Advertisement
Advertisement

Breaking News

Orange

জৌলুস হারাচ্ছে দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর বাগান, কীভাবে করবেন পরিচর্যা?

জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।

How to take care Orange of Darjeeling | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:March 16, 2022 4:30 pm
  • Updated:March 16, 2022 4:30 pm

বাংলার পার্বত‌্য ও সংলগ্ন তরাই অঞ্চলে প্রায় তিন হাজার একর জমিতে কমলালেবুর চাষ হত। এখন তা কমে এক হাজার একরে গিয়ে ঠেকেছে। দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের মতো পার্বত‌্য অঞ্চলে মূলত বাড়ি লাগোয়া পাহাড়ি ঢালে এই লেবুর চাষ হয়। এ ছাড়া তরাই অঞ্চলেও এই লেবুর চাষ হয়। সামগ্রিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে কমলালেবুর উৎপাদনশীলতা অত‌্যন্ত কম। উৎপাদিত লেবুর গুণমানও ধীরে ধীরে অত‌্যন্ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই কমলালেবু চাষে বহুবিধ সমস‌্যা রয়েছে। লিখছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. রাকেশ পাশি

পার্বত‌্য অঞ্চলে, খাড়া পাহাড়ের ঢালগুলিতে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সময় পাথুরে মাটির উপরিভাগ ধুয়ে যায়। ফলে সেই জমির উৎপাদনশীলতা কমে যায়। বাগানগুলিতে সার প্রায় দেওয়াই হয় না। যেটুকু দেওয়া হয় তা হল কাঁচা গোবর। লেবুগাছগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অত‌্যন্ত বয়স্ক, রুগ্ণ এবং অনুৎপাদক। পাঁচ-ছয় হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায়, পাহাড়ি ঢালের উপর গাছগুলির ডালপালা প্রায় ঝাঁটার কাঠির চেহারা নিয়েছে। এই উচ্চতায় নতুন লেবু বাগিচা না করাই ভাল। দু’-তিন হাজার ফুট উচ্চতার বাগিচাগুলি অপেক্ষাকৃত ভাল চেহারার। এ ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের রোগ পোকার সমস‌্যা। এভাবে চলতে থাকলে দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর চাষ বন্ধই হয়ে যাবে।

Advertisement

Advertisement

 

[আরও পড়ুন: উপনির্বাচনের জন্য বদলাতে পারে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিন, বিধানসভায় ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রীর]

কী করা প্রয়োজন?

  • যদি নতুন বাগিচা করতে চান, ভাল চারা বাছাই জরুরি। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ নিয়ে কমিউনিটি নার্সারি তৈরি করতে হবে। বাগিচা যে জমিতে করতে চান সে জমিতে অন্তত আড়াই-তিন ফুট গভীর মাটি থাকা চাই। ১৭-১৮ ফুট অন্তর গাছ লাগানোর জন‌্য গর্ত করুন। গোবর সার, নিম খোল, রক ফসফেট বা ডলোমাইট মাটির সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন। এই মাটিতে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি, সিউডোমোনাস ফ্লোরেসেন্স এবং পিসিলোমাইসিস লিলাসিনাস সুপারিশ মতো প্রয়োগ করুন। মৃত্তিকা ঘটিত রোগ, কৃমি নিয়ন্ত্রণে তা সাহায‌্য করে।
  • পুরনো বাগিচায় সার প্রয়োগের জন‌্য ঘাস-পাতা-গোবর পচিয়ে সার তৈরি করুন। মার্চ মাসের দিকে এই সার ২৫-৩০ কেজি করে গাছের গোড়ায় দিন। তিন বছর অন্তর গাছপ্রতি ২-৩ কেজি ডলোমাইট প্রয়োগ করুন।
  • ফল ভাঙার পর ভাল করে ডালপালা ছাঁটতে হবে। ছাঁটা ডালপালায় ব্লাইটক্স বা কপার অক্সিক্লোরাইডের পেস্ট তৈরি করে লাগান।

  • মার্চ মাসে কমলালেবুতে ফুল আসা শুরু হয়। গাছে এসময় কচিপাতাও গজায়। এপ্রিলে ফল ধরা শুরু হয়। শুরু হয় পোকামাকড় (জাত পোকা, লিফ মাইনার, সাইলিভ)—এর উপদ্রব। এই সময় গাছের গোড়া থেকে ২-৩ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত কপার অক্সিক্লোরাইড, অল্প লাল মাটি, নিমতেল মিশিয়ে অল্প জল দিয়ে লেই তৈরি করে কাণ্ডে মাখিয়ে দিতে হবে। আক্রান্ত ডালপালা-পাতা সম্ভব মতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। এই সময় থেকে মাসে দু’বার ২% জিঙ্ক সালফেট গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে।
  • পাহাড়ে মে মাসে বৃষ্টি শুরু হয়। কাণ্ড ছিত্রকারী পোকার উপদ্রবও শুরু হয়। কাণ্ডের ছিদ্রগুলি দেখে নিয়ে কেরোসিন ভেজানো তুলো গুঁজে দিন। সিরিঞ্জ দিয়ে ছিদ্রগুলিতে কোনও কীটনাশক চুবিয়ে দিতে হবে কীড়াগুলি ধ্বংস করার জন‌্য। সারা বর্ষাকাল জুড়েই এই কাজ করে যেতে হবে।

 

[আরও পড়ুন: রাজ্য সম্মেলনে বঙ্গ সিপিএমকে তুলোধোনা ইয়েচুরির, প্রশ্ন উঠল নেতৃত্বের ‘দাদাগিরি’ নিয়েও]

  • ফলের মাছি কমলালেবু বাগানে খুব সমস‌্যা সৃষ্টি করে। জুন-জুলাই মাসে ফলের খোসার নিচে তারা ডিম পাড়ে। এই সময় ফল খুব ছোট থাকে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে প্রায় পরিপক্ব ফলের মধ্যে কীড়াগুলি বড় হয়ে যায় এবং আমাদের নজরে পড়ে। আক্রান্ত ফলগুলি পচতে শুরু করে এবং মাটিতে ঝরে পড়ে। এসময় কীড়াগুলি বেরিয়ে এসে মাটিতে পুতলি দশায় চলে যায়। অক্টোবর—নভেম্বর মাসে গাছের নীচটা পুরো প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে ঢেকে দিন। ঝরে পড়া ফল সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিয়ে বালতির জলে ডুবিয়ে রাখুন। জলে খানিকটা কেরোসিন ঢেলে দেবেন। কীড়াগুলি মারা গেলে মাটিতে সম্ভব মতো গভীর গর্ত করে পুঁতে দিতে হবে। 

  • ফলের গায়ে এক ধরনের সবুজ রঙের শোষক পোকার (স্টিংক বাগ) আক্রমণ হয়। বৃষ্টি ধরলে সময় সুযোগ মতো নিম তেল স্প্রে করতে হবে।
  • শুখা সময়ে সম্ভব মতো ফোঁটা সেচের ব‌্যবস্থা করতে হবে।পাহাড়ি বস্তিগুলি থেকে কমলালেবু বাজারজাত করা খরচ সাপেক্ষ। নতুন বাগিচা তৈরি এবং পুরনো বাগিচার ভাল পরিচর্যার জন‌্য সার, ডলোমাইট ইত‌্যাদি প্রয়োজন। প্রয়োজনমতো কৃষিঋণের ব‌্যবস্থাও করতে হবে। একাজে সমবায়ী উদ্যোগ সংগঠিত করা দরকার। অন‌্যথায় ভাল ফলের ভাল দাম ফল-চাষিরা পাবেন না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ