ধীমান রায়, কাটোয়া: মৌমাছি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেলে চার বছরের মধ্যে মুছে যাবে মানবসভ্যতা। একথা বলেছিলেন খোদ আলবার্ট আইনস্টাইন। অধিকাংশ ফসলের ফলন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল মৌমাছির সংখ্যা হ্রাস। ফলন বৃদ্ধিতে মৌমাছির যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমন মধুর অনেক উপকারিতাও রয়েছে। তাই মধুর চাহিদা সর্বকালের, সর্বজনবিদিত। মৌমাছি পালন খুব একটা কঠিন কিছু নয়। আর মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অনায়াসে বিকল্প আয়ের দিশা দেখতে পারেন কৃষকরা। বর্তমানে কৃষি দপ্ততর থেকে মৌমাছি পালনে উৎসাহী কৃষকদের বিশেষ সহায়তা করা হচ্ছে। কৃষি দপ্তরের আত্মা প্রকল্পে কাটোয়া-১ নম্বর ব্লকের খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের একাইহাট এলাকায় সরকারি প্রকল্পে মৌমাছি পালন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মধু উৎপাদনও শুরু হয়েছে। কৃষি দপ্তর থেকে সরাসরি এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম। এই সুযোগ অনায়াসে নিতে পারেন উৎসাহী কৃষকরা।
[কৃষিতে রাজ্যে নয়া নজির, মালদহে মাল্টা ফলালেন এক অধ্যাপক]
মধু উৎপাদনের জন্য প্রায় ৬-৭ রকমের মৌমাছি মূলত পালন করা হয়। তার মধ্যে কাটোয়ার একাইহাটে ‘এটিস মেলিফেরা’ নামে ইটালিয়ান প্রজাতির মৌমাছি পালন করা হচ্ছে। এই প্রজাতির মৌমাছি দেশীয় প্রজাতির মৌমাছির তুলনায় অনেক বেশি মধু উৎপাদন করে।
মৌমাছি পালনের সরঞ্জাম: মৌ-বাক্স, ধোঁয়াদানি, বটম বোর্ড, ব্রড চেম্বার, সুপার চেম্বার, টপ ব্রুড চেম্বার, ক্রাউন বোর্ড, মধু নিষ্কাষন যন্ত্র, রানি মৌমাছি অবরোধ জাল, ডামি বোর্ড, টুপি ও বোরখা, পুরুষ মৌমাছি ধরা ফাঁদ, হাইভ স্ট্যান্ড।
উদ্দেশ্য: উৎকৃষ্ট ধরনের পরাগ সংযোগের দ্বারা কৃষিজাত সম্পদ বৃদ্ধি করা। উপযুক্ত পরাগ সংযোগের ফলে বীজ সুপুষ্ট ও ফল বা শষ্যের আকৃতি বৃদ্ধি পায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১০-১৫ গুণ পর্যন্তও বৃদ্ধি পায়। মৌমাছি পালন বা সংখ্যাবৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে সমৃদ্ধি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। খাঁটি মধু অমৃতসমান উপকারী বলে বিবেচিত।
[মালচিং পদ্ধতিতে ধান চাষ, ব্যাপক অর্থলাভ বালুরঘাটের তিন যুবকের]
যে জায়গায় বাক্সে মৌমাছি পালন করা হয় তার পাশাপাশি প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মধু সংগ্রহ করবে মৌমাছিগুলি। পাশাপাশি জমিগুলির ফসলের ফুল, বিভিন্ন গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার মৌমাছিগুলি ফিরে আসবে কাঠের বাক্সে। অন্য কোথাও উড়ে পালানোর সম্ভাবনা নেই। অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মৌমাছিগুলির মধু উৎপাদনের সময়। এই মরশুমের মধ্যে ১৫ বার পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা যায়। এক একটি কাঠের বাক্স থেকে গড়ে ৭০ কেজি করে মধু পাওয়া যাবে। মৌমাছি পালনের শুরুর দিকে কৃষি দপ্তর থেকে বাক্স এবং মৌমাছি দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এরপর থেকে কৃষককে মৌমাছি কিনে চাষ করতে হবে। এক একটি কাঠের বাক্সে প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত চাষ করা যায়। তবে বর্ষাকালে কাঠের বাক্সগুলিকে খোলা জায়গা থেকে তুলে ছাউনি দেওয়া জায়গায় রাখতে হবে। যাতে বৃষ্টিতে ক্ষতি না হয়। বর্ষায় মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে পারে না। তাই সেসময় মৌমাছিগুলিকে রক্ষা করার জন্য সময়ে সময়ে চিনির রস বাক্সে দিতে হবে। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মধু উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি জমিতে ফসলের উৎপাদনও বহুগুণ বাড়িতে দেয়। তাই মৌমাছি পালে দু’দিক থেকেই লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।