Advertisement
Advertisement

Breaking News

অবক্ষয়ের পথে আমাদের সমাজ? ‘১৫ই আগস্ট’-এ প্রশ্ন আত্মিকের

নাটকটি সময়োপযোগী ও সম্পূর্ণ, মত দর্শকদের৷

Review of drama '15th August'
Published by: Sayani Sen
  • Posted:November 16, 2018 9:27 pm
  • Updated:November 16, 2018 9:27 pm

‘সেন্টার স্টেজ, রঙ্গ-যাত্রা-২০১৮’ নাট্য উৎসবে অভিনীত ‘আত্মিক’-এর নাটক, ‘১৫ ই আগস্ট’। দেখে এসে লিখছেন কল্লোল দত্তগুপ্ত
সামাজিক অবক্ষয় নামতে নামতে এমন এক জায়গায় এসে ঠেকে, সমাজে তথাকথিত বিত্তশালী, রাজনৈতিক, প্রভাবশালী মানুষ ছাড়া নির্বিরোধী জনসাধারণের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। ভারতের মতো এক মহান গণতন্ত্রপ্রিয় দেশে, বিভিন্ন ভাষা, রুচি, ঐতিহ্য তাই গুলে মণ্ডিত হয়ে এক বিষাক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিসদৃশ জগাখিচুড়িতে পরিণত হয়, আর চুঁইয়ে চুঁইয়ে তা বর্তমান যুবসমাজে অভিসম্পাতের মত প্রবিষ্ট হয়। তখন চারিদিকে রব ওঠে, গেল গেল…। নিজের দেশ ও পাশ্চাত্য দেশের আশালীন গুণাবলী মিশে এক মিক্সড কালচারে পরিণত হয়। সবাই বলে বটে, গেল গেল, কিন্তু কেন গেল, কী গেল? কে দায়ী? কোনও উত্তর নেই। এখানেই নাটক, ‘১৫ই আগস্ট’।

[আয়ুব বাচ্চুর স্মরণে শহরে ‘দুই বাংলার রকবাজি’]

উদাহরণস্বরূপ, একটি অতি সাধারণ, পরিশীলিত, শিক্ষিত পরিবার এর শিকার। মঞ্চ খোলে অন্ধকারে। উদাত্ত কণ্ঠে ভেসে আসে, ‘চলত্ মুসাফির মোহ্ লইয়া রে… পিঞ্জরেবালী মুনিয়া…’, মণিকাকার মনমাতানো গান (ছায়াছবি- তিসরি কসম)। জীবনের তির্যক সোনালি আলো মঞ্চের বাঁ কোন থেকে ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে। গান ধরেছেন মণিকাকা, বাড়িরই বাগানের মালি, তাকে মালি ভাবা হয় না, ভাবা হয় সদস্য। পরিবারের এই ঘরটিতে উপস্থিত সুধাংশু, তার উচ্ছল কন্যা বুল্টি, বন্ধু সিধু, বুলটির মা ও মণিকাকা। নাটকটি একাঙ্ক কিন্তু মঞ্চভুমি কাল্পনিক রেখায় তিনটি ভাগে ভাগ করে পর্যায়ক্রমিক অভিনয় করেছে আত্মিক। প্রথম পর্যায়ে শুভেন্দুর ঘরে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপন, হাসিঠাট্টা, দেশের কথা, মজার খেলা, কন্যার (বুল্টি) নাচ ইত্যাদি। দ্বিতীয় পর্যায়ে, একই উদযাপনে প্রাণ ওষ্ঠাগত ডি. জে.। তারস্বরে রুচিহীন গান, অসভ্যতা, সুধাংশুর মেয়েকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও পরিশেষে মর্মাহত মধ্যবিত্ত সুধাংশুর হেরে যাওয়া। তৃতীয় ও শেষ পর্যায়ে সুধাংশুর মেয়ের প্রতিবাদ, ঝুপড়িপট্টিতে যাওয়া ও নাটকীয়ভাবে অশিক্ষিত অসভ্য ছেলেগুলোর ভুল শোধরানো।
এই ভুল শোধরানোর মধ্য দিয়েই নাটকটির উত্তরণ। এখানেই নাট্যকারের প্রশ্ন, এ ভুলের দায় কার? দেশের ঐ বিপথগামী ছেলেগুলোর না আমাদের? অভিভাবকদের না দেশবাসীর? স্বাধীনতার পর ৭১ বছরের রাজনীতি না অর্থনীতির ?

Advertisement

[টানটান চিত্রনাট্য আর চমৎকার প্রযোজনায় জমজমাট ‘প্লে হাউজ’]

মঞ্চসজ্জা সরল (তুহিন ঘোষ)। আলো ভাল (মাস্টার বাপি)। আবহ (সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়) পরিশীলিত। অভিনয়ে আগাগোড়া দাগ কাটেন মণিকাকা (সুব্রত রায়), সুধাংশু (অভিজিৎ ঘোষ) চরিত্রচিত্রণে যথেষ্ট যত্নবান, বুল্টি (সাবর্ণী দাস) অত্যন্ত সাবলীল। দীর্ঘ উপস্থিতিতে, সুধাংশুর বন্ধু সিধুর (সুজিত দাস) চরিত্রটিকে আরো কাজে লাগানো যেত। বরং কাউন্সিলর বিকাশদা (প্রণব ভট্টাচার্য) স্বল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য। সতীশ (রাহুল ঘোষ) অবিশ্বাস্যভাবে একটি অানপড় অশিক্ষিত অবাঙালি চরিত্রে জীবন্ত। আর সুধাংশুর স্ত্রীর (মন্দিরা সোম) এক স্বাভাবিক নির্মেদ মধ্যবিত্ত চরিত্র নির্মাণে অনেক অভিজ্ঞতাশ্রিত পারদর্শিতার উদাহরণ এবং অবশ্যই সুখরামের স্ত্রী (সৌমী ঘোষ দাস), এক ছোট্ট ও অনন্য উপস্থাপন। বাকিরা যথোপযুক্ত। অন্তিম (Outro) সঙ্গীত ‘ভূমি’খ্যাত সুরজিতের, ‘ও জীবন রে… ও জীবন ছাড়িয়া না যাস মোরে…’ গানটি ব্যবহৃত হয় সম্ভবত নাটকের ‘থিম-সঙ’ হিসেবে। নাটকটি সময়োপযোগী ও সম্পূর্ণ, নাট্যকার তথা পরিচালক সঞ্জয় পালের কৃতিত্বেই।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ