সরোজ দরবার ও সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: তাঁর ছবি বাবুমশাই বন্দুকবাজ-এর শরীরে পহেলাজ নিহালানির কাঁচি চলেছিল ৪৮ বার। শুনে তাজ্জব গোটা সিনেদুনিয়া। ঠিক তারপরই অপসারণ সেন্সর প্রধান পহেলাজ নিহিলানির। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তকে কি তাহলে নৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন ছবির নায়িকা বিদিতা বাগ?
[ সেন্সর বোর্ডের প্রধান পদ থেকে বরখাস্ত পহেলাজ নিহালনি ]
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে বিদিতা জানালেন, “এটা তো হওয়ারই ছিল। উনি প্রায় ঠাকুরদার মতো ব্যবহার করছিলেন। নীতিপুলিশ হয়ে উঠেছিলেন। ছবিকে সার্টিফিকেট দেওয়া যেখানে কাজ, সেখানে বাচ্চাদের ছবি হলেও নাহয় কথা ছিল। কিন্তু যে ছবিটা বানানোই হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সেখানেও সেন্সর করা হাস্যকর। দেশের সত্তর শতাংশ মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক। আর প্রত্যেক দর্শকের মধ্যেও একটা সেন্সর আছে। ফিল্টার আছে। তিনি কোন ছবি দেখবেন, তিনিই তা ঠিক করে নেন। সেখানে আবার কাটাকাটি করাটা বাহুল্য। কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে ফ্যাসিস্ট মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া যায় না, সেটা বেশিদিন চলতেও পারে না। শিল্পীদের ক্রিয়েটিভ ফ্রিডম না দেওয়াটা মারাত্মক ব্যাপার। আর উনি সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন যে উনি প্রযোজক হিসেবে একসময় কীরকম ছবি বানিয়েছিলেন। গালাগালি দেওয়া বা ন্যুডিটি যে খুব ভাল জিনিস এমনটা বলছি না। কিন্তু সমাজে যেটা ঘটছে সেটা যদি পক্ষপাতিত্ব না করে দেখানো হয়, তাহলে আপত্তি কীসের! আর সেখানে মব়াল পুলিশিং চললে স্থানিক যে গল্পগুলি, যেগুলি লোকাল ফ্লেভারের সেগুলো আর কখনওই সিনেমায় বলা সম্ভব হবে না। অন্যরকম গল্প বলা, অন্যরকম কাজ সব বন্ধ হয়ে যাবে। তা তো কখনওই কাম্য নয়, আর সেভাবে যে ছবি তৈরি হবে তা সত্যিকারের ভারতবর্ষের ছবি হয়ে উঠতেও পারত না। তাই যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। এটা শুধু আমাদের নৈতিক জয় নয়, গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জয়। এতে ভারতীয় সিনেমারই মঙ্গল হবে। আর প্রসূন জোশী এলে সেন্সর বোর্ডের হাল ফিরবে বলেই আমার মনে হয়। বিদ্যা বালানও আমেদের সময়ের মোস্ট সেন্সেবল অভিনেত্রী। উনিও সিনেমা ও কলাকুশলীদের ভালটা বুঝবেন। সব মিলিয়ে ভালই হবে।”
[ ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’-এর শরীরে পহেলাজের কাঁচি চলল ৪৮ বার ]
পহেলাজের অপসারণে একরকম স্বস্তির ছাপ টলিউডেও। কদিন আগেই সংস্কারি সেন্সরের কোপে পড়তে হয়েছিল পরিচালক জুটি অভিজিৎ গুহ ও সুদেষ্ণা রায়কে। এদিন এ খবর পাওয়ার পর সুদেষ্ণা রায় জানালেন, “সেন্সর বোর্ড চিরকালই নীতি পুলিশ। সম্প্রতি তা যেন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছিল। যুক্তিহীনভাবে কাঁচি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল। আশা করি এবার বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে। যদি কোনও দৃশ্য বাদও পড়ে, তাহলে তার পিছনে নিশ্চিত কোনও যুক্তি থাকবে। আশা করব প্রসূন জোশী অনেক যুক্তিসংগত কাজ করবেন।” একই কথা পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি জানালেন, “ওটা সেন্সর বোর্ড নয়। সার্টিফিকেশন বোর্ড। ওদের কাজ ছবিকে সার্টিফিকেট দেওয়া। ওরা যেন এবার সে কাজটিই করে। ছবি করতে গেলে অনেক সময় অনেক কিছু দেখাতে হয়। সেগুলি নেহাত সংস্কারের নামে না কাটাই ভাল। পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে না। এটাই আশা রাখি।” অন্যদিকে একটু সাবধানী পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জানালেন, “এটা আনন্দের খবর, তবে এখনই আনন্দ করার সময় হয়নি। আমি প্রসূনদার কাজের ফ্যান। ওঁর উপর আস্থা আছে। তবে এখন উনি কী করেন তা দেখার অপেক্ষায় আছি। শুধু বলিউড নয়, আঞ্চলিক ছবির ক্ষেত্রেও উনি সবদিক থেকে বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবেন, এটাই আশা।” সব মিলিয়ে যেন একটা দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি। স্বাধীনতার দিবসের আগেই স্বাধীনতার ফুরফুরে খোলা হাওয়া খেলে গিয়েছে সিনে ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরে। ক্রিয়েটিভ ফ্রিডম একরকম শিকেয় উঠতে বসেছিল। তাবড় পরিচালকরা পহেলাজের প্রতাপে যখন হালে পানি পাচ্ছিলেন না, তখন সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করা বহু ছাত্রছাত্রীও। এদিনের সিদ্ধান্তে সকলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। আগামিদিনে শিল্পীরা খোলামনে তাঁদের কাজ করে যেতে পারবেন, প্রত্যাশা এমনটাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.