শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: তার কতটা তেজ তা বোঝা যায় রান্নাতেই। সুস্বাদু এবং মশলাদার খানায় তার জুড়ি মেলা ভার। এক সময় গ্রামের এবাড়ি-ওবাড়ির রান্নাঘরের পাশে জায়গা হত তার। এ বাড়ির জেঠিমা ও বাড়ির বউমা দুমুঠো তুলে নিয়ে গেলেও আপত্তি জুড়তেন না কেউই। এখনও হয় তো পরিস্থিতি বদলায়নি। কিন্তু সার্বিক চাহিদা বাড়ায় বাণিজ্যিক মর্যাদা পেয়েছে তেজপাতা।
[ধান জমিতে রাঢ় বঙ্গে ডাল ও তৈলবীজ চাষের বিপুল সম্ভাবনা]
চায়ের জেলা উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের মাটি তেজপাতা চাষের জন্য উপযুক্ত। খরচও সেই অর্থে প্রায় নেই বললেই চলে। এক বিঘা জমিতে একশোটি তেজপাতা গাছ বুনে বছরে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘরে তোলা যায়। তেজপাতা গাছ একবার বুনলে পাতা দেয় অন্তত ২৫ বছর। অনেক কৃষক পরিবার আছেন যাঁদের জমি আছে কিন্তু লোক বলের অভাবে বছর বছর জমিতে চাষ দিতে পারেন না। তাঁরা অনায়াসে সেই জমিতে তেজপাতা গাছ বুনে দিতে পারেন। সামান্য যত্নআত্তি করলেই ৩ বছর পর থেকে লাভের মুখ দেখতে পারবেন। বছর যত বাড়বে পাতার পরিমাণের মতো লাভের পরিমাণও প্রায় সমপরিমাণে বাড়বে।
[বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে সাফল্য, কম খরচে বেশি লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা]
তিস্তা নদীর পারে এক সময় চা চাষের গোড়াপত্তন হয়েছিল। সেই তিস্তা নদীর পাড়েই এখন বেড়ে চলেছে তেজপাতা চাষ। দোমোহনী এলাকার বহু কৃষক আজ তেজপাতা চাষে যুক্ত হয়েছেন। তৈরি হয়েছে তেজপাতার আড়ত। দোমোহনী থেকে তেজপাতা এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে। সেই কারণে আবহাওয়া, পরিবেশ এবং পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে লাভদায়ক বিকল্প চাষ হিসেবে তেজপাতাকে বেছে নেওয়া যেতেই পারে।
[বর্ষায় দক্ষিণ দিনাজপুরে জোরকদমে চলছে আমন ধানের চারা রোপণ]
তেজপাতার চারা এখন বিভিন্ন নার্সারিতে পাওয়া যায়। পাশাপাশি জলপাইগুড়ির মোহিত নগর হর্টিকালচার রিসার্চ সেন্টারেও পাওয়া যায়। সরকারিভাবে এক একটি চারার মূল্য ধার্য করা আছে ২০ টাকা। বর্ষার এই মরশুমে জমি তৈরি করে চারা বুনে দিলেই হবে। সামান্য নজরদারি ও সেই সঙ্গে জৈব ও রাসায়নিক সার দিলেই বেড়ে উঠবে গাছ। ছড়াবে পাতা। খুলে যাবে কৃষকের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার দরজা।