রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: লক্ষ লক্ষ সাদা মাছির হামলায় একের পর এক বিশালাকার নারকেল গাছ কুপোকাৎ। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় একদিকে যখন তৎপর হয়েছে কৃষি দপ্তর তখন অন্যদিকে নতুন করে নারকেলের চারা রোপণে উদ্যোগী হল জেলাপ্রশাসন। সিএডিসি-র উদ্যোগে পূর্ব মেদিনীপুরের ইড়িঞ্চি ও নিমতৌড়ির কেন্দ্রীয় নার্সারিতে সযত্নে প্রায় লক্ষাধিক নারকেল চারা বেড়ে উঠছে। জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা (শষ্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, “বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে এই মড়কে সবরকমের প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
[ আরও পড়ুন: উৎপাদন বাড়াতে বিকল্প ধান চাষেই জোর কৃষি দপ্তরের]
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতি বছরের মতো বনমহোৎসব সপ্তাহ উপলক্ষে অন্যান্য চিরহরিৎ বৃক্ষের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে নারকেল-সহ পেয়ারা, পেঁপে, কলা, লেবুর মতো ফলের চারা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কৃষকরা যাতে অতিরিক্ত মাত্রায় নারকেলের চারা রোপণে উৎসাহিত হন তার জন্য বিনামূল্যে লক্ষাধিক নারকেল চারা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য জেলাজুড়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিলারা যাতে আগামী দিনে স্বনির্ভরতার রাস্তা দেখতে পান তার জন্য এমজিএনআরইজিএস প্রকল্পে ১০০দিনের কাজে মহিলাদের নিযুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ২০টি স্বনির্ভর দল অর্থাৎ প্রায় দু’শো পরিবার সরাসরি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তমলুক সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের প্রকল্প আধিকারিক উত্তমকুমার লাহা বলেন, “চলতি বছর জেলাজুড়ে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি নারকেলের চারা রোপণের জন্য চাষিদের বেশি করে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলার দু’টি কেন্দ্রীয় নার্সারিতে প্রায় এক লক্ষ নারাকেল চারা উৎপাদিত হয়েছে। চলতি মাসে এই চারা বিতরণ করা হবে।”
[ আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ক্ষতি ঠেকাতে ভরসা ‘সুধা’ পদ্ধতি]
প্রসঙ্গত, অতি দ্রুত বংশবৃদ্ধি হওয়ায় রুবোজ স্পাইরালিং হোয়াইট ফ্লাই বা সাদামাছি শেষ করে দিচ্ছে জেলার নারকেল গাছগুলিকে। সেই কারণেই আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের কৃষকদের। শুধু কি নারকেল, এই মাছির দাপট থেকে পান, পাম, সুপুরি, তাল, কলা, পেয়ারা, সবেদা, কাঠালেরও রক্ষে নেই। মাছিগুলি সপরিবারে শোষণ করে ফেলছে আস্ত একখানা নারকেল গাছের পাতা ও নরম সবুজ অংশের রস। সেইসঙ্গে এই মাছি থেকে যে হানিডিউ নির্গত হয় সারা গাছ জুড়ে তা একপ্রকার ক্ষতিকারক ছত্রাকে প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে। ফলে কালো বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে গাছের পাতা। অর্থনৈতিক দিক থেকে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় এখন দিশাহারা। এই রোগপোকা ঠেকাতে তেমন কোনও প্রতিষেধকও নেই। তাই কঠিন পরিস্থিতিতে নতুন করে নারকেলের চারা রোপণের বিষয়ে জোর দিতে চলেছেন প্রশাসনিক কর্তারা।