সোমনাথ লাহা: আটের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে মুক্তি পেয়েছিল মহানায়ক উত্তমকুমার পরিচালিত ছবি ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’। ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্তর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত সেই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, মিঠুন চক্রবর্তী, শমিত ভঞ্জ, অসিত বরণ ও সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। রীতিমতো সুপারহিট হয়েছিল সেই ছবি। নীহাররঞ্জন গুপ্তর লেখা সেই কাহিনিই এবার দেখা যাবে ছোট পর্দায়। আকাশ ৮-এ ‘এক মাসের সাহিত্য’ সিরিজে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে দেখা যাবে ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’। যেটি পরিচালনা করেছেন মণীশ ঘোষ। প্রযোজনায় অশোক সুরানা।
কাহিনি আবর্তিত হয়েছে দু-দু’টি খুনের দায়ে অভিযুক্ত নটসূর্য চন্দ্রকুমার রায়ের বিচারকে কেন্দ্র করে। বিচারপর্ব চলাকালীন জানা যায় চন্দ্রকুমার আসলে কৃষ্ণসায়রের জমিদার শশীশেখর ও তার স্ত্রী সুরেশ্বরীর একমাত্র পুত্র। তার আসল নাম শশাঙ্ক। মায়ের ইচ্ছায় শশাঙ্ক স্বর্ণকে বিবাহ করলেও তার মনজুড়ে থাকে কৃষ্ণসায়রের আরামকুঠিতে বন্দিনী সুন্দরী রমণী চন্দ্রা। তার টানেই শশাঙ্ক বারংবার আরামকুঠিতে ছুটে যায়। ঘটনাচক্রে জানা যায়, চন্দ্রাকে আরামকুঠিতে আটক করে রেখেছেন শশাঙ্কর পিতা শশীশেখর। ঘটনাক্রমে এই চন্দ্রার মা অপর্ণাকে ভালবেসে ছিলেন শশীশেখর। তাকে নিজের মনের মতো করে গড়ে তোলার জন্য তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার এক কর্মচারী রঘুবীরকে।
কিন্তু অপর্ণা রঘুবীরের সঙ্গে ভালবাসায় জড়িয়ে পড়ে। গর্ভবতী অপর্ণাকে নিয়ে পালানোর সময় শশীশেখরের ছোড়া বর্শায় মারা যায় রঘুবীর। অপর্ণা ঠাঁই পায় ব্রাহ্মণ কুটিরে। সেখানেই সে জন্ম দেয় চন্দ্রার। চন্দ্রা বেড়ে ওঠে ব্রাহ্মণ পুত্র সূর্যকান্তর সঙ্গে। কিন্তু শশীশেখর অপর্ণার জীবিত থাকার খবর পেয়ে অতর্কিতে আক্রমণ করে চন্দ্রাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখে। পরে সূর্যকান্ত চন্দ্রার সন্ধান করছে জেনে শশীশেখর তাকে নিয়ে আসে আরামকুঠিতে। তারপর একদিন আরামকুঠিতে সূর্যকান্ত চন্দ্রাকে উদ্ধার করতে এলে উপস্থিত হয় শশাঙ্ক ও শশীশেখর। গুলি চলে, খুন হয়। কিন্তু প্রকৃত খুনি কে? শশাঙ্ক কি সত্যিই দোষী? সূর্যর পরিণতিই বা কী হয়? উত্তর মিলবে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলা ধারাবাহিকটির পর্ব জুড়ে।
[‘পদ্মাবত’-এ এই দৃশ্য দেখেছেন? ভাইরাল রণবীর সিংয়ের ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ নাচ]
ধারাবাহিকে শশীশেখরের চরিত্রে রয়েছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। সুরেশ্বরীর ভূমিকায় রয়েছেন চুমকি চৌধুরী। শশাঙ্কর চরিত্রে দেখা যাবে আদিত্যকে। অপর্ণার চরিত্রে রয়েছেন স্বর্ণকমল, চন্দ্রার ভূমিকায় রিয়াঙ্কা ঘোষাল। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়(সূর্যকান্ত), অনুষ্কা নন্দী (স্বর্ণ), চিত্রনাট্য লিখেছেন সোমনাথ রায়। ধারাবাহিকে শোনা যাবে বাংলা আধুনিক রাগাশ্রয়ী গান, নজরুলগীতি-সহ রবীন্দ্রসংগীত ‘ওলো সই’। শুটিং হয়েছে বোলপুরের কালিকাপুর-সহ শোভাবাজার নাটমন্দির, বারুইপুর রাজবাড়ি ও ভবানীপুর ঘোষবাড়িতে। সম্প্রতি শোভাবাজার নাটমন্দিরে আদালত কক্ষের দৃশ্যটির শুটিং করলেন পরিচালক। ধারাবাহিকটি প্রসঙ্গে পরিচালক মণীশ ঘোষ জানান, ‘পুরনো দিনের সাহিত্য নিয়ে থ্রিলারধর্মী গল্প সবসময়ই দর্শকদের আকর্ষণ করে। ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছবি হলেও সেখানে মূল গল্পের একটা অংশবিশেষ ছিল। আমরা এখানে নীহাররঞ্জনের মূল কাহিনির উপর ভিত্তি করেই ২৪ পর্বের এই ধারাবাহিকটির নির্মাণ করছি। গল্পের যে একটা সাসপেন্স থ্রিলার টুইস্ট রয়েছে তার আকর্ষণের জন্যই দর্শকরা আবার এই কাহিনিটি দেখবেন বলে আমি মনে করি।’
অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘শশীশেখর একটা ভীষণই চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। এই চরিত্রটায় অনেক রকমের শেডস রয়েছে। সেই জন্য চরিত্রটা করেও আনন্দ পেয়েছি। প্রথমে একটু ভয়ে ছিলাম। যেহেতু এই চরিত্রে উত্তমবাবু অভিনয় করেছিলেন। আশা করছি দর্শকদের ভাল লাগবে।’ শুরু হয়েছে আকাশ৮-এ সোম থেকে শনি সন্ধে ৭টায়।
[‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’: যে ভারত লুকিয়ে থাকে সভ্যতার অন্ধকার গলিতে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.