Advertisement
Advertisement

Breaking News

দেখছি ছুরিবিদ্ধ তরুণের লাশ ভেসে চলেছে, খেয়াল গাইব কী করে?

কোমরে বন্দুক ধরল একজন, তারপর...

kabir Suman unveiled peeks from the memories of a maestro: part-7
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 14, 2018 4:11 pm
  • Updated:March 13, 2024 3:10 pm

‘মানবতার দোহাই বন্ধুরা সংগঠিত হন, ভয় পাবেন না।’- নব্বইয়ের কলকাতা আমূল কেঁপে উঠেছিল এ আহ্বানে। বড় ভাঙচুরের সময় ছিল সেটা। বিশ্বায়নের হাওয়ায় ঢুকে পড়ছে অনেক কিছু। ছেড়ে যাচ্ছে আরও অনেক কিছু। গিটার হাতে তবু সেদিন তিনি বলেছিলেন, হাল ছেড়ো না। সেই নাগরিক কবিয়াল পা দিচ্ছেন সত্তরে। জীবনের সাত সমুদ্র পারের কত অভিজ্ঞতা ভিড় করছে। সে সবেরই উদযাপন তাঁর জন্মদিনে, নজরুল মঞ্চে। তার আগে জীবনের সাত দশকের পারে দাঁড়িয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন কবীর সুমন। সঙ্গী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। আসুন পর্বে পর্বে আবিষ্কার করি প্রিয় সুমনকে। আজ শেষ পর্ব

প্রথম পর্ব:  রেডিওর সিগনেচার টিউন শুনলে মনে হত একা চিল উড়ে যাচ্ছে 

Advertisement

দ্বিতীয় পর্ব:  কচ্ছপের কাছে বন্ধুতা শিখেছি, সুকুমারের কাছে জ্যান্ত বাংলা ভাষা

Advertisement

তৃতীয় পর্ব:  সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত! মাস্টারমশাই কাঁদছেন, আমারও চোখে জল

চতু্র্থ পর্ব: আমির খাঁ সাহেবের অনুষ্ঠান হলে পোষা কুকুরের মতো ছুটতাম

পঞ্চম পর্ব:  গানে যে পাশের বাড়ির মেয়ের কথা বলেছি, তিনি সত্যিই ছিলেন

ষষ্ঠ পর্ব:  ভাল ক্রিকেট খেলতাম, কিন্তু বাবা একটা সাদা ফুলপ্যান্ট দিলেন না

ছোটবেলা থেকে কৈশোর, যৌবন- গান নিয়েই আমার কেটেছে। আমি রাজনীতির লোক ছিলাম না জানেন। কলেজেও না। যদিও তখন সময়টা খুব উত্তাল। আসলে সারাক্ষণ রেওয়াজ রেওয়াজ, সময়ও ছিল না অন্য কিছুর জন্য। আর প্রচুর পড়তাম। প্রচুর মানে প্রচুরই। হ্যাঁ, লেখাপড়ায় ভাল ছিলাম না ঠিকই। তবে সবকিছু গোগ্রাসে পড়তাম।

কচ্ছপের কাছে বন্ধুতা শিখেছি, সুকুমারের কাছে জ্যান্ত বাংলা ভাষা ]

মাস্টারমশাইয়ের কাছেই গান শিখে চলেছিলাম। কিন্তু একটা সময়ের পর আর ঠিক রিলেট করতে পারছিলাম না। আগের এক পর্বে জানিয়েছিলাম যে, খেয়াল শেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আসলে সময়টা যেরকম ছিল, তার সঙ্গে যে গান গাইছি, দুটোকে কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। এখন যে বাড়িটায় আমি থাকি, আমার বাবা পরের দিকে ওই বাড়িটা তৈরি করেছিলেন। ওর পাশেই একটা খাল আছে। সেখানেই একদিন দেখেছিলাম ছুরিবিদ্ধ লাশ ভেসে চলেছে। সেটা ওই একাত্তর-বাহাত্তর সাল। এই দৃশ্য আমাকে আমূল ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল। সকালে হয়তো আমি ‘ললিত’ গেয়েছি, আর পরে বেরিয়েই দেখছি এই দৃশ্য। এই যে অদ্ভুত বিপ্রতীপ অবস্থা, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। চারিদিকেই শিল্পের ভাষা তখন বদলাচ্ছে। নাটক-সাহিত্য সর্বত্র। সত্যজিৎ সিনেমার সংলাপ বদলে দিচ্ছেন। কিন্তু গানে সেই ভাষাটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এটা অনেকদিন থেকেই হচ্ছিল। শেষে মাস্টারমশাইকে গিয়ে বললাম যে, আর পারছি না।

 সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত! মাস্টারমশাই কাঁদছেন, আমারও চোখে জল ]

আরও একটা ঘটনা ঘটল। আমি কখনওই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু ওই ঘটনার আমার মনে গভীর দাগ কেটেছিল। যাদবপুর ৮বি থেকে বাসে উঠছি। হঠাৎ একজন খোচর আমার পেটে একটা বন্দুক ধরল। নকশাল সম্বোধন করে আমার মাকে উদ্দেশ্য করে কুৎসিত ইঙ্গিত করল। ভালই করেছিল। সেদিন থেকে আমার মনটা পুরোপুরি বদলে গেল।

 গানে যে পাশের বাড়ির মেয়ের কথা বলেছি, তিনি সত্যিই ছিলেন ]

এরপরই দেশ ছেড়ে চলে যাই। পালাতেই হল বলা যায়। সবকিছু ছেড়ে চলে যাওয়ায় একদিক থেকে যেমন খারাপ লাগত, তেমন আবার ভাল লাগাও ছিল। নতুন পৃথিবী। জার্মান ভাষাটাও ভাল করে শিখলাম। তাছাড়া অন্য অনেক কিছুও শিখলাম। বেতার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হল। পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলাম। অনেক অভিজ্ঞতা এল ঝুলিতে। সেও আর এক ধরনের নিজেকে তৈরি করা।  জার্মানি থেকে ফিরে একবছরের মধ্যে আবার গেলাম আমেরিকায়। ভয়েস অফ আমেরিকায় চাকরি পেয়েছিলাম। সেখানেও আর এক ধরনের প্রস্তুতি। সব প্রস্তুতিই বোধহয় পরবর্তী জীবনে আমার গানে, আমার জীবন দর্শনে ছায়া ফেলেছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ