজার অঞ্জন দত্তও সুযোগ পাননি। সুমন্ত মুখোপাধ্যায় সুযোগের সদ্ব্যবহারই করেছেন। পরমব্রত-রুদ্রনীল-গার্গীর রসায়নকে আরও জমাটি করে। পরবর্তী পর্বের আশায় থাকবে দর্শক।