নির্মল ধর: মণিকান্তপুর নামে সত্যিকার কোনও জায়গা এই বাংলায় আছে কি না, কিংবা থাকলেও সেখানে নৃসিংহপ্রসাদ রায় নামে কোনও জমিদার বা রাজা সত্যিই আদৌ ছিল কি? আবার তিনি থাকলেও মোগল রাজা সুজা তার বাড়িতে এসে ‘খাজানা রেখে গিয়েছিলেন’, এমন কোনও ঐতিহাসিক সত্য আমাদের জানা নেই। আসলে ইতিহাসকে ভিত করে উপন্যাস বা ফিকশন লিখতে হলে লেখকের কল্পনা, আর ইতিহাসের কিছু ঘটনার সঙ্গে সাহিত্যরস ও বুদ্ধির সুন্দর মিশেল দরকার। যেমনটা আমরা পাই শেকসপিয়র, বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায়। নিজের নতুন ছবিতে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় (গুপ্তধনের সন্ধানে) সেই কাজটি বেশ পরিপাটিভাবেই সর্বাগ্রে করে রেখেছেন। নিখাদ বাঙালিয়ানায় মোড়া তাঁর ও শুভেন্দু দাসমুন্সির গল্পটি। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দেওয়াল ভেঙে, সম্ভব-অসম্ভবের কল্পনা গুঁড়িয়ে পরিচালক মণিকান্তপুরে সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো ভেঙে পড়া বাড়িতে বহুমূল্য খাজানার অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে রহস্য, পালটা রহস্য, খলনায়কিপনা এমনকী রোমান্সও পাঞ্চ করে বেশ একটি জমাটি ‘বই বানানোর রসদ’ তুলে ধরেছেন।
[ফের ছোটপর্দায় প্রসেনজিৎ, এবার মাতালেন নাচের মঞ্চ]
আর বেশ একটি উপভোগ্য, গোলগাল ছবি বানিয়েছেন। বাংলা সিনেমায় এমনিতেই এখন রহস্য আর গোয়ান্দের কাহিনির যানজট। তারই মধ্যে অক্সফোর্ডের ইতিহাসের অধ্যাপক সুবর্ণ সেনের (আবির) মগজাস্ত্রের ব্যবহার ফেলুদার চাইতেই বা কম কিসে! ছড়ার মধ্যে ধাঁধার লুকিয়ে রাখা উত্তর খুঁজে পাওয়া থেকে ভিলেন দশাননের (রজতাভ) গুণ্ডাবাহিনীকে জব্দ ও শারীরিক শায়েস্তা করার কাজেও অধ্যাপক বেশ দড় দেখা গেল। দুই সঙ্গী পেটুক আবির (অর্জুন) ও প্রেমিকা ঝিনুক (ইশা সাহা) দারুণ মেজাজে সঙ্গত করে গিয়েছেন। অবশ্য তাঁদের এই রোমান্সে লঙ্কা-পেঁয়াজের স্বাদ জুগিয়ে গিয়েছেন অক্সফোর্ডের অধ্যাপক। অধুনা বাংলা সিনেমায় বাঙালির সংস্কৃতি, সাহিত্যবোধ ও শিল্প মনস্কতা নিয়ে এমন গাঢ় বিশ্লেষণ এবং রেফারেন্স কোনওটাই তেমন দেখা যায় না।
[এভাবেই প্রয়াত স্ত্রী শ্রীদেবীকে শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে চলেছেন বনি কাপুর]
সবদিক থেকেই সাধু প্রচেষ্টা। অভিনয়ে প্রধান ভূমিকায় আবির চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজস্ব স্টাইলের সঙ্গে কমেডি টাচগুলো দিয়েছেন ভাল। ভাইপো আবির হয়েছেন অর্জুন চক্রবর্তী। বেশ সোচ্চার, সপ্রতিভ এবং স্পন্টেনিয়াস তাঁর অভিনয়। ঝিনুকের চরিত্রে ইশা সাহা শুধুই ঠিকঠাক। একই কথা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে নিয়েও। আর ভিলেন রজতাভ দত্ত তো স্বমহিমায় হাজির। বিক্রম ঘোষের আবহ এবং এন্ড স্ক্রোলের ছড়াদার গানটি বেশ মজার। ক্যামেরায় সৌমিক হালদার তাঁর কাজে একই রকম নিষ্ঠাবান। কিন্তু মোদ্দা প্রশ্ন হল, আজকের বাঙালি প্রজন্ম নিজেদের বাঙালিত্ব নিয়ে কতটা আত্মশ্লাঘা অনুভব করে যে তারা ভিড় করবে এ ছবি দেখতে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.