আজ শেষ দিন ঝান্ডা বিক্কিরির। রেড রোডে প্যারেডও শেষ। ঝান্ডা নিয়ে ‘আলম’ যখন রুদ্রনীল ঘোষ।
দাদা ডিস্টাব করবেন না ফালতু জ্ঞান দিয়ে। এই ‘ঝান্ডা আলম’কে সারা ধর্মতলা এক ডাকে চেনে। আজ শেষ দিন ঝান্ডা বিক্কিরির! কাল ন’শো বেচেছি, আজ দশটার মধ্যে বাকি বেচে দিতে পারলেই লাইফ লাট্টু, পকেট পঞ্চান্ন! আগে অবিশ্যি ফি’বছর ১৫ আগস্টের দিনে তিন হাজার করে ঝান্ডা বেচতাম। লাখ টাকা করে কামাতাম। এখন সে বাজার কোথায়? তার ওপর ঝক্কি বুঝুন, চল্লিশ টাকার মাল ১০০ টাকায় বেচে পফিটের ফিফটি পার্সেন্ট লোকাল ফোড়েদের দিতে হয়। হাতে থাকে পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন!
জানেন, আমাদের খিদিরপুরে অনেক মাতব্বর আমায় বলেছিল ঝান্ডার ইশক ছেড়ে ডকের টানা মাল ‘দো কা পাঁচ’ করে বেচতে। সারা বছর ইনকাম। কিন্তু মাইরি বলছি, মন করেনি। তাই আলমের হাতে সেই তেরঙ্গা ঝান্ডাই ধরা রইল! বললে বিশ্বাস করবেন না, শালা লাখ লাক টাকার মার্সিড, বি এম ডাব্লু হাঁকিয়ে দেশের পতাকা কেনার জন্য পাঁচ টাকা বেশি দিতে ওদের কলজে ফেটে যায়!
কী জানি কী হয়েছে এই লাস্ট দু’তিন বছর হল ১৫ই আগস্টের পতাকা বিক্কিরি হেব্বি কমে গেছে। এ দিকে দেখি ক্রিকেটে ইন্ডিয়া জিতলে পাবলিক হেব্বি লাফাচ্ছে, কিন্তু ১৫ই আগস্টে ঝিম মেরে যায় ওদের দেশভক্তি। বুঝি না আমি। ভুল বুঝবেন না দাদা, আমার কেমন যেন মনে হয়, রোজ নিউসে নেতা মন্ত্রীদের এত রকম টাকা-পয়সা নিয়ে কেস বেরোচ্ছে না, সে সব দেখে পাবলিকের না দেশ-টেশ নিয়ে মায়া উঠে গেছে। শুধু এই ১৫ই আগস্ট মানে একটা ছুটি-ফুর্তি দিন হয়ে গেছে সব। স্বাধীন না সব?
[বলিউডে হিট বাঙালি ডাক্তারের সুর, একান্ত আড্ডায় সুরকার অর্কপ্রভ]
কিন্তু ঝান্ডা আলমের উপায় কী বলুন, ধর্মতলার সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ঝান্ডা না বেচলে খাব কী? এই দিনেই তো যা একটু বেশি সেল। আল্লাহ কসম ১৫ই আগস্ট ছাড়া আমি ঝান্ডা বেচি না ঠিক তা নয়, বেচি। কিন্তু আপনাদের ঐ দুর্গাপুজোর সঙ্গে কি কালীপুজোর তুলনা চলে, বলুন? আমারও ২৬শে জানুয়ারি বা ইডেনে কেকেআর-এর খেলা বলুন, ঝান্ডার ওই কালীপুজো কেস। ছোটখাটো সেল।
মাঝে আমার বন্ধু মহাদেব বলেছিল ধর্মতলায় পার্টি মিটিংয়ে সব দলের ঝান্ডা সেল করতে, হেব্বি ইনকাম আছে। শালা টিএমসি না বিজেপি মনে নেই, আমরা ঝান্ডা বেচে দু’পয়সা ইনকাম করছি দেখে ক্যাডাররা এসে সব ঝান্ডা কেড়ে নিয়ে গুছিয়ে কী ক্যালাল মাইরি!
পরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মহাদেব বলল, এখন পার্টির ছেলেরাই নাকি ও সব বেচে নিজেরা কামাচ্ছে। পার্ট টাইম হকার হয়ে গেছে। সত্যি মিথ্যে জানি না তার পর থেকে কোনও পার্টির ঝান্ডা বেচার কেসে আমি নেই দাদা! বাল-বাচ্চা নিয়ে কোনওমতে বেঁচে আছি, বুঝে গেছি এ দেশে দেশের ঝান্ডা বেচলে মারধরের ভয় নেই! বিক্কিরি কম হলেও পেটের ভাত ঠিক আসবে দু’মুঠো।
[উত্তমকুমারের খাবার যেত এই দোকান থেকে, আসতেন সুচিত্রা সেনও]
তাই হাত থেকে ঝান্ডা ছাড়াছাড়ি নেই বাবা! আর কী করেই বা ছাড়ি বলুন। আসলে সেন্টিমেন্টাল কেস আছে একটা। বাপ-ঠাকুর্দা চিরকাল এ ঝান্ডা ধরেই তো মরল। আমার আব্বা, ঝান্ডা সেলিম! ১৪ই আগস্ট রাতে পার্ক স্ট্রিটে একটা বারের সামনে ঝান্ডা বেচতে গিয়ে এক মাতালের গাড়ির তলায় চাপা পড়ে মরল। গাড়ির চাকাটা হাতটা থেঁতলে দিয়েছিল। পতাকার ডান্ডাটা ভেঙে ঢুকে গেছিল আব্বুর পেটে। আমার দাদুরও তাই!
না, দাদু ঝান্ডা বেচত না। দেশভাগের সময় পাকিস্তান যাবে না বলে হাতে ইন্ডিয়া ঝান্ডা নিয়ে স্লোগান মারছিল। গুলি খেল! গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল জানেন, কিন্তু মরতে দমতক হাতের তেরঙ্গা ঝান্ডাটা ছাড়েনি!
হাহা… আমিও পারলাম না দাদা ছাড়তে। বলছি, পাঁচটা ঝান্ডা পড়ে আছে, নেবেন? একটু পর রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রী আসবে, পুলিশ বের করে দেবে! হাতে নিন না মাইরি, ভাল কোয়ালিটির তেরঙ্গা!
[‘আমার মতো বুড়ো নয়, রাজনীতিতে তরুণ রক্ত দরকার’]