সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শব্দ নিয়ে খেলা করেন তিনি? নাকি তাঁকে নিয়েই খেলতে ভালবাসে শব্দেরা? এ প্রশ্নচিহ্ন পেরলেই ভোর হয়। অনুভূতির দিকচক্রবাল পেরিয়ে আসে প্রথম আলো। জন্ম হয় কবিতার। আর কে যেন বলে ওঠে, ‘তুম আগেয়া তো নুর আগেয়া হ্যায়…।’ কে এই তুমি? কে সেই কুয়াশাবৃতা? আমরা সে উত্তর খুঁজি না। খুঁজতে চাইও না। শুধু গুলজারে মজে যেতে যেতে আপামর দেশবাসী জেনেছে, জীবনের সঙ্গে শতরঞ্জ খেলাই আসলে জীবন। সেখানে হারজিৎ নেই। ‘নারাজ’ হওয়া নেই, শুধু ‘মাসুম সওয়ালে’ নাজেহাল হওয়াতেই আছে উপভোগের সৌন্দর্য।
জীবনের তরলিত চুমুকে নেশাতুর তিনি। আর সে নেশা ছড়িয়ে দেন তাঁর শব্দে, কবিতায়। জীবনের আয়নায় দেখতে শেখান অন্যরকম প্রতিবিম্ব। ফিরে ফিরে আসে এক ‘তুমি’র কথা। যাকে ছাড়া জীবনে ‘সিকবা তো নেহি’। সেই তুমির খোঁজে মেতে ওঠেন তাঁর অগণিত ভক্তরাও। কখনও তাঁর ছবির নায়িকাদের মুখে পড়ে সেই তুমির ছায়া। কিন্তু সিনেমা তো ২৪ ফ্রেমে লেখা মিথ্যে। মিথ্যে জীবনের সত্যি আয়না। আবার সত্যি জীবনেও কত না মিথ্যের আশ্রয়! যা না থাকলেই সত্যি ভাল হতো। আর এই খেলায় গুলজার পৌঁছে দেন এক অনুভবের আশ্রয়ে। যেখানে দাঁড়িয়ে শুধু বলতে ইচ্ছে করে, ‘কাঁহাসে চলে, কাঁহাকে লিয়ে, এ খবর নেহি থি মগর, কোই ভি সিরা যাঁহা যা মিলা, ওহি তুম মিলোগে…’
আজ তাঁর জন্মদিন। আমরা বিস্ময়ে দেখি, নিজের শব্দ নিয়ে, জীবনের বোধ নিয়ে শিশুর মতো খেলায় মেতে আছেন তিনি। ‘নেগলক্টেড পোয়েমস’ বা ‘সাসপেক্টেড পোয়েমস’! নিজের কবিতাকে কেউ অবহেলিত তকমা দিতে পারে? কিংবা কবিতার প্রতি রাখতে পারেন সংশয়! পারেন, যদি তিনি গুলজার হন। তাই তাঁর কবিতার বইয়ের নাম আমাদের বিস্মিত করে। চমকিত করে। আসলে এও জীবনের সঙ্গে সেই একান্ত খেলারই অন্য নাম। আমরা দেখি জলের উপর বুদবুদের মতোই নিজেকে বদলাতে বদলাতে এগিয়ে চলেছেন একজন শুভ্র মানুষ। পথ চলতে চলতে তিনি ছুঁয়ে যান সমসময়কে। বলেন, একটা ভাষাই শুধু রাষ্ট্রভাষা নয়। দেশের অন্যান্য ভাষারও সৌন্দর্য আছে। সেগুলোকেও স্বীকার করার প্রয়োজন। জানান, দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা থেকে এখনও অনেক দূরে। বলেন, কোনও রাজনৈতিক আদর্শ তাঁকে প্রভাবিত করে না। বরং রাজনীতির নানা আদর্শের ভিক্টিম হতে হয় তাঁকে। যা হতে হয় অসংখ্য সাধারণ মানুষকেও। সে দেশভাগের কাঁটাতার হোক বা বিভাজনের ছুরি। আমাদের ক্লান্ত করে। তবু গুলজারই পারেন সীমান্ত পেরিয়ে মেহেদি হাসানের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতে। আসলে তিনি ছিলেন বলেই তো আমরা জেনেছি, হাসির ভিতরেও কত কান্না লুকনো থাকে। শব্দের পরতে মিশে তাকে কত ব্যথার পরশ।
আজ তাঁর জন্মদিন। হাসি-ব্যথার এই ঢেউখেলানো জীবনের সৌন্দর্যকে চিনে নেওয়ার দিন। মুখে হাসি আর চোখে জলের যে প্রতিবিম্বিত জীবন, তাকে ছুঁয়ে থাকার দিন। আর এই সব অনুভূতির ঝাঁপি খুলতে এ শহরেই আসছেন তিনি। সংবাদ প্রতিদিন ও দেজ পাবলিশিং -এর যৌথ উদ্যোগে ২৬ আগস্ট শহরে আসছেন তিনি। প্রকাশিত হবে তাঁর দু’টি বই। সেইসঙ্গে থাকবে তাঁর অনুভবের দুনিয়ার সন্ধানও। খুঁজে পাওয়া তাঁর স্মৃতির শহরকে। জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা বরং অপেক্ষা করি সে মুহূর্তের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.