সুলয়া সিংহ: সোশাল মিডিয়া। নামখানা যতখানি ‘সামাজিক’, বাস্তবে ততখানিই মানুষকে ঠেলে দেয় একাকীত্বের দিকে। ভারচুয়াল দুনিয়ায় মুখ গুঁজে থাকা প্রজন্ম জানতেই পারে না অ্যাকচুয়াল বিশ্বে কত কী ঘটে চলেছে! পরিবার, পরিজন, বন্ধুবান্ধব, সকলেই গৌণ। তাদের জীবনে মুখ্য ভূমিকা এক এবং একমাত্র সোশাল মিডিয়ার। লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের জোয়ারে গা ভাসাতে দিব্যি ‘ক্লিকবেট’ মুখোশটি পরে নিতে আগ্রহী তারা। তার জন্য নিজেদের যে কোনও পর্যায়ে যেতেও রাজি। ‘লগআউট’ ছবিতে নবপ্রজন্মের সেই ভয়ংকর দিকটিই তুলে ধরেছেন অমিত গোলানির।
বর্তমানে অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ ‘ডিজিটাল ক্রিয়েটার’। নিজেদের আধুনিক প্রমাণ করার চক্করে এ তকমা গায়ে তুলতে ভীষণ পছন্দ এ প্রজন্মের একটা বড় অংশের। কনটেন্টের মাথামুণ্ডু যা-ই হোক না কেন, লক্ষ্য একটাই। যেনতেনপ্রকারে তাকে ভাইরাল করতেই হবে। সেই ভাইরালের পথে যদি পরিবারও বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে সে কাঁটাও সরিয়ে ফেলাকেই শ্রেয় বলে মনে করে তারা! বাবিল খান অভিনীত ‘প্র্যাটম্যান’ সেই সমস্ত ডিজিটাল ক্রিয়েটারদেরই প্রতিনিধি এই ছবিতে। যার ঘুম ভাঙে ফলোয়ারের সংখ্যার লাইভ আপডেট দেখে। যে ব্রেকফাস্ট করে ‘প্রতিযোগী’ ডিজিটাল ক্রিয়েটারদের পোস্ট দেখে। মোবাইলে কথা বলে কনটেন্টের বিষয়ভাবনা নিয়ে। যার কাছে পরিবারিক সমস্যা, প্রাক্তন প্রেমিকার বিয়ের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ১ কোটি ফলোয়ারের মাইলস্টোন ছোঁয়া।
ভারচুয়াল দুনিয়ার বাসিন্দাদের নিয়ে বেশ খোশমেজাজেই কাটছিল ‘প্র্যাটম্যানে’র জীবন। কিন্তু আচমকা এক ‘পাগল’ ফ্যানের আবির্ভাবে প্র্যাটম্য়ান মুখোশের আড়ালে থাকা প্রত্যুশের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। কোনওভাবে প্রত্যুশের মোবাইলটি চুরি করে নেয় সেই মহিলা ফ্যান। ব্যস, বাবিলের প্রাণপাখি চলে যায় তার হাতে। রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়ে বাবিল অর্থাৎ প্রত্যুশ। সেই অতিবড় ফ্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও মোবাইলটি সহজে ফিরে পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না প্রত্যুশের। সেভাবেই এগোয় ঘটনাপ্রবাহ।
ইন্টারনেটে বুঁদ প্রজন্ম যে নিজের প্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারের থেকে কতখানি অনুপ্রাণিত, সাক্ষী নামের ফ্যান তারই উদাহরণ। প্র্যাটম্যানের জন্য পাগল সাক্ষীরা কখন তাদের আইডলের জীবনে ভয়ংকর শত্রুতে পরিণত হয়, কে বলতে পারে! তেমনই ঘটনা ঘটে ‘লগআউটে’ও। সোশাল মিডিয়া আসক্তি মানুষকে মৃত্যুর পথেও ঠেলে দিতে পারে! পরিচালক একজন ইনফ্লুয়েন্সার এবং একজন ফ্যানকে সামনে রেখে প্রত্যেককে যেন সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন।
এহেন বিষয়ভাবনা অবশ্য বলিউডে নতুন হয়। অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত CTRL ছবিতেও সোশাল মিডিয়া আসক্তির বিষয়টি উঠে এসেছিল। যদিও ‘লগআউটে’র শেষটা আরও খানিকটা বাস্তবধর্মী হতেই পারত। তবে আধুনিকতার নামে এ প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিজেদের ঠিক কোন ভয়ংকর গহ্বরের দিক ঠেলে দিচ্ছে, তারই নিদর্শন এ ছবি। গোটা ছবিতে কার্যত একক অভিনয় বাবিলের। ইরফানপুত্রের অভিনয়ের কোনও তুলনাই হয় না। ছবিতে একাই দর্শকদের সাসপেন্সে রাখলেন তিনি। হাজারো ভিড়ের মাঝেও ইনফ্লুয়েন্সারের একাকীত্ব একাই অনুভব করালেন। জি ফাইভে মুক্তি পাওয়া এ ছবির টার্গেট অডিয়েন্স হয়তো সীমিত। কিন্তু বর্তমান এআই আর টেকপাগলদের দুনিয়ায় এ ছবি খুবই জরুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.