Advertisement
Advertisement

Breaking News

‘কেবল চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সত্যি কথা বলি’

মুখোমুখি নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি।

Speak truth only through character, says Nawaz
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:September 22, 2018 11:30 am
  • Updated:September 22, 2018 1:42 pm

কলকাতায় এসে একথাই বললেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। রিয়্যাল লাইফে তেমন সৎ নন, স্বীকার করে নিলেন। ‘মান্টো’ চরিত্রে অভিনয় করার পর মান্টোকে ভুলতেও চেয়েছিলেন। কেন? উত্তর খুঁজলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়

‘মান্টো’ মুক্তি পাচ্ছে আজ। তার ঠিক এক সপ্তাহ আগে পরিচালক নন্দিতা দাস এসেছিলেন কলকাতায় তাঁর ‘মান্টো’-র চরিত্রাভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিকে সঙ্গে নিয়ে। সম্প্রতি নেটফ্লিক্স-এর ‘সেক্রেড গেমস’-এ নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির অভিনয় নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে। কেউ প্রশংসা করেছে। কেউ বলেছেন, রিপিটিটিভ। বারবার গ্যাংস্টারের চরিত্রে কেন? এই প্রশ্ন বারবার উঠে এসেছে। এর আগে ‘তিন’ ছবিতে এক পাদ্রির ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল নওয়াজউদ্দিনকে। অন্যরকম চরিত্র হলেও বিশেষ প্রশংসিত হয়নি। এদিন ছবিটির স্ক্রিনিং হল কোয়েস্ট আইনক্সে। অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি নিজেকে কতটা ভেঙেছেন, না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। ছবি স্ক্রিনিং-এর আগে নন্দিতা দাস বলেছিলেন, যেখানেই যাচ্ছি সবাই বলছে ‘গাইতোন্ডে, গাইতোন্ডে’, আমি চাই এবার সবাই বলুক ‘মান্টো’, ‘মান্টো’। নিঃসন্দেহে সেটা হবে ছবিটা দেখার পর এই আশা করাই যায়। পরপর নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে করতে হঠাৎ সত্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিকে। কেমন সেই অভিজ্ঞতা, কলকাতায় বসে ছবি স্ক্রিনিং-এর ঠিক আগে বললেন তিনি।

Advertisement

আপনি কেরিয়ারের শুরুর দিকে ‘টোবা টেক সিং’ নাটকে অভিনয় করেছেন। মান্টো করতে গিয়ে অন্যান্য গল্পগুলো কাছ থেকে দেখলেন। মান্টোর কোন গল্প আপনার সবথেকে প্রিয়?

Advertisement

নওয়াজ: মান্টোর সব গল্পই তো খুব ইনটেন্স, আর হিউমারের ব্যবহারও অপূর্ব। কিন্তু আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়িয়ে দিয়েছিল ‘ঠান্ডা গোস্ত’ গল্পটা।

পড়তে গিয়ে কী মনে হয়েছিল?

নওয়াজ: তেমন পরিস্থিতিতে পড়ে মানুষ এমন অনেক কাজ করে, যেটা অমার্জনীয় এবং অত্যন্ত ঘৃণ্য। ইশার সিং ঠিক সেটাই করেছিল। ওর মধ্যে একটা চাপা গিল্ট ফিলিং কাজ করছিল যেটা নিয়ে ও কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। যখন নিজের স্ত্রীর কাছে সবটা বলে ফেলছে তখন আমার মনে হয়েছিল ও না-মানুষ থেকে আবার মানুষ হয়ে উঠছিল ক্রমশ। এই ট্রান্সফরমেশনটা আমার মনের মধ্যে গভীর ছাপ ফেলেছিল।

ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেনি ‘মনমর্জিয়াঁ’, টুইটে ক্ষমাপ্রার্থী অনুরাগ ]

‘মান্টো’-র মধ্যে যে সততা সেটা পোর্ট্রে করা করা খুব কঠিন ছিল। কারণ এখন আপনি আর ততটাও সৎ নন- এটা কেন বলেছিলেন?

নওয়াজ: সারল্য, সততা হয়তো পাঁচ, ছয় বছর বয়সে আমার মধে্য ছিল। সেই সময়টা এমন ছিল যখন জীবনে কোনও জটিলতা ছিল না, কম্পিটিশন বা রেস ছিল না, তাড়াহুড়ো ছিল না। নিজের ছন্দে নিজের মতো করে বড় হয়ে উঠছিলাম, তখন মিথ্যে বলার প্রয়োজনও ছিল না। আমি যেমন, তেমনভাবেই নিজেকে এক্সপ্রেস করতাম। ম্যানিপুলেশনও ছিল না। কিন্তু যখন এমন পৃথিবীতে এলাম, যেখানে চারপাশে কেবল প্রতিযোগিতা, তখন নিজেকে তুলে ধরতে অনেক মিথে্য বলতে হয়। আমাকেও করতে হয়েছে। প্রথম প্রথম মুম্বই এসে সততা দেখিয়ে অনেক হোঁচট খেয়েছি। মিথ্যে ছাড়া গতি নেই। কিন্তু আমি তো স্বীকার করছি যে মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছি। অনেকে তো রিয়ালাইজ-ই করে না যেটা বলছে, বা করছে যেটা পুরোটাই মিথ্যের ওপর ভিত্তি করে। তাই না!

আপনি নাকি ‘মান্টো’ করার পর নন্দিতা দাসকে ফোন করে বলেছিলেন যে এবার মান্টোকে ভুলে যেতে চান।

নওয়াজ: হ্যাঁ, কারণ খুবই অসুবিধে হচ্ছিল। বিশেষ করে আমার ব্যক্তিগত জীবনে। ‘মান্টো’ ছবিতে অভিনয় করার পর আমি নিজেকে নিয়ে খুবই কনফিডেন্স ফিল করছিলাম। সত্যি কথা বলে ফেলছিলাম এবং সেই কারণে বিপদেও পড়েছি।

সেই সময়েই আপনার বই ‘অ্যান অর্ডিনারি লাইফ’ নিয়ে বিতর্ক হয়!

নওয়াজ: হ্যাঁ, বইটা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম। পুরোটা কেউ পড়ল না, একটা অংশ নিয়ে বিতর্ক হল। সত্যি কথা লিখে ঝামেলায় পড়লাম। বইটা উইথড্র করে নিয়েছিলাম। তখন নন্দিতাকে ফোন করে বলেছিলাম, এবার এটা থেকে বেরতে চাই।

আপনার বইতে রয়েছে যে কোনও চরিত্রের গভীরে পৌঁছতে গেলে জানতে হবে সে বাথরুমে কীভাবে বিহেভ করে। একটু এক্সপ্লেন করবেন?

নওয়াজ: আমরা যখন অভিনয় করি, বিশেষ করে যখন বায়োপিক করি তখন তার পাবলিক ইমেজের দিকে সবচেয়ে বেশি চোখ যায়। যেমন ধরুন আমি যখন ‘ঠাকরে’-র চরিত্রে অভিনয় করছি, তার একটা পাবলিক ইমেজ রয়েছে- ফলে সেই দিকটা খুব বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমাদের কাছে যখন কোনও চরিত্র আসে, তার সম্পর্কে স্ক্রিপ্টে যা লেখা থাকে সেই ইনফরমেশনটুকুই আমাদের কাছে থাকে। কিন্তু আমি মনে করি একটা চরিত্র সর্ম্পকে ততটা জানা উচিত, যতটা নিজের সম্পর্কে জানি। এতটাই জানা উচিত যে সে টয়লেটে বসে কী ভাবছে সেটাও যেন আমার নখদর্পণে থাকে। বেশিরভাগ সময় মানুষ নিজের আসল রূপটা তখনই উন্মোচন করে যখন সে নিজের মতো করে একা হয়। আমি, আপনি যখন পাবলিক স্পেসে থাকি তখন কিছুটা হলেও অভিনয় করি। আমার আসল তখনই বাইরে বেরয়, যখন হয় আমি ঘুমিয়ে থাকি, নয় আমি টয়লেটে থাকি। সেখানে তো আর অভিনয় করার ব্যাপার নেই।

ঠগদের নেতা ‘বিগ বি’, অমিতাভের এমন চেহারা দেখেছেন? ]

সেটা ‘মান্টো’-র জন্য কেমন? আর ‘বাল ঠাকরে’-র জন্য কেমন?

নওয়াজ: নিশ্চয়ই আলাদা। এটা খুব ভিতরের ব্যাপার। রিয়্যাল লাইফ চরিত্র হোক বা ফিকশনাল চরিত্র হোক আমি চরিত্রের সেই জায়গায় পৌঁছনোর চেষ্টা করি সবসময়। কতটা পেরে উঠি সেটা পরের ব্যাপার, কিন্তু এই চেষ্টাটা থাকে। প্রতিটা চরিত্রকে তার নিজের পার্সোনাল স্পেসে অবজার্ভ করার চেষ্টা করি।

আপনি এমনিতেই লাজুক। ভিড়ে চুপ থাকতেই ভালবাসেন। আপনি আগে বলেছেন, রিয়্যাল লাইফ হ্যান্ডেল করতে ভয় পান, বরং বিভিন্ন চরিত্রের মধে্য দিয়ে ক্যামোফ্লেজ করে সত্যিটা বলতে স্বস্তি বোধ করেন-কেন? কীসের ভয়?

নওয়াজ: এর উত্তরে আমি প্রথমেই বলতে চাই ওশো-র একটা কোট! সেটা হল ‘জিন্দেগি অ্যায়সি জিও জ্যায়সে অ্যাক্ট কর রহে হো, অউর অ্যাক্টিং অ্যায়সে করো জ্যায়সে কি জিন্দেগি জি রহে হো’। সতি্য কথা বলব? বিশ্বাস করুন আমরা রিয়্যাল লাইফে অনেক বেশি অভিনয় করি।

ক্লান্ত হয়ে যান?

নওয়াজ: হ্যাঁ, ক্লান্তি আসে। আমি একা নই, প্রতিটা মানুষ রিয়্যাল লাইফে এত বেশি অভিনয় করে যে রিয়্যাল হতেই পারে না। আপনি খুব খুঁটিয়ে অবজার্ভ করে দেখে নিন। নিজের ইমেজ তৈরি করতে এবং আমিই ঠিক এটা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আমরা অভিনয় শুরু করি। দুনিয়াকো গলত ঠ্যায়রানেকে চক্কর মে অউর খুদকে সহি ঠ্যায়রানেকে ফিরাক মে হাম লোগ অ্যাক্টিং করনে লগতে হ্যায়। তাই যখন ক্যামেরা অন হয় এবং আমি তার সামনে থাকি তখন মনে হয় এই মুহূর্তটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সৎ মুহূর্তে বদলে দিতে পারি। সেই চরিত্রটার প্রতি সৎ থেকে নিজের মতো করে সতি্যটা বলে দেওয়া যায় এটা আমি মনে করি।

নন্দিতা দাস পরিচালিত ছবির পারিশ্রমিক হিসেবে এক টাকা নিয়েছেন। এমন ছবিও আছে যেটা শুধুই টাকার জন্য করেন?

নওয়াজ: হ্যাঁ, তা তো আছেই।

তাহলে সেইসব চরিত্রের জন্য সৎ হতে কতটা অসুবিধে হয়?

নওয়াজ: এটা তো আমার অভ্যেস। এমন নয় যে এটা কমার্শিয়াল ছবি বলে এটায় ফিফটি পার্সেন্ট দেব- না, এমন নয় ব্যাপারটা। আর এইসব ছবি এইজন্য করি যাতে ‘মান্টো’-র মতো ছবিতে এক টাকা নিতে পারি।

হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত, বিতর্ক এড়াতে ‘লাভরাত্রি’ ছবির নামই বদলে দিলেন সলমন ]

আপনি এও বলেছেন, ফ্যামিলি লাইফ আপনার জন্য নয়। সারাক্ষণ কাজ আর বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালবাসেন। মান্টো নিজের লেখা আর অ্যালকোহলিজম-এ ডুবে গিয়েছিল একসময়। ‘মান্টো’-র চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজের কথা, নিজের স্ত্রীর কথা মনে হয়েছে?

নওয়াজ: হ্যাঁ, ‘মান্টো’ করতে গিয়ে অনেকবার হয়েছে যে রিয়্যাল লাইফ আর ফিকশনাল লাইফ-এর বাউন্ডারিটা ব্লার হয়ে গিয়েছে। কখনও মনে হত আমি মান্টো, কখনও মনে হত আমি নওয়াজ। অফকোর্স নিজের জীবনের কথা অনেকবার মনে হয়েছে।

আপনি তো নানান ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনটে বায়োপিকও করলেন যেটা একটার থেকে অন্যটা একেবারে আলাদা…

নওয়াজ: একটু থামাচ্ছি, আপনি একথা বলছেন, এদিকে অন্য সাংবাদিক বলছে আপনি একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছে। আমি একটা কথা বলতে চাই আমি এতদিন ধরে যেসব চরিত্রে অভিনয় করেছি সেটা বলিউডের বিগত ষাট বছরের ইতিহাসে হিরোর যে কনসেপ্ট তার থেকে একেবারে আলাদা। আমি সব করেছি তথাকথিত নায়ক ছাড়া। শুধু হিন্দি ছবি কেন, পুরনো যে বাংলা ছবি যা বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত হয়েছে, সেইসব ছবিও আমি দেখেছি। এখন বাংলা ছবিতে আমি দেখি যে নায়ক দু’হাত ছড়িয়ে বলিউডি স্টাইলে গান গাইছে। বলিউডের এমনই প্রভাব। আমি পরপর নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছি বলে আপনারা আমাকে ‘টাইপড’ করে দিচ্ছেন, অথচ পরপর তিনটে হিরোর চরিত্রে দেখলে কিন্তু এমন কথা বলতেন না।

বুঝতে পেরেছি, আমি যেটা জানতে চেয়েছিলাম, সেটা হল এত ধরনের চরিত্র করেছেন, আর্থিক সাফল্য, নামযশ সবই পেয়েছেন- এরপর ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী মাথায় রাখবেন?

নওয়াজ: এইটুক বলতে পারি, চরিত্রগুলো আরও গভীরভাবে ইন্টার্নালাইজ্‌ড করতে চাই। এটাই মাথায় আছে আপাতত।

হাঁটুর বয়সী বান্ধবীর সঙ্গে ‘বিগ বস’-এর ঘরে, হাসির খোরাক অনুপ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ