সমরেশ মজুমদারের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে আকাশ ৮-এ আজ থেকে শুরু হচ্ছে নতুন মেগা ‘দীপাবলীর সাতকাহন’। এক সাধারণ মেয়ের সমস্ত রকম প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়ে মাথা উঁচু করে লড়াইয়ের গল্প উঠে এসেছে এই ধারাবাহিকে। লিখছেন সোমনাথ লাহা।
জলপাইগুড়ির চা-বাগান অধু্যষিত অঞ্চলের মেয়ে দীপাবলী। নবম শ্রেণিতে পাঠরতা দীপা পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী। কিন্তু ঘটনাক্রমে দীপাবলীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রায় জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের রাতেই বিধবা হয় সে। কিন্তু বৈধব্য মানতে চায় না দীপাবলী। সে প্রতিবাদ করে ওঠে এই সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। মনের জোরে লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে চাকরি করে নিচের পায়ে দাঁড়ায়। স্বনির্ভর, স্বাধীনচেতা হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচে এই সমাজের বুকে।
এহেন বিষয় ভাবনাকে নিয়েই প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমারেশ মজুমদারের লেখা কালজয়ী উপন্যাস ‘সাতকাহন’। একটি মেয়ের লড়াইয়ের এই কাহিনির প্রেক্ষাপটে রয়েছে সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আবহর পাশাপাশি সেই সময়ের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের চিত্র। ফলে প্রকাশ মাত্রই এই উপন্যাসটি তুমুল সাড়া ফেলে দেয় পাঠকমহলে। সমরেশ মজুমদারের লেখা এই উপন্যাসটিকে নিয়ে ২০০১-এ একটি জনপ্রিয় চ্যানেলে ‘সাতকাহন’ নামেই ধারাবাহিক নির্মাণ করেন পরিচালক সুশান্ত বসু। তবে সাপ্তাহিক সেই ধারাবাহিকটির শুধুমাত্র প্রথম পর্বটিই করেছিলেন পরিচালক। ফলে আক্ষেপটা রয়ে গিয়েছিল।
[ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিয়ের কার্ডের ছবি পোস্ট কপিলের ]
এবার আকাশ ৮-এ ডিসেম্বর মাস থেকে মেগা ধারাবাহিক হিসাবে আসতে চলেছে সমরেশ মজুমদারের এই কালজয়ী উপন্যাস। তবে আজকের সময়ের মতো করে চিত্রনাট্যে কিছু অদল বদল ঘটিয়ে এবং সমস্তটাই লেখকের পরামর্শ মেনে। তাই মেগার নাম ‘দীপাবলীর সাতকাহন’। যেটির ট্যাগলাইন ‘দ্বন্দ্ব যখন সত্যের সাথে বাস্তবের’। প্রসঙ্গত, এবারও এই মেগা ধারাবাহিকটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন সুশান্ত বসু। তবে এবার দু’পর্ব মিলিয়ে বৃহৎ স্কেলে এই কালজয়ী উপন্যাসটিকে ছোটপর্দায় তুলে ধরেছেন তিনি। প্রযোজনায় অশোক সুরানা। সহ-প্রযোজনায় ঈশিতা সুরানা। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই আকাশ ৮-এ সুশান্তর পরিচালনায় নির্মিত ‘জগৎজননী মা সারদা’ ধারাবাহিকটি রীতিমতো জনপ্রিয় হয়েছে দর্শকমহলে। বরাবর সাহিত্যধর্মী, সুস্থ রুচিশীল বিনোদনকে প্রাধান্য দেওয়া আকাশ ৮-র এটি যে অন্যতম একটি দিকদর্শন হতে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ‘এক মাসের সাহিত্য’-র স্লটে দেখা যাবে এই সাহিত্যধর্মী মেগাটি।
‘দীপাবলীর সাতকাহন’-এর হাত ধরে দীর্ঘ ১৭ বছর পরে টেলি আঙিনায় ফিরলেন সমরেশ মজুমদার। তাঁর লেখা উপন্যাস থেকে নির্মিত এই মেগার কাহিনি যাতে আর গড়পড়তা পাঁচটি উপন্যাসধর্মী মেগার মতো মাঝপথেই খেই হারিয়ে অন্যদিকে মোড় না নেয় সে জন্য যথেষ্ট সতর্ক নির্মাতারা। প্রতিনিয়তই লেখকের পরামর্শ অনুযায়ী চিত্রনাট্যর গঠন করছেন তাঁরা।
মেগায় দীপাবলীর চরিত্রে রয়েছেন নবাগতা সৌমী চট্টোপাধ্যায়। নাটকের সঙ্গে যুক্ত সৌমীর এটি প্রথম মেগা ধারাবাহিক। ছোটপর্দাতেও ডেবিউ হচ্ছে তার। কমলা গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সৌমীর প্রিয় বিষয় বাংলা। ভবিষ্যতে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার।
ধারাবাহিক অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন বোধিসত্ত্ব মজুমদার (দীপাবলীর মাস্টারমশাই), রাজর্ষি মুখোপাধ্যায় (দীপাবলীর বাবা), আম্রপালী ঘোষ (দীপাবলীর ঠাকুরমা), বিপ্লব দাশগুপ্ত (দীপাবলীর শ্বশুরমশাই), তুলিকা বসু (দীপাবলীর শাশুড়ি), লোপামুদ্রা সিনহা (দীপাবলীর মাসি) ও অন্যান্য শিল্পীরা। মেগার চিত্রনাট্য লিখেছেন সায়ন চৌধুরি। সংগীত পরিচালনায় দেবজিৎ রায়। ধারাবাহিকটির টাইটেল ট্র্যাকটি গেয়েছেন জয়তী চক্রবর্তী। শুটিং হয়েছে ডুয়ার্স, লাভা, বারুইপুরে।
সম্প্রতি বালিগঞ্জস্থিত একটি হোটেলে ‘দীপাবলীর সাতকাহন’-এর সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লেখক সমরেশ মজুমদার-সহ মেগার পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ‘দীপাবলীর সাতকাহন’ দেখা যাবে আজ থেকে সোম থেকে শনি সন্ধে ৭টায় আকাশ ৮-এ।
সমরেশ মজুমদারের কথায়, “‘সাতকাহন’ মূলত একটি মেয়ের লড়াইয়ের গল্প। কিভাবে সে সমস্তরকম প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের মতো করে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। গড়ে তোলে নিজের জীবন। গল্পটিকে আজকের সময়ের প্রেক্ষিতে ফেলা হয়েছে। কারণ, এর মাঝে সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তাই কিছু রদবদল রয়েছে। চিত্রনাট্য কীভাবে বদলাবে সেটা ওদের বলে দিচ্ছি।” সুশান্ত বসুর মতে, “আমি সাধারণের কথা বলতে ভালবাসি। তাই এমন কিছুই করতে চেয়েছি যেটা দেখে দর্শক একটু হলেও ভাবেন, কিছু শিখতে পারেন। এটা এমন একটি মেয়ের লড়াইয়ের কাহিনি যেটা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। সেই ভাবনা থেকেই আবার ‘সাতকাহন’ উপন্যাসটিকে বেছেছি। টিআরপি নিয়ে আমি ভাবি না। ২০০১-এ উইকলি সিরিয়াল হিসাবে ‘সাতকাহন’ করেছিলাম। তবে দ্বিতীয় পর্ব করতে পারিনি। সমরেশদার সঙ্গে বসে আজকের মতো করে আমরা ‘দীপাবলীর সাতকাহন’ নির্মাণ করেছি। চেষ্টা করেছি এমন কিছু করতে যা মানুষের মনে রেখাপাত করে।”
প্রযোজক অশোক সুরানার মন্তব্য, “‘সাতকাহন’ আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি উপন্যাসকে ভিত্তি করে কাজ করার। ৫-৬টা সাহিত্য নির্ভর কাজ করেছি। আমরা কোনওভাবে উপন্যাস থেকে বেরিয়ে যাইনি। সুস্থ বিনোদন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।”
[ ‘নিশির ডাক’ উপেক্ষা করেও কীভাবে বেঁচে যাচ্ছে তারা? ]