বিশাখা পাল: ‘হাউজফুল’ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম দু’টি ছবি তবু যা দর্শক পছন্দ করেছিল, ‘হাউজফুল ৩’ তো বক্স অফিসে মাথা তুলতেই পারেনি। সেদিক থেকে ‘হাউজফুল ৪’ খুব একটা বেশি সাড়া জাগাতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্তত সিনেমাহলের অবস্থা দেখে তো তাই মনে হল। সচরাচর কমেডি ছবিতে হল ফাঁকা যায় না। কিন্তু ‘হাউজফুল ৪’ ব্যতিক্রম। হাউজফুল তো করতে পারলই না ‘হাউজফুল ৪’, এমনকী অর্ধেক আসনও ভরানোর দৌড়েও পিছিয়ে পড়ল।
কমেডির দুনিয়ায় সাজিদ-ফারহাদ জোড়ির বেশ নামডাক করেছে। ‘গোলমাল এগেইন’, ‘সিম্বা’, ‘ডাবল ধামাল’-এর মতো ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তাঁরা। এঁদেরই মধ্যে ফারহাদ সামজি পরিচালনা করেছেন ‘হাউজফুল ৪’ ছবিটি। কিন্তু তাঁর লেখনিতে যেমন ধার, ডিরেক্টরস সিটে বসে তার এক বিন্দুও নজরে পড়ল না। বরং এ যেন কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা। এর মাঝে পড়ে জনি লিভার আর নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিও যেন চিঁড়ে চ্যাপটা হয়ে গিয়েছেন। ‘হাউজফুল’ ছবি থেকেই এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন চাঙ্কি পাণ্ডে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। প্রথম তিনটি ছবিতেও যেমন তাঁকে পরিচালকরা ব্যবহার করেননি এখানেও তাই।
[ আরও পড়ুন: জমল না চিত্রনাট্য, ছবিজুড়ে প্রতিশোধের আগুনেই জ্বললেন ‘লাল কাপ্তান’ সইফ ]
ছবিটি আসলের পুনর্জন্মের গল্প। ১৪১৯ সাল সিতামগড় রাজ্যে তিনটি প্রেমকাহিনী পূর্ণতা পেতে পেতেও পায়নি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রত্যেকের। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আবার সেই তিনজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে ২০১৯ সালের পটভূমিকায় এনে ফেলেছে। কিন্তু ওপরওয়ালা এখানে তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছে। ৬০০ বছর আগে অক্ষয় কুমার-কৃতী স্যানন, রীতেশ দেশমুখ-পূজা হেগড়ে ও ববি দেওল-কৃতি খারবান্দার জুটি ছিল। কিন্তু বর্তমানে সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। বস্তত, এখন অক্ষয়-রীতেশ-ববি যাঁদের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন, হিসেব মতো তাঁরা একে অপরের বউদি হন। ঘটনাচক্রে অক্ষয়ের স্মৃতি ফিরে আসে। আর তিনি বাকিদের স্মৃতি ফেরানোর কাজে লেগে পড়েন।
গল্পে হাসির খোরাক বেশ কষ্ট করে এনেছেন পরিচালক ফারহাদ। ক্লাইম্যাক্সের কয়েকটি দৃশ্যে দর্শক প্রাণখুলে হাসতে পারবে ঠিকই। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই ভাঁড়ামো চোখে পড়েছে। অক্ষয়-রীতেশ ইতিমধ্যেই নিজেদের কমেডিয়ান বলে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু এই ছবির চিত্রনাট্যটাই এমন যে তাঁদের কিছু করার নেই। যেমন হাত পা বাঁধা জনি লিভার ও চাঙ্কি পাণ্ডের। ববি দেওলের উপস্থিতিটুকুই ছবিতে রয়েছে। নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। একই কথা প্রযোজ্য তিন অভিনেত্রী কৃতী স্যানন, কৃতী খারবান্দা ও পূজা হেগড়ের ক্ষেত্রেও। তবে ছবিতে উপরি পাওনা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। একটি গানে আর কয়েকটি দৃশ্যে রয়েছেন তিনি। নিজের চরিত্রটুকু ফুটিয়ে তুলতে অভিনয়ে কোনও খামতি রাখেননি তিনি। আর আলাদা করে বলতে হয় রানা দাগ্গুবতির কথা। ছবিতে হিংস্র এক জাতির সর্দার হিসেবে মন ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু অভিনেতাদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও ‘হাউজফুল ৪’কে কোনওভাবেই ভালও বলা যাবে না। তবে যদি মস্তিস্ককে ঘুম পাড়িয়ে সিনেমাহলে ঢোকেন, তবে মন্দের ভাল লাগলেও লাগতে পারে।