BREAKING NEWS

৯ চৈত্র  ১৪২৯  শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

‘সুচিত্রাদির সঙ্গে সম্পর্ক খুব স্পেশ্যাল’, লেখিকার জন্মদিনে নস্ট্যালজিক ঋতুপর্ণা

Published by: Sayani Sen |    Posted: January 10, 2019 8:16 pm|    Updated: January 10, 2019 8:16 pm

Rituparna on Suchitra Bhattacharya

প্রিয় লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের জন্মদিন। নস্ট্যালজিক ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শুনলেন প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

সুচিত্রা ভট্টাচার্য নিয়ে ভাবতে গিয়ে আজ দেখছি, সত্যিই তো ওঁর বইয়ের উপর ভিত্তি করে যতগুলো ফিল্ম আমি করেছি, আর কেউ করেনি। ‘দহন’ তো আছেই। ‘অলীক সুখ’ আছে। সবচেয়ে রিসেন্টলি রিলিজ করেছে ‘গহীন হৃদয়’। তার আগে ওঁর উপন্যাস থেকে বানানো ‘ইচ্ছে’ আমি প্রেজেন্ট করেছিলাম। জানি না লেখিকা-নায়িকার এমন পার্টনারশিপ বিরল কি না। তবে সুচিত্রাদির সঙ্গে আমার জুটিটা, আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল। হয়তো সুচিত্রাদির কাছেও ছিল। কারণ তিনি আমাকে বারবার বলতেন, “আমার উপন্যাসগুলো তুই করলে সেটা একটা আলাদা ব্যাপার হয়ে যায়।” একদিন বললেন, “শোন আমি একটা উপন্যাস লিখছি। মেন চরিত্রটা একদম তুই। এটা ফিল্ম হলে কিন্তু ঋতু তুই-ই করবি।” উপন্যাসের নাম ‘অর্ধেক আকাশ’। ‘অলীক সুখ’ দেখে খুব প্রশংসা করেছিলেন সুচিত্রাদি। ‘গহীন হৃদয়’ করার সময় যখন ওঁর পারমিশন নিতে গেলাম, খুব খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, “খুব ভাল লাগছে তোরা এই উপন্যাসটা বেছেছিস।”

[‘বাস্তব নিয়ে রানির কোনও ধারণাই নেই’, বললেন ক্ষুদ্ধ রেচেল]

সুচিত্রাদির জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে ভাবতে বসে বারবার মনে হচ্ছে, কী অনবদ্য মানুষ ছিলেন তিনি। যতবার কথা বলেছি ততবার মনে হয়েছে, তাঁর জীবনবোধ কী গভীর, কী অসামান্য! জীবনের মানেগুলো তাঁর কাছে কত পরিষ্কার। আসলে সুচিত্রাদি নিজে খুব সর্টেড মানুষ ছিলেন। তাঁর পড়াশোনা, তাঁর সাহিত্য-ভাবনা এত শক্তিশালী ছিল বলেই জীবনের জটিলতাগুলো তিনি এত সুন্দরভাবে মানুষকে বোঝাতে পেরেছেন। কোনও গল্পকে নেগেটিভ এন্ডে ছেড়ে যাননি। কোথাও না কোথাও গিয়ে আশার কথা বলে গিয়েছেন। নানা হতাশা, নানা দুঃখের মধ্যেও জীবনের পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরেছেন। সুচিত্রাদির লেখায় সব সময় আমি অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই। সুচিত্রাদির জীবনবোধ এত সুন্দর ছিল যে তিনি অনায়াসে নানা রকম চরিত্র সৃষ্টি করতে পারতেন। সেই চরিত্রগুলো খুব বিশ্বাসযোগ্য, আমাদের সবার চেনা। এখানে ‘অলীক সুখ’-এর কথা একটু বলি। ফিল্মে আমার চরিত্রের নাম ছিল রুদ্রাণী। চরিত্রটার মধ্যে একটা অদ্ভুত সাইলেন্স ছিল। সেই নীরবতার মধ্যেই ছিল তার সম্মতি, তার অসম্মতি। দুটো বিপরীত মনোভাবের মেলবন্ধন অপূর্বভাবে করেছিলেন সুচিত্রাদি। নীরবতা তো সত্যিই অনেক কথা বলে দেয়। সুচিত্রাদি সেটা অসামান্য ভাবে নিয়ে এসেছিলেন রুদ্রাণীর চরিত্রে। দু’জন মানুষের সম্পর্কে কীভাবে উত্থান হয়, কীভাবে পতন হয়, সেই উত্থান-পতনের মধ্যে কীভাবে সেতুবন্ধন করতে হয়, সুচিত্রাদি তাঁর লেখায় বিউটিফুলি ফুটিয়ে তুলতেন। যেমন ‘ইচ্ছে’-র মায়ের চরিত্রটা। ছবির শেষে মায়ের একটা সংলাপ ছিল-আমাদের দু’জনের একসঙ্গে ভাল থাকা আর হল না। সংলাপটা আজও আমার মনে আছে। এই যে মা আর ছেলের মধ্যে ভালবাসার একটা অসাধারণ টান, একই সঙ্গে আবার প্রবল দ্বন্দ্ব, দারুণ সুন্দর দেখিয়েছেন সুচিত্রাদি। সংসারের একেবারে ভেতরকার ঘটনাগুলো তিনি এত সুন্দর বুঝতেন এবং বোঝাতে পারতেন যে, মনে হত যেন চোখের সামনে পুরো জিনিসটা দেখতে পাচ্ছি।

[‘আর ডি বর্মনের মিউজিক ছিল বলেই আজও সংগীত বেঁচে আছে’, স্মৃতিচারণায় অভিজিৎ]

সুচিত্রাদি আর আমার পার্টনারশিপের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পিরিয়ড ‘দহন’। সবচেয়ে স্যাটিসফায়িং-ও। ‘দহন’ করার সময় আমার বিয়ে হয়নি। একদম অন্য রকম একটা জোনে ছিলাম। সেখানে রমিতার চরিত্রটা আমাকে বিবাহিত করল, তার বিবাহিত জীবনের ট্রমা বুঝতে শেখাল। ও রকম ভয়াবহ ঘটনা, অথচ কী সুন্দর ভাবে সেটা তুলে ধরা হয়েছিল। একমাত্র সুচিত্রাদিই বোধহয় সেটা পারেন। ঋতুপর্ণ ঘোষও আমাদের মধ্যে চরিত্রগুলোকে দারুণভাবে ইনজেক্ট করেছিলেন। ‘দহন’-এর রমিতা সারা জীবন আমার সঙ্গে থেকে যাবে। বাইশ বছর আগেকার ছবি। কিন্তু এখনও যে দেশ-বিদেশ থেকে আমার ফ্যানদের ফোন পাই, তাঁরা ‘দহন’-এর কথা বলেন। কেন জানি না মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই যেন একটা ‘রমিতা’ লুকিয়ে আছে। সত্যি, আমার কাছে সুচিত্রাদির এই চরিত্রটা একটা ম্যাজিক সৃষ্টি করেছিল। নানারকম জটিল বিষয় নিয়ে উপন্যাস লিখতেন, কিন্তু সুচিত্রাদি নিজে খুব হাসিখুশি ছিলেন। তাঁর সেন্স অফ হিউমার খুব ভাল ছিল। খোলামেলা, ওপেন-মাইন্ডেড মানুষ ছিলেন সুচিত্রাদি। ‘অলীক সুখ’ শুটিংয়ের সময় খুব সুন্দর স্মৃতি আছে সুচিত্রাদি, আমার আর সোহিনীর (সেনগুপ্ত)। আমরা একসঙ্গে ছবি তুলেছি। কত গল্প করেছি। চরিত্র নিয়ে কথা বলতে গেলে অবশ্য সুচিত্রাদি বলতেন, “অ্যাই তোদের আবার কী বলব রে আমি? তোরা এত ভাল অভিনেত্রী।” আমি বলছি, একটু বলো না রোলটা কীভাবে করব? তাতে বলতেন, “অ্যাই মারব তোদের। আমি যা লেখার লিখে দিয়েছি। এর পর তো তোদের স্ক্রিপ্ট আছে।”

[শীতে উষ্ণ থাকুন, ঋতাভরী ও রেচেলের থেকে জেনে নিন টিপস]

সুচিত্রাদির জন্মদিনে তাঁর একটা কথা খুব মনে পড়ছে। তিনি বারবার বলতেন, “দ্যাখ মিতিনমাসিটা তুই কর। আমি জানি তুই-ই মিতিনমাসি হতে পারবি।” শিবুর (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে কথা হয়েছে ফিল্মটা নিয়ে। দেখা যাক কী হয়। মিতিনমাসি করা নিয়ে আমার নিজেরও আগ্রহ আছে। সুচিত্রাদির সঙ্গে পার্টনারশিপটা বাঁচিয়ে রাখতে হবে তো!

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে