ধীমান রায়, কাটোয়া: ‘লালস্বর্ণ’র সাম্রাজ্যে ভুঁইফোড়ের মতো মাথা তুলে দাড়িয়েছে ‘মিনিকিট’। আর তার জেরে কার্যত প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন কৃষকরা। ঘন সবুজ আমন ধানের খেত। ধানগাছ এখন গর্ভাবস্থায়। মাসখানেকের মধ্যেই কৃষকরা ধান কাটার কাজ শুরু করবেন। এরই মধ্যে বিপত্তি। কৃষকরা মাঠে গিয়ে দেখতে পাচ্ছেন আমন ধানের খেতজুড়ে ‘অবাঞ্ছিতভাবে’ যত্রতত্র দাঁড়িয়ে রয়েছে গোছাগোছা আধপাকা ধানগাছগুলি।
কিন্তু কিভাবে এল এই অসময়ের ধান? কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিগত বোরোচাষে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই হল এর মূল কারণ। গত বোরো মরসুমে ধান তোলার মুখে যে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছিল তার জেরে জমির অধিকাংশ ধান জমিতেই ঝড়ে যায়। সেইসব ঝরে পড়া ধানগুলি থেকেই আমন চাষের সময় গাছ জন্মেছে। আর এখন মিশে রয়েছে আমন ধানের জমিতে। না চাইতেই অসময়ের এই পাকা ধান দেখে কিন্তু আদৌ খুশি নন কৃষকরা। কারণ ‘লালস্বর্ণ’ ধানের সঙ্গে ‘মিনিকিট’ ধান মিশে থাকলে কৃষকরা একাধিক সমস্যার মধ্যে পড়বেন।
[আরও পড়ুন: আয় বাড়াতে অল্প জমিতেই করুন মেথি চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি]
কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, শস্য ভাণ্ডার পূর্ব বর্ধমান জেলায় আমন চাষের অধিকাংশ জমিতেই হয় ‘লালস্বর্ণ’ প্রজাতির ধানের চাষ। আর বোরো চাষের সময় কৃষকরা ‘মিনিকিট’ বা ‘এম টি ইউ ১০/১০’ প্রজাতির ধানের চাষ করে থাকেন। বোরো চাষে ধান রোয়ানো থেকে কাটার যোগ্য সময় প্রায় ১২০ দিন। সেখানে আমন ধানের ক্ষেত্রে লাগে ১৪০ দিন সময়। কৃষকদের দুশ্চিন্তার মূল কারণ এই ‘মিনিকিট’ বা ‘এম টি ইউ ১০/১০’ প্রজাতি যদি ‘লালস্বর্ণ’ ধানের সঙ্গে মিশে যায় তাহলে তাদের একাধিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। প্রথমত, ‘লালস্বর্ণ’ ধানের সঙ্গে ‘মিনিকিট’ মিশে থাকলে সেই ধান বিক্রি করতে সমস্যা হবে। ধান ব্যবসায়ী বা ক্রেতারা লালচে ‘লালস্বর্ণ’ ধানের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সাদা রঙের ‘মিনিকিট’ মিশে থাকলে সহজেই চিনে নিতে পারবেন। দ্বিতায়ত, যদি দুই প্রজাতি মিশে থাকে তবে আমনের ‘লালস্বর্ণ’ ধান থেকে পরবর্তী চাষের জন্য বীজ সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব নয়।
তাহলে প্রতিকারের উপায়? ভাতার ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা বিপ্লব প্রতিহার বলেন,”লালস্বর্ণ ধানের জমিতে গজিয়ে ওঠা পেকে যাওয়া ‘মিনিকিট’ ধানের শিষগুলি কেটে তুলে নিতে হবে। তাতে কৃষকরা কিছুটা ধানও পেয়ে যাবেন।” তবে কৃষকরা বলছেন অন্য কথা। তাঁদের মতে, আমন ধানের জমি থেকে বেছে ‘মিনিকিট’ ধানের শিষ কাটতে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে, সেই খরচ দেওয়ার ক্ষমতা বেশীরভাগ কৃষকের নেই। এই অবাঞ্ছিত ধানের জন্য আমনের ফলন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
ছবি: জয়ন্ত দাস