Advertisement
Advertisement
Dawshom Awbotaar review

Dawshom Awbotaar Review: থ্রিলারে মিলায় বস্তু, সম্পর্কে বহুদূর! প্রসেনজিৎ-অনির্বাণের জমজমাট ডুয়েট ‘দশম অবতার’-এ

প্রসেনজিৎ-অনির্বাণ, জয়া না যিশু, ছবির 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' কে?

Srijit Mukherji helmed Dawshom Awbotaar review | Sangbad Pratidin
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:October 19, 2023 7:10 pm
  • Updated:October 19, 2023 8:09 pm

অপরাধের মানচিত্রে প্রসেনজিৎ-অনির্বাণ জুটির ডুয়েট খুঁজে পেল ভালোবাসার জমি। সৃজিত
মুখোপাধ‌্যায়ের ‘দশম অবতার’ দেখে লিখছেন বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়

ব‌্যক্তিগতভাবে ছবির ক্ষেত্রে চরিত্রদের মনস্তত্ত্ব, সম্পর্কে লেনদেন সবসময়ই আমাকে বাকি সব কিছুর থেকে বেশি আকর্ষণ করেছে। সৃজিত মুখোপাধ‌্যায়ের পরিচালিত ‘দশম অবতার’ দেখতে গিয়ে সেটা আরও একবার টের পেলাম। ‘বাইশে শ্রাবণ’ এবং ‘ভিঞ্চিদা’-র ডবল প্রিক্যুয়েল এই ছবি। সৃজিতের কপ ইউনিভার্সের কেন্দ্রে রয়েছে মার্ডার, চেজ, থ্রিল, সিরিয়াল কিলার, এবং ‘প্রবীর রায়চৌধুরি’ ও ‘বিজয় পোদ্দার’-এর মিঠে-কড়া সম্পর্ক, বাকসংঘাত। কিন্তু ছবিটা দেখতে গিয়ে আমার কাছে শেষ কথা বলেছে বন্ধুত্ব, প্রেম, মায়া, হতাশা, পরাজয়, প‌্যাশন। ‘প্রবীর রায়চৌধুরি’, ‘বিজয় পোদ্দার’, ‘বিশ্বরূপ’ এবং ‘মৈত্রেয়ী’-র পারস্পরিক ঘাত-প্রতিঘাতে জিতে গিয়েছে জীবন নামক আশ্চর্য বিষয়বস্তুটি। ছবির শুরুতেই আমরা দেখি শহরে হাজির অভিনব সিরিয়াল কিলার বিশ্বরূপ যে নিজেকে বিষ্ণুর অবতার মনে করে। তার খুনের পদ্ধতিতেও রয়েছে সেই ‘মাইথোলজিক‌্যাল ক্লু’। মনে পড়ে ‘বাইশে শ্রাবণ’-এ আমরা দেখেছিলাম ‘পোয়েটিক ক্লু’। কেস জটিল। তাই ডাক পড়ে দুঁদে অফিসার প্রবীর রায়চৌধুরির। ‘বাইশে’-র মতো ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ কপ নন, তিনি এখানে অনেক জীবন্ত। তবে মদ এবং এনকাউন্টারের নেশা ধরতে শুরু করেছে। তবু প্রবীরের জহুরির চোখ চিনে নেয় ঠিক লোককে। ডেকে নেন জুনিয়র অফিসার ‘বিজয় পোদ্দার’-কে। এদিকে খুন আটকানো যাচ্ছে না। প্রভাবশালী অ‌্যান্টিসোশ‌্যাল, অসৎ ডাক্তার, মলেস্টার শিক্ষকরা হল বিশ্বরূপের টার্গেট। প্রবীর-পোদ্দার জুটি খানিকটা এগিয়ে মাঝপথে আটকে পড়লে, সাহায‌্য করতে এগিয়ে আসে মনোবিদ মৈত্রেয়ী। তৈরি হয় অন‌্য কেস। মৈত্রেয়ীর প্রেমে পড়ে যায় বিজয়। কিন্তু এই প্রেমের পথ খুব মসৃণ নয়, যেমন মসৃণ নয় প্রবীর এবং বিজয়ের সম্পর্ক। সৃজিত বরাবরই বেছে নেন দোমড়ানো-মোচড়ানো মানুষদের। ‘বাইশে শ্রাবণ’ থেকে আমরা জানি প্রবীরের ব‌্যক্তিগত বেদনার ইতিহাস-স্ত্রী-পুত্রর বীভৎস মৃত্যু। বিজয়ের বেড়ে ওঠাও সহজ নয়। পতিতাপল্লিতে বড় হওয়া বিজয় পুলিশের ডিউটি করতে যাওয়ার আগে ভোরবেলায় পড়ায় সেখানকার শিশুদের। কাস্টমারের চাহিদা মিটিয়ে ছেলেকে নিয়ে দেরি করে আসা মায়ের জন‌্য বিজয়ের চাহনিতে পড়ে থাকে দীর্ঘশ্বাস! বাবার কাছে পৌরাণিক গল্প শুনে বড় হওয়া বিশ্বরূপের জীবনেও একটা গভীর বেদনা আছে তা পরে জানা যায়। মৈত্রেয়ী মনোবিদ হয়েও একটু নার্ভাস এবং বিজয়ের প্রেমের কাছে অপারগ। এ সবের কারণ জানতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে ক্লাইম‌্যাক্স পর্যন্ত।

Advertisement

Advertisement

এটা ঠিক এই ছবিতে দুই অফিসারের ইগোর লড়াই, কথার জাগলারি নিঃসন্দেহে একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট ফ‌্যাক্টর যোগ করেছে। কথার খেলায় চেকমেট পরিস্থিতি তৈরি করা সৃজিতের সিগনেচার স্টাইল। কিন্তু এই ডিবেট কম্পিটিশন মাঝে মাঝে ছবির গতিকে একটু স্লো করেছে। অন্তত প্রথমভাগে। সংলাপ এবং গল্প বলা কমিয়ে আরও একটু কমপ‌্যাক্ট করে ছবির দৈর্ঘ কমালে বরং ভালোই হত। তাই প্রথমার্ধে অভিনেতাদের অ‌্যাকশন প‌্যাকড আবির্ভাব, দক্ষিণী কায়দায় স্লো মোশন, ব‌্যাকড্রপে ধুন্ধুমার মিউজিক, প্রসেনজিৎ-অনির্বাণ জুটির বাক-দ্বন্দ্ব তৈরি করা সৃজিত নয়, বরং আমার কাছে জিতে গিয়েছে অন‌্য সৃজিত। যে সৃজিত প্রবীর এবং বিজয়কে পরস্পরের কাছে ঠেলে দেয় খানিক আগের দৃশ্যে দু’জনের তুমুল ঝগড়ার পর। যে সৃজিত বিজয়কে মৈত্রেয়ীর কাছে সঁপে দেয় অস্থির অবস্থাতেও, প্রেমে এবং কবিতায়। ‘বাইশ’-এর মতো এখানেও যে সৃজিত কবিতার আশ্রয় নেয়। কিংবা যে সৃজিত ‘সব ভালো যার শেষ ভালো’-তে বিশ্বাস করতে চায় না, সেট্‌ল করতে চায় না। বিজয় আর মৈত্রেয়ীকে কাছে টেনে আবার দূরে ঠেলে দিয়ে এমন এক ঝগড়ার দৃশ‌্য সৃষ্টি করে যেখানে দুজনেই রক্তাক্ত, দুজনেই বড় অসহায়। কিংবা ব্রিলিয়ান্ট স্বপ্নদৃশ‌্য, তৈরি করেছে যে সৃজিত। এই সব কিছুর মধ্যে অনুপম রায়ের সুরে গানগুলো মনে থেকে যায়। কানে লেগে থাকে ‘আমি সেই মানুষটা আর নেই’।

Dawshom-Awbotaar-1

এবারে আসি অভিনেতাদের কথায়। কেবল প্রিক্যুয়েল বলে নয়, ‘প্রবীর রায়চৌধুরি’র চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ‌্যায় ছাড়া আর কেই বা করতে পারতেন। তীক্ষ্ণ, ক্ষুরধার বুদ্ধি সম্পন্ন পুলিশ অফিসারের কাঠিন্যের খোলসের ভিতর এক নরম মানুষ আছে সেটা তিনি কী অনায়াসে বের করে আনতে পেরেছেন ছোট্ট সংলাপের আঁচড়ে, ‘তুই ঠিক আছিস?’ কিংবা তার গভীরের যন্ত্রণা নিরুত্তাপভাবে তুলে ধরেছেন যখন বিজয়কে বোঝাচ্ছেন স্ত্রী-পুত্রর পুড়ে যাওয়া দেহের কোন অংশ তিনি কেন সংগ্রহ করেছেন। এই সব দৃশ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ‌্যায় অনবদ‌্য। অনির্বাণ ভট্টাচার্য সম্পর্কে যাই বলব কম বলা হবে। এই ছবিতে তিনি একই সঙ্গে চৌকস, বুদ্ধিদীপ্ত, আগলহীন, চালাক, বোকা, ভেবলে যাওয়া, পোড় খাওয়া মানুষ। ‘স‌্যরের’ সামনে নিজের ভুল স্বীকার, কিংবা তাকেই আবার বাক‌্যবাণ প্রক্ষেপণ, এই দুয়েই তিনি সমানভাবে সত্যি। প্রেমে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে সমস্ত জ্বালা উগরে দেওয়ার দৃশ্যে তিনি আর পাঁচজনের মতো ছটফট করা রক্তমাংসের প্রেমিক। এই ছবিতে যে পারফরম‌্যান্স সবচেয়ে জোরাল দিক অনির্বাণের অভিনয় তা বুঝিয়ে দেয়। ‘দশম অবতার’-এ যিশু সেনগুপ্তর অভিনয় একটা কনট্রাস্ট তৈরি করে। এবং সেটাই যিশু অভিনীত চরিত্র ‘বিশ্বরূপ’-এর তুরুপের তাস। শান্ত, বিনম্র, সিরিয়াল কিলার তিনি। মাথা গরম করেন না। প্রবীর এবং পোদ্দারের মতো গালাগালি দেওয়াতেও বিশ্বাস করেন না। দুই ম‌্যাভেরিক পুলিশ অফিসারের মধ্যে তিনি ক‌্যারিশম‌্যাটিক সিরিয়াল কিলার। ‘মৈত্রেয়ী’-র চরিত্রে জয়া এই তিনজন পুরুষ চরিত্রের মধ্যে হলেন, ‘ব্রিজ ওভার ট্রাবলড ওয়াটার’ গানটার মতো। কিন্তু এই সেতু চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁরই হাতে। শুরু থেকে তার অভিনয়ে রয়েছে সেই ডুয়ালিটি। কখনও তিনি নড়বড়ে, কখনও সর্পিল বিদ্যুল্লতা, কখনও বিসর্জনের মতো করুণ। আগেই বলেছি না, সৃজিত মুখোপাধ‌্যায় দর্শক এবং অভিনেতাকে স্বস্তিতে রাখতে চান না। তবে পুজোয় সবধরনের স্বাদ একটি ছবিতে পেতে হলে ‘দশম অবতার’ দেখতেই হবে।

ম‌্যান অফ দ‌্য ম‌্যাচ : অনির্বাণ ভট্টাচার্য

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ