সরোজ দরবার: রবীন্দ্রনাথ ব্যাপ্ত বিস্ময়। প্রথম পাঠে তাই তিনি একরকম। তারপর যতবার পড়া, ততবার বদল। পুনরাবিষ্কার ও বিস্মিত হওয়ার পালা। রবীন্দ্রসৃষ্টির ক্ষেত্রে এ বিস্ময় নতুন নয়। তবে বিস্মিত হতে হয়, যদি রবীন্দ্রনাথকে ভর করে জন্ম নেওয়া কোনও সৃষ্টিও একই দ্যোতনা বয়ে আনে। সে অভিজ্ঞতা হল শিল্পী ইন্দ্রজিতের প্রদর্শনী ‘টেগোর ইন শর্টহ্যান্ড’-এ চোখ রেখে।
আদতে অক্ষর। তারই বিন্যাসে ফুটে উঠেছে অবয়ব। রবি ঠাকুরের। যেমন তেমন নয়, নির্দিষ্ট ভাবনার সূত্র ধরেই। কোথাও তাঁর আনন্দ ভাবনা, কোথাও আবার ঝড় নেমে আসা কালবোশেখির উথালপাতাল। বাদলাবেলায় আইসিসিআর-এর বেঙ্গল গ্যালারি ঘুরতে ঘুরতে তাই ঘোর কাটছিল না শিল্পী বিক্রম ঘোষের। ‘রবি ঠাকুরের কবিতা, আঁকার স্টাইল আর স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ- তিনটে ডায়মেনশন কী অদ্ভুতভাবে মিলে গিয়েছে দেখুন’, বললেন বিক্রম। তাঁর মতে, এরকম ইউনিক আইডিয়া তিনি অন্তত দেখেননি।
[‘অব্যক্ত’ সম্পর্ক নিয়ে প্রথমবার বড়পর্দায় জুটি বাঁধলেন আদিল-অর্পিতা]
একই কথা চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুরেরও। গোটা ষোলো ছবির কয়েকটা দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছেন, ইন্দ্রজিৎ জাত শিল্পী। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তাই বলেই ফেললেন, ‘লাইন দেখুন, ব্রাশের পাওয়ারটা দেখুন। এসবই শিল্পী চিনিয়ে দেয়।’ পরে পোশাকি অনুষ্ঠানেও বললেন, শিল্পীর স্বাক্ষর তাঁর নামে নয়। থাকে, ব্রাশের ব্যবহারে, লাইনের সূক্ষ্মতায়। শিল্পী ইন্দ্রজিৎ তা পুরোমাত্রায় করেছেন। আর করেছেন বলেই লজ্জায় পড়ে যাচ্ছেন ওয়াসিম নিজে। বলছেন, ‘হেন কোনও শিল্পী নেই যিনি রবীন্দ্রনাথের পোট্রেট করেননি। আমিও করেছি। কিন্তু এভাবে ট্রিবিউট দিতে কাউকে দেখিনি।’ বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া সব ঘুরে দেখে জানালেন, এ ছবিকে নিয়ে আর বেশি কথা বলতে হয় না, কারণ ছবি নিজেই অনেক কথা বলে উঠছে। উপস্থিত নমিত বাজোরিয়াও মুগ্ধ।
‘মা বলেছিল ২৫ বৈশাখের জন্য একটা পোট্রেট করে দিতে’, নিজের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবনার গোড়ায় ফিরলেন ইন্দ্রজিৎ। ছবি আঁকেন, অ্যানিমেশনে দক্ষ, সিনেমাও করেন। তো মায়ের কথাতেই শুরু। রবি ঠাকুরের কয়েকটা পংক্তি এদিক-ওদিক করে একটা পোট্রেট হল। তারপর আর একটা। এরপর রবি ঠাকুর যেন আচ্ছন্ন করলেন শিল্পীকে। গীতবিতান পড়ছেন, পড়ছেন অন্যান্য লেখা। দর্শন এসে ধরা দিচ্ছে। আর চিনছেন একজন করে নতুন রবীন্দ্রনাথকে। সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে একটা করে অবয়ব।
আঁকতে সময় বেশি লাগেনি, তবে ওই ভাবনা-দর্শন ইন্টারপ্রেট করা যে এক উথালপাতাল ঝড়, তা স্বীকার করে নিলেন শিল্পী। মননের সেই তোলপাড় তাঁর রেখায় রেখায় ফুটে উঠেছে। শর্টহ্যান্ড যেমন সিম্বলিক, এ ছবিগুলোও তাই। বিন্দুতে সিন্ধু ধরা। বস্তুত রবীন্দ্রনাথ মানেই এই ‘তোমা মাঝে অসীমের চিরবিস্ময়’।
পোশাকি নামে তাই প্রদর্শনীই বটে, আসলে এ যেন কবিপক্ষে রবি ঠাকুরকে লেখায়-রেখায় পুনরাবিষ্কারেরই নতুন পথ।
[‘কোটিপতি’ হওয়ার খেলায় এবার সঞ্চালক প্রসেনজিৎ!]